ক্রিকেট ময়দানে বড় এক ব্যাটিং জুঁটি বাহবা পায়, প্রশংসা কুড়ায়। জোট বেঁধে বল করা দুই বিধ্বংসী বোলারের পিঠ চাপড়ে দেয় গোটা বিশ্ব। কিন্তু আরো এক জুঁটি যে ক্রিকেটের ময়দানে অবদান রাখে তা থেকে যা আড়ালে। আলো ছড়াতে চাইলেও কোথাও যেন একটা বাঁধা পেয়ে আর মেলে ধরতে পারেনা।
সেই জুঁটিটা বোলার আর উইকেটরক্ষকের। এই একটা মেলবন্ধন যে কত ম্যাচ নিজ দলের জন্যে বাগিয়ে নিয়েছে তার ইয়োত্তা নেই। বোলার-জুঁটি নিয়ে এমন আলোচনা সচারচর হয় না। তাই এ ধরণের বেশ কিছু জুঁটির টেস্ট ম্যাচের অবদান নিয়ে রয়েছে আজকের আলোচনা।
- শন পোলক ও মার্ক বাউচার (দক্ষিণ আফ্রিকা)
শন পোলক তাঁর সময়কার দক্ষিণ আফ্রিকা তো বটেই বিশ্বের সেরা বোলারদের একজন হিসেবেই বিবেচিত হতেন। সর্বকালের সেরা বোলারদের কাতারেও তাঁর সংযুক্তি অবাক করা কোন ঘটনা হবে না। তাঁর উপরই ছিলো প্রোটিয়াদের মূল ভরসা। নিজের দিনে পলক ছিলেন অপ্রতিরোধ্য। প্রতিপক্ষকে একাই ঘায়ে করে দেওয়ার মত সক্ষমতা ছিলো তাঁর। তাঁকে সহয়তা করতে বিন্দুমাত্র কালক্ষেপন করতেন না তাঁরই সতীর্থ মার্ক বাউচার।
মার্ক তাঁর শৈল্পিক উইকেট কিপিং এ বরাবরই মুগ্ধ করতেন সবাইকে। তাছাড়া তাঁর দস্তানা জোড়ায় যেন লেগে থাকতো চৌম্বক। যা কিনা আকর্ষণ করতো চামড়ার সেই গোলকে। পলক এবং বাউচার জুঁটি মিলে মোট ৭৯টি উইকেট শিকারে অংশ নিয়ে রয়েছেন আজকের তালিকার পঞ্চমস্থানে।
- ব্রেট লি ও অ্যাডাম গিলক্রিস্ট (অস্ট্রেলিয়া)
একজন পেসারের মূল অস্ত্র তাঁর গতি। আর সেই গতিতে পরিপূর্ণ ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার কিংবদন্তি বোলার ব্রেট লি। ক্রিকেট ইতিহাসে অন্যতম দ্রুতগতির বোলারদের একজন তিনি। প্রতিপক্ষের মনে কাপন ধরিয়ে দেওয়ার জন্যে যা প্রয়োজন তাঁর সবটাই নিজের মধ্যে ধারণ করতেন ব্রেট লি। ক্রিকেট ময়দানে উইকেটের পেছনে ব্রেট লির সঙ্গী ছিলেন আরেক অজি কিংবদন্তি অ্যাডাম গিলক্রিস্ট।
ব্যাট হাতে তিনি যেমন ছিলেন দূর্দান্ত ঠিক তেমনি উইকেটের পেছনে তিনি ছিলেন চৌকস। ব্রেট লি এর বাউন্স এবং গতিতে ব্যাটাররা খাবি খেতেন আর সেই সব বল অনায়াসে জমা পড়তো গিলক্রিস্টের হাতে। দু’জন মিলে ৮১ বার ব্যাটারদের ফিরিয়েছেন প্যাভিলনে। তাঁদের জুঁটি বহুবার অস্ট্রেলিয়াকে জয়ের কাছাকাছি নিয়ে গিয়েছে।
- মাখায়া এনটিনি ও মার্ক বাউচার (দক্ষিণ আফ্রিকা)
দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট একদিক থেকে বেশ সৌভাগ্যবান। আর তা হল পেস বোলারদের সংকট হয়নি কখনোই। শন পলকের সমসাময়িক সময়ে আরো একজন বেশ কার্যকরী বোলার ছিলো প্রোটিয়াদের ডেরায়, মাখায়া এনটিনি। প্রতিপক্ষের আরো এক আতংকের নাম। পেস সহায়ক পিচে তিনি যেন মেতে উঠতেন ধ্বংসলীলায়।
তাঁকে সঙ্গ দিতেন আবারো সেই মার্ক বাউচার। এই দুই বোলার-উইকেট রক্ষক জুঁটি ৮৪ দফা ব্যাটারদের মূল্যবান উইকেট তুলে নিতে সক্ষম হয়েছেন। যা কিনা প্রোটিয়াদের জয়ের রাস্তা সুগম করেছে কালে কালে।
- গ্লেন ম্যাকগ্রা ও অ্যাডাম গিলক্রিস্ট (অস্ট্রেলিয়া)
কিংবদন্তিদের আস্তানা বলা যেতে পারে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলকে। সময়ের পরিক্রমায় অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটাররা নিজেদেরকে সেই স্থানের নিয়ে যাওয়ার সংগ্রাম করে গেছেন। আর অন্যদিকে নিজের ভেতরে থাকা প্রতিভা আর পরিশ্রম দিয়ে ক্রিকেট দুনিয়াকে একসময় শাসন করেছেন গ্লেন ম্যাকগ্রা। তাঁর মতো লিথ্যাল পেসার ইতিহাসে উঁকি দেয় কালেভদ্রে।
উইকেট রক্ষক অ্যাডাম গিলক্রিস্টের সাথে তিনিও বেঁধেছিলেন জুঁটি। তাঁকে নিরাশ করেননি গিলক্রিস্ট। দু’জনে মিলে ৯০ উইকেট পুরেছেন অস্ট্রেলিয়ার ঝুলিতে। আর যেসব ম্যাচে তাঁরা জ্বলে উঠেছিলেন সে ম্যাচগুলোর ফলাফল নিয়ে হয়ত কারো তেমন সন্দেহ থাকবার কথা নয়।
- ডেনিস লিলি ও রডনি মার্শ (অস্ট্রেলিয়া)
জুঁটির কথা আসলে হয়ত অনেকের মনেই অস্ট্রেলিয়ার ডেনিস লিলি ও জেফ থমসনের বোলিং জুঁটির কথা উঁকিঝুঁকি দেয়। কি দূর্দান্ত এক বোলিং জুঁটি। দুই প্রান্ত থেকেই ব্যাটারদের একেবারে কোণঠাসা করে ফেলতেন। লিলির সেই বিদ্যুৎ গতির এক একটি বলের সাথে স্কিলের সংমিশ্রণে ব্যাটারদের জন্যে তা যেন হয়ে যেতো দূর্ভেদ্য।
আর সেইসব দূর্ভেদ্য সব বলগুলো উইকেটে পেছনে থেকে অনায়াসে পড়তে পারতেন অস্ট্রেলিয়ার আরেক কিংবদন্তি রডনি মার্শ। দুই জনের জুঁটি অস্ট্রেলিয়ার জন্যে ছিল এক আশীর্বাদ। দুজনের মেলবন্ধন ৯৫টি উইকেট তুলে নিয়েছেন প্রতিপক্ষের।