জাতীয় দলে অনেকটা দমকা হাওয়ার মতই এসেছিলেন, আবার হুট করেই হারিয়ে গেলেন। তাই বলে তো আর হাল ছেড়ে দেয়া যায়না। এখনো পরনে আছে জাতীয় দলের ট্রাভেল জার্সি। বিশ্বকাপের সময় পুরো মিরপুর স্টেডিয়াম যখন ফাঁকা তখন অনেকটা একাই অনুশীলন চালিয়ে যাচ্ছেন মুনিম শাহরিয়ার। আবার কী মুনিম নামের দমকা হাওয়ার দেখা মিলবে?
সকাল থেকে অনুশীলন শুরু করেছিলেন হোম অব ক্রিক্রেটে। দুপুরবেলা যখন অনুশীলন শেষে মাঠ থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিলেন তখনই মুনিমের সাথে একটু কথা বলার চেষ্টা। একটু তাড়ায় ছিলেন, বলছিলেন দ্রুতই বেরিয়ে যেতে হবে। তবুও নিজের খেলাটা নিয়ে কথা বলতে আপত্তি জানালেন না।
মুনিম শাহরিয়ার দেশের ক্রিকেটে একটা স্বপ্ন নিয়েই এসেছিলেন। আর দশজন ব্যাটারের চেয়ে তাঁর গল্পটা একটু ভিন্ন। বলা যায় একটা ক্রিকেট মৌসুম তাঁর জীবন বদলে দিয়েছে। খুব প্রতিভাবান ব্যাটসম্যান নন, সেভাবে ক্রিকেট বোর্ডের কাঠামোতেও ছিলেন না। এমন একজন ক্রিকেটারের কাছে জাতীয় দল দূর আকাশের তারা।
আরো স্পষ্ট করে বললে ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে ম্যাচ পাচ্ছিলেন না মুনিম। তবে গতবছর টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে হওয়া ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগ সবকিছু বদলে দিল। সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটে আবাহনীর হয়ে ওপেন করতে নেমে প্রায় প্রতিটা ম্যাচেই ঝড় তুললেন। হঠাত করেই ক্রিকেট পাড়ায় নজর কাড়লেন মুনিম শাহরিয়ার।
তবুও সর্বোচ্চ পর্যায়ের ক্রিকেট মুনিমের জন্য সহজ ছিল না। হয়তো দারুণ একটা কাভার ড্রাইভ খেলতে পারেন না বলে, চোখ জুড়ানো একটা ফ্লিক করতে পারেন না বলে কিংবা নামের পাশে ক্লাসিক তকমাটা নেই বলেই মুনিমদের অবহেলা করাটা খুব সহজ। গতবছর ঢাকা লিগে এমন ঝড় তোলার পরেও বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের ড্রাফটে কোন দলই পেলেন না। পরে অবশ্য ফরচুন বরিশাল তাঁকে দলে ভিড়িয়েছিল।
তবে এত বড় দলে তো আর চাইলেই ওপেন করা যায়না। মুনিমও সুযোগ পাচ্ছিলেন না। কিন্তু যখন পেলেন তখনই মুনিমের ঝলকটা দেখা গেল। ওই একটা মৌসুম, একটা লিগ সবকিছু বদলে দিল। বলতে গেলে দেশের ক্রিকেট কাঠামোর একজন আউট সাইডার থেকে, ফ্রন্টলাইন যোদ্ধা হয়ে গেলেন।
বাংলাদেশ যখন হন্যে হয়ে একজন ওপেনারের খোজ চালাচ্ছে তখনই মুনিমের এমন আগমনী। দুইয়ে দুইয়ে চার মিললো। বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি দলে জায়গা হলো মুনিম শাহরিয়ার। বাংলাদেশের হয়ে ওপেনও করলেন। প্রমাণ করতে পারলেন না, আবার হারিয়ে গেলেন।
তবে এই কথায় একটা ফাক থেকে যায়। মুনিম শাহরিয়ার টি-টোয়েন্টি ঘরনার ক্রিকেটার। প্রথমত এমন ব্যাটার আমাদের দেশে আসেই না। আর মুনিমরা প্রতিদিন রান করবে সেটা ভাবাও ভুল। এই ধরনের ব্যাটারদের সাধারণত ফ্রি লাইসেন্স দেয়া হয়। নিজের ন্যাচারাল খেলাটা খেলার স্বাধীনতা দেয়া হয়।
বাংলাদেশের টিম ম্যানেজম্যান্ট থেকেও তাই বলা হয়েছিল। মুনিমকে নাকি ফ্রি লাইসেন্স দেয়া হয়েছে। তবে আসলেই কী তিনি যথেষ্ট সুযোগ পেয়েছিলেন কিনা সেটা নিয়ে তর্ক-বিতর্ক হতে পারে। ঢাকা লিগ কিংবা বিপিএলে অমন ঝলক দেখানোর পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কেন পারলেন না এমন প্রশ্ন ছিল মুনিমের কাছে।
তবে মুনিমের মনে যেন পালটা প্রশ্নই জমা ছিল। মুনিম বলছিলেন, ‘আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খুব বেশি পার্থক্য এমন না। আমি কিন্তু টানা ম্যাচ খেলতে পারিনি। দুইটা খেলেছি, আবার একটা খেলেছি। আবার আমার ইনজুরিও ছিল। সব মিলিয়ে হয়নি।’
সত্যিই তাই, ফ্রি লাইসেন্সের কথা বলে মুনিম সর্বসাকুল্যে সুযোগ পেয়েছিলেন পাঁচটা ম্যাচ। সেটাও আবার টানা পাননি। আফগানিস্তানের বিপক্ষে দুটি ম্যাচ খেলেছেন। এরপর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে একটা, এরপর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে আবার দুইটা। এরপরই মুনিমের কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে বাংলাদেশ দল। মুনিম কোন ম্যাচেই প্রমাণ করতে পারেননি সেকথা সত্য, তবে ফ্রি লাইসেন্সও কী পেয়েছিলেন?
মুনিমকে নিয়েই এত আলোচনার অন্যতম কারণ তাঁর ব্যাটিংয়ের ধরণ। দেখতে খুব সুন্দর না হলেও কার্যকরী। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের ইনটেন্ট খুঁজে পাওয়া যায়। স্বভাবজাত ভাবেই পাওয়ার হিটিং ক্ষমতাও তাঁর আছে। এমন আরেকজন ব্যাটারও দেশের ক্রিকেটে খুঁজে পাওয়া মুশকিল। ফলে মুনিমরা হারিয়ে গেলে দেশেরই ক্ষতি।
অথচ জাতীয় দল থেকে বাদ পড়ার পর মুনিমকে নিয়ে ক্রিকেট বোর্ডের বিশেষ কোন পরিকল্পনাও কখনো চোখে পড়েনি। তবুও নিজের মত করে চেষ্টা করে যাচ্ছেন তিনি। ফাঁকা এই সময়টায় নিজের খেলাটা নিয়ে নতুন করে ভাবছেন কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে বলছিলেন, ‘হ্যাঁ, অবশ্যই, যতদিন ক্রিকেট খেলব ততদিনই আসলে ভাবতে হবে, নতুন কিছু যোগ করতে হবে। নিজের মত কাজ করে যাচ্ছি।’
পাওয়ার প্লে ব্যবহার করতে পারেন এমন একজন ওপেনার অবশ্য বাংলাদেশ এখনো খুঁজে পায়নি। সেক্ষেত্রে আবার যদি টানা সুযোগ দেয়া হয় মুনিমকে তিনি কী এবার কাজে লাগাতে পারবেন ? মুনিম বলছিলেন, ‘আবার সুযোগ আসে, টানা খেলতে পারি অবশ্যই নিজেকে প্রমাণ করার চেষ্টা করবো।’