মহসিন খান, শেষ ওভারের নায়ক

আইপিএলের গত মৌসুমের সেরা আবিষ্কার ভাবা হয় তাঁকে। অথচ ইনজুরির কারণে কিনা নিজের সেরা সময়ে টানা এক বছর মাঠেই নামতে পারেননি তিনি। এবারের আইপিএলেও খেলার কথা ছিল না, কিন্তু টুর্নামেন্টের শেষদিকে মাঠে নেমেই নিজের আগমণের জানান দিলেন মহসিন খান। 

আইপিএলের মঞ্চে বহু কাঠখড় পুড়িয়েই জায়গা করে নিতে হয়েছে মহসিনকে। ২০১৮ মৌসুমে ঘরোয়া ক্রিকেটে দারুণ পারফর্ম করার সুবাদে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স দলে ভেড়ায় তাঁকে। কিন্তু জাসপ্রিত বুমরাহ, ট্রেন্ট বোল্টদের ভীড়ে একবারের জন্যেও একাদশে জায়গা পাননি।

মহসিন হাল ছাড়েননি। বরং তারকা সব বোলারদের কাছে থেকে শেখার চেষ্টা করেছেন। বোলিংয়ে যোগ করেছেন নতুন অস্ত্র। শুরুতে কেবল নতুন বলের বোলার ভাবা হলেও ক্রমেই উন্নতি করেছেন ডেথ ওভারেও।

২০২২ আইপিএলে ২০ লাখ রুপির বিনিময়ে তাঁকে দলে ভেড়ায় লখনৌ সুপার জায়ান্টস। নিজের অভিষেক ম্যাচে অবশ্য আলো ছড়াতে পারেননি। দুই ওভারে ১৮ রান হজম করে উইকেটশূন্য থাকার পর বাদ পড়েন একাদশ থেকে। তবে টুর্নামেন্টের শেষভাগে সুযোগ পাবার পর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। দুর্দান্ত বোলিং করে নজর কাড়েন গোটা বিশ্বের। 

নিজের শেষ আট ম্যাচে মাত্র ১৪ গড় এবং ৫.৯৭ ইকোনমিতে শিকার করেন ১৪ উইকেট। সেবারের আইপিএলে কমপক্ষে ২০ ওভার বল করাদের মাঝে তাঁর ইকোনমি আর গড়ই ছিল সবার সেরা। পাওয়ারপ্লেতে রীতিমতো অপ্রতিরোধ্য ছিলেন এই তরুণ।

১৪০এর বেশি গতির পাশাপাশি দুই দিকেই সুইং করানোর ক্ষমতা তাঁকে পরিণত করেছিল ব্যাটসম্যানদের জন্য দুঃস্বপ্নে। এছাড়া শেষ দিকে নেমে ব্যাট হাতে ঝড়ো ক্যামিও ইনিংস খেলার সামর্থ্য আছে মহসিনের।

সবমিলিয়ে সবাই ভেবেছিলেন জাতীয় দলে ডাক পাওয়া কেবলই সময়ের অপেক্ষা মহসিনের জন্য। পারফরম্যান্স তাঁর পক্ষে কথা বললেও ভাগ্যটাকে পাশে পাননি এই তরুণ। আইপিএলের শেষদিকে বাম কাঁধে ব্যথা অনুভব করেন। এরপর অস্ত্রোপচারের সুবাদে মাঠের বাইরে চলে যান লম্বা সময়ের জন্য। 

তবে এই দুঃসময়ে নিজের ফ্যাঞ্চাইজি লখনৌ সুপার জায়ান্টস পাশে ছিল মহসিনের। পুর্নবাসনের পুরো সময়টাতে পাশে ছিল দলটি। এমনকি পুরো মৌসুম মিস করার সম্ভাবনা থাকলেও মহসিনকে স্কোয়াডেই রেখেছিল দলটি। সেই আস্থার প্রতিদান কি দারুণভাবেই না দিলেন এই তারকা!

ইনজুরি থেকে ফিরলেও গত কয়েকদিনে মানসিকভাবে মোটেও শান্তিতে ছিলেন না মহসিন। কারণ তাঁর বাবা সেই সময়টাতে আইসিউতে লড়াই করছিলেন মৃত্যুর সাথে। অথচ কঠিন এই সময়টাতে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের বিপক্ষে শেষ ওভারে কি অসাধারণ বোলিং করলেন এই তরুণ পেসার। 

জয়ের জন্য শেষ ওভারে মুম্বাইয়ের প্রয়োজন ছিল ১১ রান। ক্রিজে ছিলেন দুই স্বীকৃত ফিনিশার ক্যামেরন গ্রিন এবং টিম ডেভিড। অন্য কোনো বোলার হলে হয়তো চাপেই খেয় হারাতেন। কিন্তু মহসিন যেন অন্য ধাতুতে, পুরো ওভারজুড়ে ইয়র্কার আর ওয়াইড ইয়র্কারের পসরা সাজালেন। তাতেই যেন কুপোকাত মুম্বাইয়ের দুই তারকা ব্যাটার, তুলতে পারলেন মোটে পাঁচ রান। মহসিনের দুরন্ত বোলিংয়ের সুবাদে পাঁচ রানের অবিশ্বাস্য জয়ে শেষ চারের পথে আরেকটু এগিয়ে গেলো লখনৌ।

ইনজুরি মহসিনকে পিছিয়ে দিয়েছে বেশ খানিকটা। তবে মহসিন জানেন ফর্মটা ধরে রাখতে পারলে জাতীয় দলে খেলার স্বপ্নপূরণ হতে খুব বেশি দেরি নেই। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link