নির্ভরতার যুগলবন্দী

সকালবেলা সাগরিকার বাতাস দারুণ ভাবেই কাজে লাগিয়েছেন পাকিস্তানের দুই পেসার। দিনের শুরুতেই নতুন বলে স্যুইং আদায় করে বাংলাদেশের দুই ওপেনারকে ফিরিয়ে দেন শাহীন শাহ আফ্রিদি ও হাসান আলী। এরপর শান্ত ও মুমিনুলও মাঠে আসা দর্শকদের হতাশার সাগরে ডুবিয়ে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন। ৪৯ রানেই চার উইকেট হারিয়ে তখন দিশেহারা বাংলাদেশ দল। সেই সময় ক্রিজে ছিলেন মুশফিকুর রহিম। তাঁর সাথে নতুন করে এক মহাকাব্য লিখতে মাঠে প্রবেশ করেন লিটন।

সকালবেলা সাগরিকার বাতাস দারুণ ভাবেই কাজে লাগিয়েছেন পাকিস্তানের দুই পেসার। দিনের শুরুতেই নতুন বলে স্যুইং আদায় করে বাংলাদেশের দুই ওপেনারকে ফিরিয়ে দেন শাহীন শাহ আফ্রিদি ও হাসান আলী। এরপর শান্ত ও মুমিনুলও মাঠে আসা দর্শকদের হতাশার সাগরে ডুবিয়ে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন। ৪৯ রানেই চার উইকেট হারিয়ে তখন দিশেহারা বাংলাদেশ দল। সেই সময় ক্রিজে ছিলেন মুশফিকুর রহিম। তাঁর সাথে নতুন করে এক মহাকাব্য লিখতে মাঠে প্রবেশ করেন লিটন।

দিনের প্রথম ১৭ ওভারেই চার উইকেট তুলে নিয়ে তখন ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিয়েছে পাকিস্তান। বিশেষ করে অধিনায়ক মুমিনুল আউট হয়ে যাবার পর তো সব আশাই ছেড়ে দেয় বাংলাদেশের সমর্থকরা। একটা সময় মনে হচ্ছিল প্রথম দুই সেশন টিকে থাকাও বাংলাদেশের জন্য বিশাল চ্যালেঞ্জ। তবুও মনে কোনে এক নিভু নিভু প্রদীপ হয়ে জ্বলছিলেন মুশফিকুর রহিম আর টেস্টে দারুণ ফর্মে থাকা লিটন।

পাকিস্তানের দুই স্পিনার সাজিদ ও নোমানকে প্রতিরোধের উপায়টা বাতলে দিলেন লিটনই। দুই স্পিনারকে ব্যাকফুটে গিয়ে মাঠের চারদিকে দারুণ সব শট খেলছিলেন। যেনো আরেকবার মোনালিসা আঁকতে চান জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে। লিটনের ব্যাটের কী সৌরভ সেটা আরেকবার টের পেল সাগরিকার দর্শকেরা, টের পেল পাকিস্তানের বোলাররাও।

তবে শুরুর পথটা সহজ ছিল না। চার উইকেট হারানো বাংলাদেশের হাল ধরতে নেমে বাইশ গজ রীতিমত আঁকড়ে পড়ে ছিলেন লিটন-মুশি। দুজন মিলে পাড় করে দিলেন প্রথম সেশন। লাঞ্চ বিরতির পর দুজনে যোগ করলেন আরো ১০২ রান। চা বিরতিতে যাওয়ায় আগে তখন একটু হালে পানি পেয়েছে বাংলাদেশ।

আজ বোঝা গেল টেস্ট ক্রিকেটে মুশফিক কত বড় মাপের ক্রিকেটার। নিজে একপ্রান্ত আগলে রেখে খেলে গেলেন। খেলালেন লিটনকে দিয়েও। নিজের দীর্ঘ অভিজ্ঞতার পুরোটা নিঙরে দিলে চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম দিনে। শেষ দুই টেস্টে হাফ সেঞ্চুরির দেখা পাননি। এছাড়া গতবছর করোনার আগে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ডাবল সেঞ্চুরি করার পর আর কোন সেঞ্চুরির দেখাও পাননি।

তবে আজ মুশফিক খেলেছেন নিজের চেনারূপে। লিটনের সাথে শেষ করে এসেছেন পুরো দিন। দিন শেষে অপরাজিত আছেন ৮২ রানে। আগামীকাল হয়তো সকাল সকালই নিজের অষ্টম টেস্ট সেঞ্চুরির দেখা পেয়ে যেতে পারেন এই ব্যাটসম্যান। তবে প্রথম সেশনে খাঁদের কিনারায় থাকা বাংলাদেশকে যেভাবে তুলে এনেছেন সেটা শুধু মুশফিকই পারেন। সেজন্য বাংলার ক্রিকেটে তিনিই মিস্টার ডিপেন্ডেবল।

লিটন ও মুশফিক মিলে আজ দিন শেষ করেছেন ২০৪ রানের অপরাজিত জুটি নিয়ে। পঞ্চম উইকেটে এটি বাংলাদেশের চতুর্থ সর্বোচ্চ জুটি। পঞ্চম উইকেটে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ৩৫৯ রানের জুটিতেও ছিলেন মুশফিক। সাকিবকে নিয়ে সেই জুটি গড়েছিলেন নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। এছাড়া নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মাহমুদুল্লাহ ও সৌম্য সরকারের ২৩৫ রানের জুটিরও কাছাকাছিই আছেন লিটন-মুশফিক।

ওদিকে দিনের খেলা শেষ হওয়ার খানিক আগেই নিজের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন লিটন দাস। মিড অফে আলতো করে বল পাঠিয়েই দৌড় দিলেন। উইকেটে নিজের পুরো শরীরটা ছুঁড়ে দিয়ে নিজের শতরান পূরণ করলেন। এরপর পিঠে ও পেশীতে ব্যাথার কারণে ব্যাটিং করতে কষ্ট হচ্ছিল। তবুও দিনের শেষ বল পর্যন্ত লড়ে গিয়েছেন। অপরাজিত আছেন ১১৩ রান করে। আগামীকাল এখান থেকে শুরু করলে বিশাল এক ইনিংস খেলার সুযোগ আছে এই ব্যাটসম্যানের সামনে।

দুজনে ২০৪ রানের বিশাল জুটি গড়লেও কাজটা এখনো শেষ হয়ে যায়নি। দলকে খাঁদের কিনারা থেকে তুললেও চট্টলার ব্যাটিং পিচে বাংলাদেশকে পাড়ি দিতে হবে আরো লম্বা পথ। সেই পথচলায় বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় আশা ও ভরসার জায়গা লিটন ও মুশফিক। ফলে টেস্ট ম্যাচে লড়াই করতে চাইলে আগামীকাল আরো বড় পথ পাড়ি দিতে হবে এই দু’জনকে।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...