টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরির মালিক তিনি। বলা হয় সাদা পোশাকের ক্রিকেটে তিনিই বাংলাদেশের একমাত্র স্পেশালিস্ট ক্রিকেটার। এইতো একটা ম্যাচ আগেও এই ফরম্যাটে তিনি ছিলেন বাংলাদেশের অধিনায়ক। যার নেতৃত্বে বাংলাদেশ নিউজিল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট জয়ের ইতিহাস লিখেছে। কিন্তু খুব দ্রুতই বদলে গেল দৃশ্যপট। নয়া অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের দলে জায়গা হলো না মুমিনুল হকের। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টে মুমিনুল বাদ পড়লেন একাদশ থেকেই।
সেই ২০১৩ সাল থেকে বাংলাদেশের হয়ে টেস্ট ক্রিকেট খেলে যাচ্ছিলেন তিনি। সাদা পোশাকের ক্রিকেটে একটা সময় বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ভরসার নাম হয়ে উঠেন। তাঁকে ছাড়া বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন আপ যেন চিন্তাই করা যায় না। দীর্ঘ প্রায় দশ বছরের টেস্ট ক্যারিয়ার খারাপ সময়ও মুমিনুলের কেটেছে। এমনকি ২০১৭ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্টে বাদও পড়েছিলেন।
সেই সময়টায় ব্যাট হাতে খুব বেশি বড় ইনিংস খেলতে পারছিলেন না তিনি। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশের শততম টেস্ট থেকে তাই বাদ পড়েছিলেন এই ব্যাটার। সেই সময় অবশ্য তাঁর বাদ পড়া নিয়ে অনেক তর্ক-বিতর্কও ছিল। এরপর অবশ্য পরের সিরিজেই আবারে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ফিরে এসেছিলেন তিনি।
২০১৭ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে চট্টগ্রামে সেই ম্যাচে প্রায় পাঁচ বছর হয়ে গিয়েছে। এই সময়ে বাংলাদেশ যে ৩২ টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছে তাঁর সবগুলোতেই সঙ্গী ছিলেন মুমিনুল। মাঝে সাকিব নিষিদ্ধ হবার পর বাংলাদেশের অধিনায়কত্বের দায়িত্বও উঠে তাঁর কাঁধে। অধিনায়কত্বটা যেমনই হোক করছিলেন কিন্তু বড় প্রশ্ন উঠে তাঁর ফর্ম নিয়ে।
ব্যাট হাতে এতটা বাজে সময় মুমিনুল যে আর কখনোই কাটাননি। ব্যাট হাতে তাঁর অবস্থা এতটাই করুণ যে শেষ নয় ইনিংসে একবারো দুই অংকের স্কোর করতে পারেননি। এমনকি সর্বশেষ দশ ইনিংসে তাঁর ব্যাট থেকে এসেছে মাত্র ৬৫ রান। এছাড়া সর্বশেষ নয় টেস্টে তাঁর ব্যাট থেকে হাফ সেঞ্চুরি এসেছে মাত্র একবার। মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে ঐতিহাসিক সেই ম্যাচেই খেলেছিলেন ৮৮ রানের ইনিংস।
এরপর থেকে আর কোন ভাবেই হাসছেনা মুমিনুলের ব্যাট। আর শেষ সেঞ্চুরির দেখাও পেয়েছিলেন এক বছরেরও বেশি সময় আগে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। ফলে ব্যাট হাতে এমন সময় কাটানো একজন ব্যাটসম্যানকে কোন অধিনায়কই হয়তো তাঁর দলে চাইবেন না। হয়েছেও তাই, সাকিব আল হাসান এই পর্বে তাঁর অধিনায়ক হিসেবে দ্বিতীয় ম্যাচেই একাদশ থেকে বাদ দিলেন মুমিনুলকে। ফলে ৩২ টেস্ট পর আবার টেস্ট ক্রিকেট থেকে বাদ পড়লেন তিনি।
যদিও ব্যাট হাতে একইরকম খারাপ সময় কাটাচ্ছিলেন তিন নাম্বারে ব্যাট করা নাজমুল হোসেন শান্তও। এত গুরুত্বপূর্ণ পজিশনে ব্যাট করেও ব্যাট হাতে দিনের পর দিন ব্যর্থ হচ্ছিলেন এই ব্যাটসম্যান। ফলে দ্বিতীয় টেস্টে শান্ত বাদ পড়বেন এমন গুঞ্জনও ছিল। ভাবা হচ্ছিল, মুমিনুল হয়তো আরেকটি সুযোগ পাবেন। মুমিনুলের সম্মানে হয়তো শেষ সুযোগ।
কিন্তু শান্ত টিকে গেলেও চারে খেলা মুমিনুলই বাদ পড়েছেন। ইয়াসির আলি রাব্বির ইনজুরির কারণে দলে যোগ হওয়া এনামুল হক বিজয় বিজয় খেলবেন তাঁর জায়গায়। প্রায় আট বছর পর আবার টেস্ট ক্রিকেটে ফিরছেন তিনি। এই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষেই সর্বশেষ টেস্ট ম্যাচ খেলেছিলেন বিজয়।
ওদিকে মুমিনুলের বাদ পড়ায় উঠে আসছে নতুন প্রশ্ন। ক্যারিয়ারের এই সময়ে এসে বাদ পড়া মুমিনুল কী আবার জাতীয় দলে ফিরতে পারবেন? কেননা মুমিনুলের নিজের জায়গাটা ফিরে পাওয়ার লড়াই খুব বেশি সহজ হবেনা বলেই মনে হচ্ছে। সাকিবের দলে আবার ফিরতে হলে তাঁকে নতুন করে প্রমাণ করেই আসতে হবে।
এছাড়া এই সিরিজে না খেললেও পরের সিরিজগুলোতে দলের সাথে যুক্ত হবেন মুশফিকুর রহিম। এছাড়া ইনজুরির কারণে খেলতে না পারা ইয়াসির আলি রাব্বিও আছেন। ফলে তাঁরা ফিরলে মুমিনুলের জন্য কাজটা আরো কঠিন হয়। তাই মনে একটা শঙ্কাও জাগে, টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের অন্যতম সেরা পারফর্মার, তর্ক সাপেক্ষে অন্যতম সফল ব্যাটসম্যানের ক্যারিয়ার কী তবে এখানেই শেষ। নাকি আবারো ফিরে এসে নিজের ইতিহাসটা নতুন করে লিখবেন মুমিনুল?