একি মেসি! আপনি কাঁদছেন?

এই ভ্রমাণ্ডে তার আর কিছুই জেতার বাকি নেই। দলগত হোক কিংবা ব্যক্তিগত সবকিছুই জিতেছেন লিওনেল মেসি। তবুও ক্যারিয়ারের শেষ লগ্নে এসেও সাইডলাইনে বসে কাঁদলেন সর্বকালের অন্যতম সেরা খেলোয়াড়। তিনি যখন মাঠ ছেড়েছেন তখনও যে আকাশী নীল জার্সিধারীরা কোন গোলের দেখা পায়নি। দলের জন্য কিছু করতে না পারার তীব্র হতাশায় সর্বজয়ী মেসির চোখ বেয়েও জল ছুঁয়েছে মাটি।

ঘটনার সূত্রপাত অবশ্য প্রথমার্ধেই। কলম্বিয়ার বিপক্ষে খেলা যেকোন দলের খেলোয়াড়দের জন্য বিশাল বড় এক চ্যালেঞ্জ। কলম্বিয়া বরাবরই শারীরিক লড়াইটা করে থাকে প্রতিপক্ষের সাথে। কোপা আমেরিকার ফাইনালে তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। ম্যাচের ৩৬ মিনিটের মাথায় কলম্বিয়ান ডিফান্ডারের একটা স্লাইডিং ট্যাকেল আঘাত করে মেসির ডান পায়ের গোড়ালিতে।

এরপর বেশকিছু ব্যথায় কাতরেছেন মেসি। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে মাঠেও ফিরেছেন। দলকে যে আরেকটা শিরোপা জেতাতেই হবে। অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়ার বিদায়কে রাঙিয়ে দিতে হবে নিজেদের নীল রঙে। সম্ভবত গোড়ালিতে মোচড় এসেছিল তার। তবুও খেলা চালিয়ে গেলেন মেসি।

দ্বিতীয়ার্ধেও নামলেন মাঠে। জয় ব্যতীত দ্বিতীয় কিছু ভাববার তো কোন সুযোগ নেই। মেসি অস্বস্তি নিয়ে খেলা চালিয়ে গেলেন। তবে তার অস্বস্তির প্রভাবটা পারফরমেন্সে পড়েছিল বটে। তবুও হাল ছাড়লেন না মেসি। তিনি শেষ অবধি চেষ্টা করে যেতে চাইলেন। কিন্তু বেরসিক গোড়ালি তা আর মানতেই চাইল না।

বেকায়দায় আরেকবার পা পড়ে তার। মুহূর্তেই লুটিয়ে পড়েন। তখনই আন্দাজ করে ফেলেছিলেন আর খেলা সম্ভব না। তার জায়গায় বদলি হিসেবে মাঠে নামেন নিকোলাস গোঞ্জালেস। ম্যাচের বয়স তখন ৬৬ মিনিট। ডাগআউটের দিকে ধীর পায়ে এগিয়ে যাওয়া মেসি ডান পায়ের বুট জোড়া মাটিতে আছাড় মারলেন। হতাশ বদনে বসে পড়লেন বেঞ্চে।

ফুটবলের প্রতি, দেশের প্রতি তার তাড়না ঠিক কতটুকু তা বোঝা যায় তার চোখের জলে। ক্যামেরায় আড়াল করতে চাইলেন নিজের অশ্রু। কিন্তু তবুও নাছোড়বান্দা ক্যামেরা বারেবারে খুঁজে নিয়েছে তাকে। গোটা হার্ডরক স্টেডিয়াম তখন মেসি মেসি কোরাসে সরব হয়ে ওঠে। তবুও মেসির কান্না যেন থামবার নয়।

পায়ের সাথে আইসব্যাগ বেঁধে অঝোড়ে কাঁদলেন মেসি। এখানেই তো পার্থক্য, এখানেই তো সেরা হওয়ার সেই দূরত্ব- যা তাকে আলাদা করে অন্য সবার থেকে। সবকিছু জিতেও তার অর্জনের ক্ষুধা মেটেনি। দলের জন্য, সতীর্থের জন্য জিততে চেয়েছেন আরও একটি টুর্নামেন্ট। তিন তারকা খচিত জার্সিতে উঁচিয়ে ধরতে চেয়েছেন আরও একটি শিরোপা। তাতে তো দোষের কিছু নেই!

ফুটবলের প্রতি, ফুটবল মাঠের প্রতি তার এই তীব্র ভালবাসাই মেসিকে বানিয়েছেন বিশ্বের সেরা। শেষ অবধি মাঠে থাকতে না পাড়ায় পোড়ে যার মন, সেই তো হবেন সর্বজয়ী। সেটাই যে বিধাতার লিখন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link