প্রয়োজন বেশ প্রবল তাড়না। মানুষ তাঁর সামর্থ্যের সবটুকু উজাড় করেই তবে প্রয়োজন মেটাতে চায়। ঠিক তেমনই এক দৃষ্টান্ত যেন স্থাপন করল ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের দল দিল্লি ক্যাপিটালস। তড়িঘড়ি করে প্রাইভেট বিমানে চাপিয়ে উড়িয়ে নিয়ে গেল মুস্তাফিজুর রহমানকে।
আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছে চট্টগ্রামে। সেই ম্যাচে একাদশে ছিলেন না মুস্তাফিজ। সিরিজ নিশ্চিত জেনেই হয়ত মুস্তাফিজকে বিশ্রাম দেওয়া হয়েছিল। তবে একাদশে না থাকলেও দলের সাথেই চট্টগ্রামেই ছিলেন ‘কাটার মাস্টার’। সিরিজ শেষের সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেই তিনি সোজা ঢাকাগামী বিমানে চেপে বসেন।
ঢাকায় এসে ঠিকঠাক বিশ্রাম টুকু নেওয়ার হয়ত সময় পাননি মুস্তাফিজুর রহমান। কোন রকমে ব্যাগ গুছিয়ে তিনি প্রহর গুনেছেন সকালের আলো ফোটার। বৃষ্টিস্নাত সকালকে উপেক্ষা করে তিনি হাজির ঢাকা বিমানবন্দরে। কারণটা বেশ স্পষ্ট। তিনি রওনা হবেন ভারতের উদ্দেশ্যে। সেখানে যে তাঁর দল দিল্লি ক্যাপিটালস তাঁর অপেক্ষায়। তাইতো মুস্তাফিজকে উড়িয়ে নিতে চার্টার্ড বিমান ভাড়া করেছে ফ্রাঞ্চাইজিটি। সে বিমানে বসেই মুস্তাফিজ নিজের আইপিএল যাত্রা নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
তবে শুধুমাত্র মুস্তাফিজকে উড়িয়ে নিতে কেন এত আয়োজন? ক্লান্তিকে পাশ কাটিয়ে মুস্তাফিজ কেনই বা ছুটলেন ভারতের উদ্দেশ্যে। প্রথমত দিল্লি ক্যাপিটালসের প্রথম ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে ভারতের উত্তর প্রদেশের শহর লক্ষ্ণৌতে। ঢাকা থেকে সেখানে সরাসরি বিমান যোগাযোগ নেই। ট্রানজিটে বেশ খানিকটা সময় ব্যয় হবে ফিজের। তাতে ক্লান্তি ভর করতে পারে মুস্তাফিজের শরীরে।
অন্যদিকে, দিল্লি ক্যাপিটালসের প্রথম ম্যাচ শনিবার বাংলাদেশ সময় রাত আটটায়। সেই ম্যাচের একাদশে মুস্তাফিজের জায়গা পাওয়ার সম্ভাবনা বেশ প্রবল। যদিও পুরো টুর্নামেন্ট জুড়েই মুস্তাফিজ একাদশে সুযোগ পাবেন কিনা, তা নিয়ে রয়েছে সংশয়। দিল্লি দলে রয়েছেন দুই প্রোটিয়া পেসার এনরিখ নর্কিয়া ও লুঙ্গি এনগিডি।
এই দুইজন গতি দানবকে পেছনে ফেলে একাদশে মুস্তাফিজের নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করাটা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। তবে দিল্লির হয়ে প্রথম ম্যাচটা খেলা এক প্রকার নিশ্চিত মুস্তাফিজের। কেননা ওয়ানডে সুপার লিগের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ খেলতে ব্যস্ত দক্ষিণ আফ্রিকা। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে সেই সিরিজে দলে রয়েছেন নর্কিয়া ও এনগিডি। তাদের সার্ভিসটা এখনই পাচ্ছে না দিল্লি।
অন্যদিকে, প্রথম ম্যাচে একাদশে অন্তত একজন বিদেশি পেসার খেলানোর পরিকল্পনা দিল্লির টিম ম্যানেজমেন্টের। সে পরিকল্পনা থেকেই মুস্তাফিজকে শিবিরে যুক্ত করতে এত আয়োজন। তাছাড়া আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট দলে নেই মুস্তাফিজ। তাইতো মুস্তাফিজকে শুরু থেকেই পূর্ণ ব্যবহারটা করতে চেয়েছে টিম ম্যানেজমেন্ট।
তাছাড়া দলের অধিনায়কত্বের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ডেভিড ওয়ার্নারের উপর। অজি এই ব্যাটারের সাথে মুস্তাফিজের সম্পর্কটা বেশ গাঢ়। একজন অধিনায়ক হিসেবে মুস্তাফিজের উপর প্রচণ্ড ভরসা করেন ডেভিড ওয়ার্নার। এর আগে সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদে থাকাকালীন ওয়ার্নারের পরিকল্পনার সিংহভাগ জায়গাজুড়েই ছিলেন ফিজ।
মুস্তাফিজ আইপিএল খেলতে চলে গেলেও যেতে পারেননি আরও দুই বাংলাদেশি। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচের কারণে লিটন দাস ও সাকিব আল হাসান এখনই যোগ দিতে পারছেন না কলকাতা নাইট রাইডার্স ডেরায়। তাছাড়া পুরো সময় জুড়ে বাংলাদেশি খেলোয়াড়দের সার্ভিসটা পাবে না আইপিএল ফ্রাঞ্চাইজিগুলো। সেদিক থেকে কঠোর অবস্থানে যাওয়ার হুমকিও এসেছে তাদের পক্ষ থেকে।