ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগের সপ্তম রাউন্ডে এসে মুখোমুখি হয়েছিল মোহামেডান ও আবাহনী। লড়াইটা ছিল ঐতিহ্যের, লড়াইটা ছিল মর্যাদার। দুই দলের নেতৃত্বে জাতীয় দলের দুই কান্ডারি সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিম থাকায় বাড়তি একটা উত্তাপ তো ছিলই। মাঠের খেলায়ও দেখা যায় সেই তেজ; জমে যায় দুই দলের লড়াই।
তবে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর দ্বৈরথে বাঁধা হয়ে আসে বৃষ্টি ও সব কিছু ছাপিয়ে আলোচনায় আসেন সাকিব। আম্পায়ারের সিদ্বান্তে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে লাথি মেরে স্টাম্প ভেঙে ফেলেন সময়ের অন্যতম সেরা এই অলরাউন্ডার। এমনকি বৃষ্টি আসার আগেই খেলা বন্ধ করায় স্টাম্প তুলে আছাড় মারেন তিনি। সাকিব বিবাদে জড়ান আবাহনীর কোচ খালেদ মাহমুদ সুজনের সাথেও।
টানা তিন ম্যাচে হারের পর বিতর্কিত এই ম্যাচে ৩১ রানের জয় পেয়েছে সাকিবের দল। জয়ে ফেরার দিনে ব্যাট হাতে ধারাবাহিক ব্যর্থতার পর আজ রান পেয়েছেন সাকিবও। ২৭ বলে ৩৭ রান করেন মোহামেডানের অধিনায়ক। এই জয়ের ফলে পয়েন্ট টেবিলের চতুর্থ স্থানে উঠে এসেছে মোহামেডান।
এছাড়া সপ্তম রাউন্ডের বাকি দুই ম্যাচে জয় পেয়েছে গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স ও খেলাঘর সমাজ কল্যাণ সমিতি। তবে দল জয় পেলেও আজও ব্যাট হাতে ব্যর্থ ছিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। সপ্তম রাউন্ড শেষে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে রয়েছে প্রাইম দোলেশ্বর স্পোর্টিং ক্লাব।
মোহামেডানের দেওয়া ১৪৬ রান তাড়া করতে নেমে শুভাগত হোমের বোলিং তান্ডবে শুরুতেই ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে আবাহনী। একে একে ফিরে যান নাঈম শেখ, আফিফ হোসেন ও একেএস স্বাধীন। আফিফ দুই রান করলেও রানের খাতায় খুলতে পারেননি বাকি দুই জন।
৯ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর দলের হাল ধরেন মুশফিকুর রহিম ও নাজমুল হোসেন শান্ত। চতুর্থ উইকেট জুটিতে দুজন ২২ রান যোগ করার পরই আসে বৃষ্টি। এরপর যখন খেলা শুরু হয় তখন ৯ ওভারে ৭৬ রানের লক্ষ্য দেওয়া হয় আবাহনীকে। অর্থ্যাৎ শেষ ২২ বলে করতে হতো ৪৪ রান। কিন্তু আবাহনী সংগ্রহ করতে পারে মাত্র ১৩ রান।
মুশফিক ১৮ রান করে অপরাজিত থাকেন। এছাড়া শান্ত করেন ১৩ রান। মোহামেডানের পক্ষে তিনটি উইকেট শিকার করেন শুভাগত। এছাড়া দুটি উইকেট পেয়েছেন তাসকিন আহমেদ ও একটি উইকেট পেয়েছেন আবু জায়েদ রাহী।
এর আগে টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নামা মোহামেডানকে মোটামুটি ভালো শুরু এনে দেন দুই ওপেনার পারভেজ হোসেন ইমন ও আব্দুল মজিদ। উদ্বোধনী জুটিতে দুজন সংগ্রহ করেন ৩৭ রান। তবে ইনিংস বড় করতে পারেননি দুই ওপেনারের কেউই। তানজিম হাসানের প্রথম শিকার হয়ে ২৬ রান করে ইমন ফিরে গেলে ভাঙে এই জুটি।
এরপর দৃশ্যপটে আসেন একেএস স্বাধীন। এই পেসারের বোলিং তান্ডবে একে একে ফিরে যান আব্দুল মজিদ, শামসুর রহমান শুভ ও ইরফান শুকুর। ১৬ রান করেন মজিদ, শামসুরের ব্যাট থেকে আসে ১ রান এবং শুকুর করেন ১৪ রান। ৬৮ রানে ৪ উইকেট হারানোর পর দলের হাল ধরেন সাকিব আল হাসান ও মাহমুদুল হাসান।
পঞ্চম উইকেটে ৪৬ রানের জুটি গড়ে প্রাথমিক বিপর্যয় সামাল দেন দুই জন। ২৭ বলে ৩৭ রান করা সাকিবকে ফিরিয়ে দিয়ে এই জুটি ভাঙেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। এরপর শুভাগত হোম ১ রান করে ফিরে গেলেও ইনিংসের শেষ পর্যন্ত উইকেটে থেকে দলকে লড়াইয়ের পুঁজি এনে দেন মাহমুদুল হাসান।
নির্ধারিত ২০ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ১৪৫ রান সংগ্রহ করে মোহামেডান। ২২ বলে ৩০ রান করে অপরাজিত থাকেন মাহমুদুল। এছাড়া ১২ রান করেন আবু হায়দার রনি। আবাহনীর পক্ষে তিনটি উইকেট শিকার করেছেন স্বাধীন ও দুটি উইকেট পেয়েছেন তানজিম হাসান সাকিব।
বিকেএসপিতে দিনের আরেক ম্যাচে বৃষ্টি আইনে ব্রাদার্স ইউনিয়নকে ১৫ রানে হারিয়েছে গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স। ১৭৪ রানের বড় লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে নাসুম আহমেদের ঘূণিতে ৮২ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় ব্রাদার্স। এরপর ১১.২ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ৮৫ রান করার পর বৃষ্টি আসে। বৃষ্টি না থামায় বৃষ্টি আইনে ৮৯ রানে হেরে যায় ব্রাদার্স।
দলের পক্ষে ১৬ বলে সর্বোচ্চ ২৬ রান করেন সুজন হাওলাদার। এছাড়া নুরুজ্জামান ২২ রান ও মাইশুকুর রহমান করেন ১৮ রান। গাজী গ্রুপের পক্ষে তিনটি উইকেট শিকার করেন নাসুম আহমেদ ও একটি করে উইকেট পেয়েছেন মেহেদী হাসান ও মহিউদ্দিন তারেক।
এর আগে টসে হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নামা গাজী গ্রুপকে উড়ন্ত সূচনা এনে দেন মেহেদী হাসান ও সৌম্য সরকার। উদ্বোধনী জুটিতে দুই ওপেনার মাত্র ২৩ বলে সংগ্রহ করেন ৪৮ রান। আগের দুই ম্যাচে হাফ সেঞ্চুরি করা সৌম্য এই ম্যাচেও দারুণ শুরু পেয়েছিলেন। কিন্তু ইনিংস বড় করতে পারেননি এই ওপেনার।
আলাউদ্দিন বাবুর বলে ৯ বলে ১৫ রান করে সৌম্য ফিরে গেলে ভাঙে এই জুটি। সৌম্যকে ফিরিয়ে দেওয়ার পর আবার জোড়া আঘাত হানেন বাবু। ২১ বলে ৪৭ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে মেহেদী বিদায় নেওয়ার পর রানের খাতা খোলার আগেই আউট হয়ে যান মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ৬৩ রানে তিন উইকেট হারানোর পর দলের হাল ধরেন মুমিনুল হক ও ইয়াসির আলী রাব্বি।
মুমিনুল ২৭ বলে ২৫ রানের ধীর গতির ইনিংস খেলে আউট হওয়ার পর ৩৯ বলে ৪৭ রান করে ফিরে যান ইয়াসির। এরপর আরিফুল হকের ২১ বলে ৩৫ রানের ঝড়ো ইনিংসে ১৭৩ রানের বড় সংগ্রহ পায় গাজী গ্রুপ। ব্রাদার্সের পক্ষে চারটি উইকেটে শিকার করেছেন আলাউদ্দিন বাবু। এছাড়া একটি উইকেট পেয়েছেন রাহাতুল ফেরদৌস।
বিকেএসপিতে দিনের আরেক ম্যাচে বৃষ্টি আইনে পারটেক্স স্পোর্টিং ক্লাবকে ১৫ রানে হারিয়েছে খেলাঘর সমাজ কল্যাণ সমিতি। মাত্র ১০৭ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে খেলঘর ৭ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে ৫০ রান করার পর বৃষ্টি আসে। এরপর আর খেলা শুরু না হলে জয়ী ঘোষণা করা হয় খেলাঘরকে।
১৫ বলে ২৭ রান করেন ইমতিয়াজ হোসেন ও ১০ বলে ১২ রান করে অপরাজিত থাকেন মেহেদী হাসান মিরাজ। পারটেক্সের পক্ষে একটি করে উইকেট পেয়েছেন জয়নাল ইসলাম ও নিহাদ-উজ জামান।
এর আগে টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে মেহেদী হাসান মিরাজ এবং টিপু সুলতানের তোপের মুখে পড়ে পারটেক্স। দুই স্পিনারের জোড়া আঘাতে ৩৯ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে পারটেক্স। এরপর রাজিবুল ইসলাম এবং মেহরাব হোসেনের ব্যাটে ঘুঁড়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলেও ইফরান হোসেন বোলিং তান্ডবে বেশি দূর যেতে পারেনি পারটেক্স।
নির্ধারিত ২০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে মাত্র ১০৬ রান সংগ্রহ করে পারটেক্স। ২৬ বলে ২৮ রান করে অপরাজিত থাকেন রাজিবুল। আর ২২ বলে ১৬ রান করেন মেহরাব। খেলাঘরের পক্ষে ইফরান হোসেন তিনটি ও মেহেদী হাসান মিরাজ ও টিপু সুলতান দুটি করে উইকেট শিকার করেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব: ১৪৫/৬ (ওভার: ২০; মজিদ- ১৬, পারভেজ- ২৬, শুকুর- ১৪, সাকিব- ৩৭, মাহমুদুল- ৩০*,) (স্বাধীন- ৩-০-২৪-৩, তানজিম- ৪-০-১৭-২)
আবাহনী লিমিটেড: ৪৪/৬ (ওভার: ৯ ; শান্ত- ১৩, মুশফিক- ১৮*) (শুভাগত- ৩-০-১৭-৩, তাসকিন- ২-০-৫-২)
ফলাফল: মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব ৩১ রানে জয়ী (বৃষ্টি আইনে)।
গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স: ১৭৩/৩ (ওভার: ২০; সৌম্য- ১৫, মেহেদী- ৪৭, মুমিনুল- ২৫, রাব্বি- ৪৭, আরিফুল- ৩৫*) (বাবু- ৪-০-২৫-৪)
ব্রাদার্স ইউনিয়ন: ৮৫/৫ (ওভার: ১১.২; সুজন- ২৬, নুরুজ্জামান- ২২, মাইশুকুর- ২২) (নাসুম- ৩-০-১৬-৩)
ফলাফল: গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স ১৫ রানে জয়ী (বৃষ্টি আইনে)।
পারটেক্স স্পোর্টিং ক্লাব: ১০৬/৮ (ওভার: ২০; তাসামুল- ১৮, রাজিবুল- ২৮*, মেহরাব- ১৬) (ইফরান- ৪-০-২৩-৩, মেহেদী- ৪-১-১৫-২, টিপু- ৪-০-১৮-২)
খেলাঘর সমাজ কল্যাণ সমিতি: ৫০/২ (ওভার: ৭; ইমতিয়াজ- ২৭, মিরাজ- ১২*) (জয়নাল- ২-০-১০-১)
ফলাফল: খেলাঘর সমাজ কল্যাণ সমিতি ১৫ রানে জয়ী (বৃষ্টি আইনে)।