দেশের মাটিতে বল হাতে মেহেদী হাসান মিরাজ দাপট দেখালেও দেশের বাইরে প্রায় সময়ই বিবর্ণ দেখা যায় তাকে। সাদা পোষাকে ঘরের মাঠে মিরাজের পারফরম্যান্সের সাথে দেশের বাইরের পারফরম্যান্সের আকাশ পাতাল পার্থক্য। এই স্পিনার জানিয়েছেন দেশের বাইরে স্পিনাররা রান আটকানোর জন্য বোলিং করে দেখেই তেমন উইকেট পান না।
দেশের বাইরে ২০ ইনিংসে ৫৩৪.৪ ওভার বল করা মিরাজের ইকোনমি ৩.৭৭। আর দেশের মাটিতে ২৪ ইনিংসে ৫৫৭.৪ ওভার বল করা মিরাজের ইকোনমি ২.৮১। ঘরের মাঠে ১৩ টেস্টে ৭১ উইকেট শিকার করা এই স্পিনার দেশের বাইরে ১৩ টেস্ট খেলে পেয়েছেন মাত্র ৩৩ উইকেট।
দেশের বাইরের পারফরম্যান্স নিয়ে ক্রিকেট বিষয়ক গণমাধ্যম ক্রিকবাজকে মিরাজ জানিয়েছেন দেশের বাইরে স্পিনাররা উইকেট নেওয়ার জন্য বল করলেই বেশি রান দিয়ে ফেলে, যেটা চাপ হয়ে যায় দলের জন্য। তাই তারা চেষ্টা করেন রান আটকিয়ে সুযোগ তৈরি করার।
তিনি বলেন, ‘আমরা দেশের বাইরের উইকেটে রান আটকানোর জন্য বোলিং করি। কারণ আমরা যখন সেখানে উইকেট নেওয়ার চেষ্টা করি তখন বেশি রান দিয়ে ফেলি। আর বেশি রান দেওয়াটা আমাদের চাপে ফেলে দেয়। আপনি টেস্ট ক্রিকেটে কখনো জোর করে উইকেট নিতে পারবেন না। আপনি দশটি সুযোগ তৈরি করলে দশটি উইকেট পাবেন না। আপনার সুযোগ তৈরি করা দরকার যাতে আপনি সর্বোচ্চ উইকেট নিতে পারেন।’
তিনি আরো বলেন, ‘এটাই আমি চেষ্টা করি। আমি রান আটকিয়ে সুযোগ তৈরির চেষ্টা করি। আমি যদি একটি নির্দিষ্ট ইনিংসে প্রায় ২০-৩০ ওভার বল করি প্রায় ২০ টির মতো সুযোগ তৈরি করতে পারি। তবে আমি ২০ টি উইকেট পাবো এটি নিশ্চিত না। ভাগ্য যদি আমার পক্ষে থাকে তবে আমি সেই সুযোগ গুলো থেকে বেশ কয়েকটি উইকেট পেতে পারি।’
মিরাজ জানিয়েছেন ঘরের মাঠে টেস্টের প্রথম দিন থেকে স্পিনাররা উইকেট থেকে সুবিধা পেলেও দেশের বাইরে উইকেট থেকে সুবিধা পেতে স্পিনারদের অপেক্ষা করতে হয় তৃতীয় দিন পর্যন্ত। এই স্পিনার মনে করেন এই জন্যই দেশের বাইরে প্রথম দুই দিন খুবই গুরুত্বপূর্ণ তাদের কাছে।
মিরাজ বলেন, ‘এটি সত্য যে বিদেশে আমার ভাল করা দরকার। ঘরের মাঠে স্পিনাররা প্রথম দিন থেকে সুবিধা পেলেও দেশের বাইরে তৃতীয় দিন থেকে আমরা সুবিধা পাই I আমি মনে করি প্রথম দুই দিন আমার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। রান আটকানো দলকে অনেক সাহায্য করেছিল, যা টেস্ট ক্রিকেটে খুব গুরুত্বপূর্ণ, যদিও আমি খুব বেশি উইকেট নিতে পারিনি।’
বয়স ভিত্তিক পর্যায়ে মেহেদী হাসান মিরাজের পরিচয় ছিলো অলরাউন্ডার হিসাবে। অনূর্ধ্ব -১৯ বিশ্বকাপেও তিনি খেলেছেন স্পেশালিস্ট ব্যাটসম্যান হিসাবে। বিশ্বকাপে ব্যাট হাতে সফলও ছিলেন মিরাজ। জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার আগে ও পরে তাকে অলরাউন্ডার হিসাবেই গণ্য করতো সবাই। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে মিলিয়ে যেতে থাকে তাঁর অলরাউন্ডার পরিচয়।
মিরাজ জাতীয় দলে আসার পর পুরোপুরি পাল্টে যান। মিরাজ পাল্টে যান; নাকি তাঁকে পাল্টানো হয়েছে এটা নিয়ে অবশ্য বিতর্ক থাকতে পারে। কিন্তু সব তর্ক বিতর্ক ছাপিয়ে মিরাজ হয়ে ওঠেন এমন একজন ক্রিকেটার, যে বল হাতে দুর্দান্ত ও সহজাত প্রতিভা এবং দলের প্রয়োজন ব্যাটিং করতে পারেন টুকটাক।
কিন্তু দেশের মাটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করে মিরাজ অলরাউন্ডার পরিচয় ফিরিয়ে এনেছে আবারো। মিরাজ জানিয়েছেন সত্যিকারের অলরাউন্ডার হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হতে ব্যাটিং নিয়ে কঠোর পরিশ্রম করছেন তিনি; সাকিব আল হাসানের এক কথাতে পেয়েছেন অনুপ্রেরণাও।
তিনি বলেন, ‘সাকিব ভাই একবার বলেছিলেন তিনি তার ব্যাটিং নিয়ে সত্যিই কঠোর পরিশ্রম করেছেন এবং এটি আমাকে অনেক প্রভাবিত করেছে। টেস্ট ক্রিকেটে আমি সেঞ্চুরি করতে পেরেছি এটা আমার জন্য দুর্দান্ত অর্জন ছিল। প্রথম দিকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আমি ব্যাটিংয়ে ভালো করতে পারিনি। আমি আমার ব্যাটিংয়ে আরো উন্নত করার চেষ্টা করেছি এবং দিনের পর দিন আমি আরো ভাল করেছি।’
তিনি আরো বলেন, ‘এটা শুধু আমার জন্য নয়। দলের জন্যেও দুর্দান্ত সুবিধা হয়েছে, আমি যেখানে ব্যাট করি সেখানে ৩৩, ৪০, ১০০ রান করতে পারি। আমি মনে করি আমি যেখানে ব্যাট করি ব্যাটসম্যান হিসাবে আমার ভূমিকা সেখানে খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমি দিনের পর দিন নিজের উন্নতির চেষ্টা করি। আমি ব্যাটিং নিয়ে সবচেয়ে বেশি চেষ্টা করেছি কারণ ব্যাটিং খুব অনিশ্চিত, আপনি যে কোন নির্দিষ্ট বল মিস করলে আউট হয়ে যেতে পারেন। আমি যদি সত্যিকারের অলরাউন্ডার হতে পারি তবে সেটা দলকে এবং আমাকে সহায্য করবে।’