বয়সের সাথে বাড়ে অভিজ্ঞতা। তাছাড়া জীবনে আসে স্থিরতা। খেলায় বাড়ে দৃঢ়তা আর সক্ষমতা। কিন্তু মুমিনুল হকের ক্ষেত্রের ঘটছে ঠিক তার উলটোটা। সময়ের সাথে সাথে নিম্নগামী হচ্ছে মুমিনুলের পারফরমেন্স। ক্রমাগত তিনি হয়ে উঠছেন নিজের ছায়া।
শেষ কবে মুমিনুল হকের ব্যাট থেকে সেঞ্চুরি এসেছে? খুব বেশি না, ১৬ ইনিংস আগে সেঞ্চুরি করেছিলেন মুমিনুল হক। আফগানিস্তানের বিপক্ষে মিরপুরে সেঞ্চুরি করেছিলেন তিনি। সেটাও সমস্যা নয়। বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের সক্ষমতা বিচারে এমন বিরতি ঘটতেই পারে। কিন্তু মুমিনুল তো খেলেন কেবল একটি ফরম্যাট। সেখানেও তিনি ধারাবাহিক হতে না পারলে তা মুমিনুলের জন্যে যেমন সমস্যার, বাংলাদেশের জন্যে তেমন দুশ্চিন্তার।
তার থেকেও বড় দুশ্চিন্তার বিষয়, মুমিনুলের ডাউনফল। ২০১৩ সালে মুমিনুল শুরু করেন নিজের টেস্ট ক্যারিয়ার। তখন তার গড় ছিল ৬০ এর একটু বেশি। সময় গড়ানোর সাথে সাথে এই গড় কমেছে। ২০২৪ সালে এসে তার গড় দাঁড়িয়েছে ৩৪.১২। যদিও এটা তার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে খারাপ গড় নয়। ২০২২ সালে তার ব্যাটিং গড় ছিল মাত্র ১৮.২১।
সময়ের সাথে অভিজ্ঞ হয়েছেন বটে। কিন্তু অভিজ্ঞতার প্রতিফলন ঘটাতে তিনি পারছেন না। তার উপর ভীষণ আস্থা বাংলাদেশের। টেস্ট দলের সেটআপে তিনি বেশ গুরুত্বপূর্ণ একজন খেলোয়াড়। সেই মুমিনুলের ব্যাটে রান না আসা চিন্তার ভাঁজ ফেলে টিম ম্যানেজমেন্টের কপালে।
ভারতের বিপক্ষে চেন্নাই টেস্টেও ব্যর্থ হয়েছেন মুমিনুল। দুই ইনিংস মিলিয়ে সর্বসাকুল্যে ১৩ রান এসেছে তার ব্যাট থেকে। অবশ্য এমন দুর্দিনের গল্প নতুন নয়। ভারতের মাটিতে ৪টি টেস্ট খেলেছেন মুমিনুল। ৮ ইনিংস মিলিয়ে মাত্র ৯৬ রান তার সংগ্রহ। এমনকি ভারতের বিপক্ষে খেলা ১১ ইনিংসে নেই কোন সেঞ্চুরি। এক হাফ সেঞ্চুরি সহ তাদের বিপক্ষে ২১৫ রান এসেছে মুমিনুলের ব্যাট থেকে।
শুধু যে ভারতের মাটিতে খাবি খেয়েছেন মুমিনুল তা কিন্তু নয়। বিদেশের মাটিতে তার করুণ দশা নিত্যদিনের ঘটনা। একমাত্র শ্রীলঙ্কা ছাড়া, আর কোথাও শতকের দেখা পাননি তিনি। ১৯টা হাফসেঞ্চুরির মধ্যে ৯টা করেছেন ভিনদেশে। এসব কিছুই মুমিনুলের সক্ষমতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। টেস্ট ঘরোনার ব্যাটার বলেই তার একটা কদর রয়েছে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে।
কিন্তু নিজের নামের সাথে যুক্ত হওয়া টেস্ট খেলোয়াড় তকমার যথাযথ মর্যাদা মুমিনুল করতে পারছেন না। স্রেফ ঘরের মাঠে পারফরম করলে আর যাই হোক বিশ্বমানের হওয়া যায় না। মুমিনুলের ক্যারিয়ার ঠিক কতটুকু দীর্ঘায়িত হবে, সেটা সময়ের হাতে ন্যাস্ত। কিন্তু বাকি থাকা সময়টুকুতে তার প্রতি থাকা প্রত্যাশার প্রতিদান দেবেন তো মুমিনুল?