বদ্ধ দুয়ারে ফেরার লড়াই

ঈদের লম্বা ছুটিতে একেবারেই নীরব হয়ে পড়েছিল ঢাকা শহর। একইরকম চিত্র ছিল মিরপুরের হোম অব ক্রিকেটে। সারাবছর ক্রিকেট নিয়ে ব্যস্ত থাকা মিরপুর স্টেডিয়ামই এ কয়দিন ছিল একেবারেই শুনশান। তবে বেশি ছুটি কাটানোর সুযোগ নেই। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ দরজায় কড়া নাড়ছে। কিছুদিন বাদেই চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত হবে সিরিজের প্রথম টেস্ট।

তাই ক্রিকেটারদেরও দ্রুতই অনুশীলনে ফেরার কথা। স্বাভাবিকভাবেই গণমাধ্যমকর্মীরাও সকাল সকাল হাজির হয়েছিল অনুশীলন কাভার করতে। তবে সকালবেলা মিরপুরে গিয়ে দেখা গেল অবাক করা কান্ড। সাংবাদিকদের মাঠে ঢোকার দরজায় বন্ধ করে রাখা হয়েছে। ওদিকে খবর ছিল সকাল দশটায় হোম অব ক্রিকেটে অনুশীলন করতে ঢুকেছেন মুশফিকুর রহিম।

কিন্তু সাংবাদিকদের কেন সেই অনুশীলন কাভার করতে  দেয়া হলো না সেই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায়নি। ফলে ঈদের পরপরই বেশ গরম হয়ে উঠেছিল মিরপুর স্টেডিয়াম। জানা যায় কোচ নাজমুল আবেদিন ফাহিমকে নিয়ে বদ্ধদুয়ার অনুশীলন করেন মুশফিকুর রহিম।

ওদিকে ব্যাট হাতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খুব একটা ভালো সময় কাটছে না মুশফিকুর রহিমের। টেস্ট, ওয়ানডে কিংবা টি-টোয়েন্টি তিন ফরম্যাটেই বেশ ভুগতে হচ্ছে অভিজ্ঞ এই ব্যাটারকে। কেননা গত দুই বছরে বাংলাদেশের হয়ে মুশফিকের ব্যাট যেন একেবারেই মলিন। তিন ফরম্যাট মিলিয়েই গত দুই বছরে মুশফিকের ব্যাট সেঞ্চুরি ছুঁয়েছে মাত্র একবার। এছাড়া ভালো ইনিংসও এসেছে হাতে গোনা দুই একবার।

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজের আগে তাই ঈদের ছুটি কাটিয়ে সবার আগে অনুশীলনে মুশফিকুর রহিম। ঠিক কী নিয়ে কাজ করেছেন তা স্বাভাবিক ভাবেই জানা যায়নি। তবে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ফর্মে ফেরা সর্বোচ্চ চেষ্টাই করছেন নিশ্চয়ই।

কেননা টেস্ট ক্রিকেটে এই মুহূর্তে মুশফিকুর রহিমের অবস্থা একেবারেই করুণ। ২০২১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত মুশফিকুর রহিম মোট  ১০ টি টেস্ট খেলেছেন। সেখানে মুশফিক হাফ সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন মাত্র তিনবার, নেই একটিও সেঞ্চুরি। এই সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ ৯১ রানের ইনিংস এসেছে গত বছর পাকিস্তানের বিপক্ষে।

ফলে মুশফিক আসলে যে কারণে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন আপে অনেক বেশি জরুরি ছিলেন সেটা এখন আর তাঁর কাছ থেকে পাওয়া যাচ্ছেনা। খুব বড় ইনিংস তো না-ই, এমনকি হাফ সেঞ্চুরির দেখাও পাচ্ছেন খুব সামান্যই। ফলে মিডল অর্ডারে মুশফিকের ব্যাটিং বাংলাদেশকে স্বস্তি দিতে পারছেনা।

ওদিকে টেস্ট দলে লিটনের মত ইনফর্ম ব্যাটসম্যানকে ব্যাট করতে হচ্ছে ছয়-সাতে। টিম ম্যানেজম্যান্ট চাইলেও তাঁকে উপরে খেলাতে পারছেনা মুশফিককে জায়গা দিতে গিয়ে। ওদিকে লিটন শেষ দিকে নেমে ফর্মে থাকলেও বড় ইনিংস খেলার সঙ্গী পাচ্ছেন না। ফলে লিটনকেও ঠিকঠাক ব্যবহার করতে পারছেনা বাংলাদেশ। এছাড়া ব্যাটসম্যান মিরাজ গত একবছরে এমন কিছু ইনিংস খেলেছেন যে তিনিও আরেকটু উপরে খেলার দাবি রাখেন। বাইশ গজে তাঁকেও আরেকটু বেশি সময় দেয়া উচিৎ।

ফলে সবমিলিয়ে বাংলাদেশ দল ও মুশফিকুর রহিমের নিজের জন্য হলেও ফর্মে ফেরা খুব জরুরি। অন্তত ক্যারিয়ারের এই সময়ে এসে টেস্ট ক্রিকেটে মুশফিক বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ভরসা হয়ে উঠার কথা। এখন ইদের পরপর নিজের প্রিয় কোচকে নিয়ে এই বদ্ধ দুয়ার অনুশীলন যদি মুশফিককে ফর্মে ফিরিয়ে আনে তাহলে তাই হোক।

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link