এ সংসার টেকার নয়

২০১৫ সালে মুস্তাফিজুর রহমানের অভিষেকের পর থেকে বাংলাদেশ মোট ৩৯টি টেস্ট খেলেছে। যার মধ্যে ১৪ টেস্ট ম্যাচে বাংলাদেশের হয়ে মাঠে নেমেছেন এই পেসার। ফলে টেস্ট ক্রিকেটের প্রতি এই পেসারের অনীহা একেবারেই স্পষ্ট। কিছুদিন পরেই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে যে টেস্ট সিরিজ সেখানেও থাকছেন না তিনি। অথচ একই সময়ে মুস্তাফিজ খেলবেন আইপিএলে এবং কোন বিতর্ক ছাড়াই।

ওদিকে এই আইপিএল খেলার জন্যই সাকিব আল হাসানকে প্রতিবছর কতই না বিতর্কের মুখে পড়তে হয়। তবে মুস্তাফিজের বেলায় যেন সেই আলোচনা একেবারেই মলিন। এর কারণ বোধহয় বাংলাদেশের হয়তো ঠিক কখনোই নিয়মিত টেস্ট ক্রিকেটটা খেলেননি মুস্তাফিজুর রহমান।

যদিও টেস্ট ক্রিকেটে মুস্তাফিজের শুরুটা দারুণ ছিল। তবে এরপর ইনজুরির কারণে বেশ কিছু ম্যাচ খেলতে পারেননি। ফলে একটা সময় বাহাতি এই পেসারকে ছাড়াই বোলিং আক্রমণ তৈরি করতে হয়েছে বাংলাদেশকে। মুস্তাফিজ অবশ্য ফিরে এসেছিলেন এরপর। তবে লাল বলের ক্রিকেটে সেভাবে কার্যকর হতে পারেননি।

যেমন গত তিন বছরে মুস্তাফিজ টেস্ট খেলেছেন মাত্র ২টি। সেখানে তাঁর ঝুলিতে আছে মাত্র ৩ উইকেট। এছাড়া সর্বশেষ ৬ টেস্টে তাঁর ঝুলিতে আছে মোটে ১০ উইকেট। ফলে রঙিন পোশাকের মুস্তাফিজ যতটা উজ্জ্বল, সাদা পোশাকের মুস্তাফিজ যেন ততটাই বিবর্ন হয়ে উঠেছিলেন।

এছাড়া তিনি নিজেও বিসিবিকে বারবার তাঁর টেস্ট খেলার অনিচ্ছার কথা জানিয়েছেন। এছাড়া বায়ো বাবলের কারণে পাঁচদিনের টেস্ট খেলাটাও নাকি তাঁর জন্য কঠিন হয়ে যায়। যদিও এখন আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বায়ো বাবল মানা হচ্ছেনা। যেমন দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজেও ক্রিকেটাররা কোন বাবলে ছিলেন না। সেখানে মুস্তাফিজও খেলেছেন। ফলে এবার শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ তিনি খেলতেই পারতেন।

তবে আইপিএলের ব্যস্ততা থাকায় তিনি টেস্ট সিরিজ খেলতে পারছেন না। ওদিকে তাসকিন আহমেদ ও শরিফুল ইসলামের ইনজুরির কারণে অনিশ্চিত থাকায় বিপাকে পড়েছে বাংলাদেশ দল। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ঘরের মাঠে তাই বাংলাদেশের বড় ভরসার নাম হতে পারতেন মুস্তাফিজ। বিসিবিও হয়তো সস্তির নিশ্বাস ফেলতে পারতো। তবে বিসিবি চাইলেও যে এখন এই পেসারকে পাবেনা। কেননা তারা অনেক আগেই মুস্তাফিজকে আইপিএলে খেলার অনুমতি দিয়ে রেখেছে।

ওদিকে সম্প্রতি মুস্তাফিজও একটি সাক্ষাতকারে জানিয়েছেন তিনি বেছে খেলতে চান। আর টেস্ট ক্রিকেটকেই এড়িয়ে যেতে চান তাঁর আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারকে লম্বা করার জন্য। মূলত রঙিন পোশাকের ক্রিকেটটাই তিনি খেলতে চান বলে জানিয়েছেন। এছাড়া এবছর টেস্ট চুক্তিতেও বিসিবি এই বাহাতি পেসারকে রাখেনি।

সবমিলিয়ে টেস্ট ক্রিকেট ও মুস্তাফিজ এই দুইটা ব্যাপারকে যেন কোন ভাবেই এক করা যাচ্ছেনা। এছাড়া বাংলাদেশের হয়ে তাঁর ফর্মটাও খুব ভালো কাটছিল না। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে তিন ম্যাচ খেলেও নিতে পারেননি কোন উইকেট। বাংলাদেশের হয়ে খেলা সর্বশেষ পাঁচ আন্তর্জাতিক ম্যাচে তাঁর ঝুলিতে উইকেট মাত্র একটি।

যদিও আইপিএলে একেবারে খারাপ করছেন না তিনি। গতবছরও আইপিএলের দারুণ সময় কাটিয়েছেন। এবারো দিল্লি ক্যাপিটালসের হয়ে ভালো ছন্দেই আছেন। গুজরাট টাইটেন্সের বিপক্ষে ম্যাচে মাত্র ২৩ রান দিয়ে তুলে নিয়েছিলেন তিন উইকেট। ফলে আইপিএলে তাঁর বোলিং নিয়েও বেশ আলোচনা হচ্ছে।

এখন শুধু টেস্ট ক্রিকেটের মুস্তাফিজকে নিয়েই কোন সিদ্ধান্তে আসা যাচ্ছেনা। কেননা এই ফরম্যাট আসলে মুস্তাফিজই কখনোই উপভোগ করেননি। এছাড়া এই সময়ে বিশ্বের অনেক ক্রিকেটারই তিন ফরম্যাটে খেলতে চান না। আবার বাংলাদেশের বোলিং লাইন আপেও আছে তাসকিন, শরিফুল, এবাদত, খালেদদের মত নাম। ফলে বাংলাদেশও আসলে টেস্ট ক্রিকেটে মুস্তাফিজকে খুব বেশি জরুরি মনে করছেনা। ফলে দুই পক্ষের কেউই যখন রাজি নন তাহলে আর এই সম্পর্ক টিকিয়ে রেখে লাভ কী?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link