ফর্মটা মোটেও ভালো যাচ্ছিলো না মুশফিকুর রহিমের। টি-টোয়েন্টি তো নয়ই, বরং কোনো ফরম্যাটেই যেন হাসছিলো না মুশফিকের ব্যাট। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) প্রথম অংশও কেটেছে যাচ্ছেতাই ভাবে। কিন্তু মুশফিকুর রহিম নিজের সেরাটা যেন জমিয়ে রেখেছিলেন টুর্নামেন্টের শেষ প্রান্তের জন্য, বিশেষ করে ফাইনালের জন্য।
মুশফিকের সময় ফুরিয়ে আসছে – এটা সত্য। তবে, ক্লাস তো দিন শেষে কিছুটা হলেও ম্যাটার করে। আর সেটা এত সময় মতই করবে সেটা কে জানত। মিরপুরে তাই দিনটি মুশফিকের।
আকাশে উড়তে থাকা সিলেট স্ট্রাইকার্স দল যখন ২৬ রানে দুই উইকেট হারিয়ে বিপদে,তখন ব্যাটিংয়ে নামলেন মুশফিক। সাধারণত তখন ব্যাটিংয়ে আসার কথা ছিলো বিপিএলে ছন্দে থাকা জাকির হাসানের। কিন্তু দল তখন ফাইনালের বড় মঞ্চে ভরসা করল মুশফিকুর রহিমের অভিজ্ঞতার ওপর। প্রতিদানও দিলেন দুই হাত ভরে।
প্রথমে মুশফিক ছিলেন সাপোর্টিং রোলে, সহকারীর ভূমিকায়। দারুণ খেলতে থাকা নাজমুল হোসেন শান্তকে যোগ্য সঙ্গ দিচ্ছিলেন। কিন্তু ৭৯ রানের দারুণ পার্টনারশিপের পর শান্ত আউট হলে এরপর কুমিল্লার বোলারদের ওপর চড়াও হন মুশফিক। দেখে কে বলবে যে এই টুর্নামেন্টে বাজে সময় কাটাচ্ছেন তিনি। নিজের সহজাত সব শট খেললেন, যেন ক্যারিয়ারের সেরা সময়ের মুশফিক আবার ফিরে এলো বিপিএলের ফাইনালের মঞ্চে।
তিন ছক্কা আর পাঁচ চারে সাজানো মু্শফিকের ইনিংসের মাহাত্ম্য অন্য জায়গায়। শুধু ১৫৪.১৭ স্ট্রাইক রেটে ব্যাটই করেননি তিনি, অপরাজিত থেকে দলের সংগ্রহ নিয়ে গেছেন ১৭৫ এ।
বাজে সময়ের মধ্যে দিয়ে যাবার ফলে চারদিকে সমালোচনা হচ্ছিল তাঁর। সব সমালোচনার জবাব দেবার মঞ্চ হিসেবে যেন বেছে নিলেন ফাইনালের মঞ্চকেই। যেই মুশফিকের স্ট্রাইকরেট নিয়ে এত আলোচনা, ফাইনালের মুশফিক ব্যাট করলেন ১৫০ এর বেশি স্ট্রাইক রেটে। স্লগ ওভারগুলোতে যেন বলকে বাউন্ডারি ছাড়া করার নেশায় মেতেছিলেন মুশফিক। কুমিল্লার বোলাররা যেন লেন্থই খুঁজে পাচ্ছিলেন না মুশফিকের সামনে।
সুনীল নারিন, মঈন আলিদের যেন অসহায়ই লাগছিলো মুশফিকের সুইপ শটের কাছে। রাসেল, মুকিদুল মুগ্ধ কিংবা মোস্তাফিজরদেরও শাসন করে গেছেন ব্যাট হাতে। শেষ পর্যন্ত ৪৮ বলে ৭৪ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলে মুশফিক রইলেন অপরাজিত। বিপিএলে সিলেটের প্রথম শিরপো জেতার মঞ্চটা প্রস্তুত করে দিলেন মুশফিকই। টুর্নামেন্টের শুরু থেকে শান্ত, হৃদয়, জাকিরদের ব্যাটে চড়ে ফাইনালে ওঠে সিলেট। এবার ফাইনালের মঞ্চে নিজের সেরাটা নিংড়ে দিয়ে মুশফিকও জানান দিলেন, এখনও ফুরিয়ে যাননি তিনি।