ফুটবল জগতে ট্রান্সফার মার্কেট এক অন্যতম বহুল আলোচিত বিষয়। কোন খেলোয়াড় কোন ক্লাবে গেলো, কত টাকার বিনিময়ে গেলো এসব নিয়ে যেন ভক্তদের মনে আগ্রহের শেষ নেই। তবে ২১শতকে এটি যেন এক নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে। আগে সামান্য কিছু অর্থের বিনিময়ে খেলোয়াড়দের ট্রান্সফার হতো। সেই অংক এখন শত কোটিতে গিয়ে দাঁড়িয়েছে।
ফুটবলের বাণিজ্যিকীকরণ এবং টিভি সম্প্রচার চুক্তি শীর্ষস্থানীয় ক্লাবগুলিকে বিশাল আর্থিক ক্ষমতা দিয়েছে। যার ফলে বড় ক্লাব গুলো বিশাল অংকের অর্থের বিনিময়ে খেলোয়াড়দের দলে ভেড়াতে পারছে। ধারণা করা হচ্ছে, ২০৫০ সালের মধ্যে ট্রান্সফার ফি ৩৫০ মিলিয়ন থেকে ৬৫০ মিলিয়ন পাউন্ড পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে।
এই পর্যন্ত এমন অনেক ট্রান্সফার রয়েছে যা এই উচ্চ অংককে ছুঁয়েছে। ২১ শতকের সবথেকে ব্যয়বহুল পাঁচটি ট্রান্সফারের দিকে চোখ রাখা যাক। এই সকল ট্রান্সফার আদৌ সফল ছিল, নাকি নিছকই ব্যর্থ?
- নেইমার জুনিয়র ( বার্সেলোনা-প্যারিস সেইন্ট জার্মেইন, ২২২ মিলিয়ন ইউরো)
এই ট্রান্সফার ফি গত ৭ বছরে কেউ ছুঁতে পারেনি। হয়তো ভবিষ্যতেও কেউ পারবে না। ২০১৭ সালে পিএসজি নেইমারের ২২০ মিলিয়ন রিলিজ ক্লসের অর্থ পরিশোধ করে বার্সেলোনা থেকে তাকে নিয়ে আসেন। এই ট্রান্সফার পুরো ফুটবল বিশ্বকে হতবাক করে। মেসির ছায়া থেকে বের হয়ে প্যারিসে প্রধান তারকা হওয়ার সুযোগই তাকে এই সিদ্ধান্ত নিতে অনুপ্রেরণা নিতে সাহায্য করেছিল।
তার এই ট্রান্সফার আদৌ সফল ছিল কিনা তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। তাকে দলে ভেড়ানো হয়েছিল ইউরোপিয়ান শিরোপা জেতার জন্য। বোর্ডের আশা ছিল হয়তো তার দক্ষতা প্যারিসকে সাহায্য করবে ইউরোপিয়ান শিরোপা জিততে। কিন্তু তা কখনও হয়ে উঠেনি।
এত বিশাল অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে পিএসজি কেবল ঘরোয়া আধিপত্যই পেয়েছে। যা এমনিতেও তাদের কাছে সাধারণ ব্যাপার। ক্লাবের প্রত্যাশা ছিল ব্রাজিলিয়ান তারকা আরও কিছু বড় সাফল্য এনে দেবেন।
- কিলিয়ান এমবাপ্পে ( মোনাকো – প্যারিস সেইন্ট জার্মেইন – ১৬৬ মিলিয়ন ইউরো)
২০১৭ সালে মোনাকো থেকে এমবাপ্পে পিএসজিতে আসেন। এম্বাপ্পের এই ট্রান্সফার একটি সঠিক পদক্ষেপ ছিল তা বলাই বাহুল্য। তবে মাত্র ১৮ বছর বয়সী একজন খেলোয়াড়ের জন্য এতো টাকা খরচ করাটা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ ছিল।
তবে এই ঝুঁকি নেওয়া ক্লাবের জন্য দারুন কাজে লেগেছে। তিনি প্যারিসের ইতিহাসের সর্বোচ্চ গোলদাতা। কিন্তু রিয়াল মাদ্রিদের জন্য পিএসজি কে ফ্রিতে ছেড়ে যাওয়াটা একটু হলেও ভক্তদের মনে বিরহের সৃষ্টি করবে।
- জাও ফেলিক্স (বেনফিকা – অ্যাতলেটিকো মাদ্রিদ – ১২৬ মিলিয়ন ইউরো)
জাও ফেলিক্স একজন আক্রমণাত্মক খেলোয়াড়। তিনি মাঠে স্বাধীনতা পেলে দুর্দান্ত পারফর্ম করেন। কিন্তু ডিয়েগো সিমিওনের ডিফেন্সিভ খেলার কৌশলের কারণে ফেলিক্স কখনও আশানুরূপ পারফর্ম করতে পারেনি।
অত:পর তাকে প্রথমে চেলসি এবং পরে বার্সেলোনার কাছে ধারে পাঠানো হয়। এরপর এই মৌসুমের গ্রীষ্মে তাকে চেলসিতে স্থায়ীভাবে স্থানান্তরিত করা হয়।
- ফিলিপে কোটিনহো (লিভারপুল – বার্সেলোনা – ১০৮ মিলিয়ন ইউরো)
বার্সেলোনার ব্যয়বহুল ভুলগুলোর মধ্যে সম্ভবত সবচেয়ে বড় ভুল ছিল ফিলিপে কোটিনহোকে দলে নেওয়া। এটি ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে খারাপ ট্রান্সফারগুলোর একটি হিসেবে বিবেচিত করা যায়।
২০১৮ সালের জানুয়ারিতে বার্সেলোনায় যোগ দেওয়ার সময় কৌতিনিয়ো চোটে ভুগছিলেন। যেখানে মেসির মতো খেলোয়াড় রয়েছে দলে। সেই দলে নিজেকে প্রধান খেলোয়াড় হিসেবে তৈরি করাটা তার জন্য ছিল অত্যন্ত কঠিন।
পরবর্তীতে তার খারাপ ফর্ম ও কিছু বাজে ফলাফলের কারণে তিনি সমর্থকদের কাছে অপছন্দের ব্যক্তি হয়ে ওঠেন। বায়ার্ন মিউনিখে একটি হতাশাজনক ধারের সময় এবং পরবর্তীতে হাঁটুর চোট তার বার্সেলোনার অধ্যায়কে অত্যন্ত দু:খজনকভাবে শেষ করে।
- আতোঁয়ান গ্রিজমান (আতলেতিকো মাদ্রিদ – বার্সেলোনা – ১০৭ মিলিয়ন ইউরো)
২০১৯ সালে বার্সেলোনা আঁতোয়ান গ্রিজমানের বিশাল রিলিজ ক্লজ দিয়ে তাকে দলে ভিড়িয়েছিলেন। সে সময় তিনি বিশ্বের অন্যতম সেরা খেলোয়াড়দের মধ্যে একজন হিসেবে বিবেচিত ছিলেন।
তবে, মাত্র দুই মৌসুমের মধ্যেই তার অধারাবাহিক পারফরমেন্সের কারণে ভক্তরা খুশি ছিলেন না। এছাড়াও বার্সার কঠিন আর্থিক অবস্থার কারণে তাকে আবারও অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়।
বার্সেলোনায় তার দ্বিতীয় মৌসুম খুব একটা খারাপ ছিল না। তিনি সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ৩৩টি গোলে অবদান রেখেছিলেন। তবে এর মধ্যে মাত্র ১৩টি ছিল লিগে। তাকে বার্সেলোনার কৌশলগত পরিকল্পনার সঙ্গে মেলানো কঠিন ছিল বলে মনে করা হয়।