তখন সবেমাত্র ক্রিকেটের অভিজাত সংস্করণ টেস্টে যাত্রা শুরু হয় বাংলাদেশের। ২০০০ সালের নভেম্বরে ঘরের মাঠে ভারতের বিপক্ষে অভিষেক টেস্ট খেলার পরবর্তী ৩ বছর মোট ২৪টি টেস্ট খেলে বাংলাদেশ। এই সময়টাতে দেশে-বিদেশে পাকিস্তান, নিউজিল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, দক্ষিণ আফ্রিকা, উইন্ডিজ এবং অস্ট্রেলিয়ার মত দলগুলোর বিপক্ষে সাদা পোশাকের ক্রিকেট খেলতে পারলেও তাদের মওকা মেলেনি এই সংস্করনের অন্যতম পরাশক্তি ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মাঠে নামার।
অতঃপর ২০০৩ সালে ঘরের মাঠে সে সুযোগ পায় মাহমুদবাহিনী। ২ টেস্ট ও ৩ ওয়ানডে খেলতে অক্টোবর মাসে ঢাকায় পা রাখে ইংল্যান্ড। ২ ম্যাচের টেস্ট সিরিজ শুরু হবার আগে ঢাকা ও সাভারে যথাক্রমে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) প্রেসিডেন্ট একাদশ এবং বাংলাদেশ ‘এ’ দলের বিপক্ষে ৩ দিনের দুটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেন তাঁরা। দুটি ম্যাচই ড্রয়ের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হয়।
প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচ ড্র করলেও বিসিবি প্রেসিডেন্ট একাদশের ব্যাটিংটা ছিল যাচ্ছেতাই। দ্বিতীয় প্রস্তুতি ম্যাচে ব্যাট হাতে খুব একটা ভালো করতে পারেনি বাংলাদেশ ‘এ’ দলও। বিকেএসপিতে সেই ম্যাচের প্রথম ইনিংসে তাঁরা করে ২৪২ রান যেখানে সবাইকে তাক লাগিয়ে মাত্র ১৮ বছর বয়সী এক তরুণ করে বসেন সেঞ্চুরি।
স্টিভ হার্মিসন, ম্যাথু হগার্ড ও অ্যাশলে জাইলসদের মত বোলারদের সামলিয়ে ১১৮ রানের একটি ইনিংস খেলা সেই ব্যাটসম্যানটির নাম নাফিস ইকবাল খান। ম্যাচে ২১২ মিনিট উইকেটে থেকে ১৬৮ বল মোকাবেলা করে ১৪টি চার ও ১টি ছয়ের সাহায্যে এই পরিণত ইনিংসটি খেলেন তিনি।
তবে সেঞ্চুরির চেয়ে একটি মন্তব্য করে সেদিন গণমাধ্যমে সবচেয়ে বেশি আলোচিত হন নাফিস। সেঞ্চুরি করার পর সংবাদ সম্মেলনে ইংলিশ স্পিনারদের ‘অর্ডিন্যারি’ হিসেবে আখ্যায়িত করে রীতিমত ব্রিটিশ গণমাধ্যমের প্রধান শিরোনামে পরিণত হয়ে যান তিনি। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছিলেন, ‘ইংল্যান্ডের পেসাররা খুব ভালো বল করলেও তাদের স্পিনাররা ছিল অর্ডিন্যারি। অ্যাশলে জাইলস একজন বিশ্বমানের বোলার এবং আমি আশা করেছিলাম তিনি এই ম্যাচে আরো বেশি কার্যকরী হবেন।’
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক না হওয়া মাত্র ১৮ বছর বয়সী একজন বাংলাদেশি ক্রিকেটারের মুখ থেকে এমন মন্তব্য তখনকার প্রেক্ষাপটে দুঃসাহসিকই ছিল বটে! নাফিসের এই মন্তব্যের পর একদল বিমূঢ় ব্রিটিশ গণমাধ্যম রীতিমত শূলে চড়িয়ে বসেন অ্যাশলে জাইলসকে। তবে নাফিসের কথাগুলো ইতিবাচক হিসেবেই গ্রহণ করেছিল নাকউঁচু ব্রিটিশ গণমাধ্যম।
চাচা আকরাম খান ছিলেন ক্রিকেটার, বাবা প্রয়াত ইকবাল খান ছিলেন একইসাথে ক্রিকেটার ও ফুটবলার। তাই ক্রিকেটের প্রতি নাফিস ইকবালের আগ্রহ থাকাটা ছিল স্বাভাবিক। বাল্যকালে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে চাচা আকরাম খানের নেতৃত্ব দেয়া দেখেই নাফিস ইকবালের মনে ক্রিকেটার হবার স্বপ্ন উকি দিয়ে ওঠে। তখন থেকেই লাল সবুজের জার্সি গায়ে ক্রিকেট খেলার, সাদা পোশাকের ক্রিকেটে ম্যাচ জেতা বা প্রতিপক্ষের বিপক্ষে কোন সিরিজ জেতার স্বপ্ন জেকে বসে তাঁর মাথায়। সেই স্বপ্ন একসময় বাস্তবে রূপায়িত হয়। বাবা-চাচার মত নাফিস ইকবাল নিজেও একসময় হয়ে যান ক্রিকেটার।
বয়সভিত্তিক সবগুলো দলের চৌকাঠ মাড়িয়ে তবেই জাতীয় দলের চৌহদ্দিতে প্রবেশ করেন নাফিস ইকবাল। খেলেছেন অনূর্ধ্ব-১৩, অনূর্ধ্ব-১৫, অনূর্ধ্ব-১৭ ও অনূর্ধ্ব-১৯ জাতীয় দলের হয়ে। ২০০১ সালে অধিনায়ক হিসেবে ঘরের মাঠে খেলেছেন অনূর্ধ্ব-১৭ এশিয়া কাপ। এশিয়া কাপ শুরু হওয়ার আগে পাকিস্তানে একটি টুর্নামেন্টে বেশ ভালো পারফর্ম করেছিলেন নাফিস।
তাই ঘরের মাঠে আয়োজিত এশিয়া কাপের মত একটি বড় টুর্নামেন্টে অধিনায়ক হিসেবে দলকে নিজের সেরাটা দেয়ার চাপটা ছিল নাফিসেরই ওপর। সেইসাথে পুরো টুর্নামেন্টটাই ছিল নাফিসের জন্য একটি পাহাড়সম চ্যালেঞ্জ। টুর্নামেন্ট শুরুর কয়েকদিন আগে নিজের বাবাকে হারান নাফিস।
তাই অনূর্ধ্ব-১৭ দলের ক্যাম্পে যোগ না দিয়ে বাড়ি ফিরে যেতে হয় তাকে। পরিবারের বড় ছেলে হিসেবে তখন নিজের মায়ের পাশে তাঁর থাকাটা যে বেশ জরুরি ছিল তা আর আলাদা করে বলার কিছু নেই। কিন্তু টুর্নামেন্ট শুরুর ২ দিন আগে সকল দুঃখ কষ্টকে বালিচাপা দিয়ে ঠিকই দলের সাথে যোগ দেন তিনি।
দেশের স্বার্থে তাঁর এই ত্যাগ পরবর্তীতে সুফল বয়ে আনে বাংলাদেশ দলের জন্য। ২০০১ অনূর্ধ্ব-১৭ এশিয়া কাপে নিজেদের ২য় ম্যাচেই সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেন অধিনায়ক নাফিস ইকবাল (১২৪)। পুরো টুর্নামেন্টে দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে ফাইনালে নিয়ে যান তিনি। তবে ফাইনাল ম্যাচে শক্তিশালি ভারতের বিপক্ষে কুলিয়ে উঠতে পারেননি তাঁরা।
অনূর্ধ্ব-১৭ এশিয়া কাপের ওই আসরের ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে ৬ উইকেটে হেরে রানার্স-আপ হয় বাংলাদেশ। সেইসাথে টুর্নামেন্ট শুরুর আগে পাওয়া অসহ্য শোককে পেছনে ফেলে অধিনায়ক হিসেবে বাংলাদেশ দলকে সাফল্যমন্ডিত করার যে চ্যালেঞ্জটা ছিল নাফিস ইকবালের সামনে সেটিও ভালোভাবে উতরে যান তিনি।
বাংলাদেশ যুব দলে খেলার সময়ই ভবিষ্যতে জাতীয় দলে খেলার সম্ভাবনার জানান দেন চট্টগ্রামের নাফিস ইকবাল। ২০০২ সালে অনূর্ধ্ব-১৯ দলে অভিষেক হয় তাঁর, তাও আবার বিশ্বকাপের মত বড় একটি টুর্নামেন্টে। আর বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ থেকেই অধিনায়কত্বের দায়িত্ব বর্তায় তাঁর ওপর।
তবে সেবার ব্যক্তিগত বা দলীয় সাফল্য কোনটাই মেলেনি নাফিসের। পুরো টুর্নামেন্টে ৭ ম্যাচ খেলে ২০.২ গড়ে তাঁর সংগ্রহ ছিল মাত্র ১০১ রান। গ্রুপ পর্বে কানাডার সাথে টাই ম্যাচের পর কেনিয়ার বিপক্ষে অপ্রত্যাশিতভাবে হারতেও হয় বাংলাদেশকে। ওই বিশ্বকাপে সামর্থ্য অনুযায়ী খেলতে পারেনি নাফিস ইকবাল ও তাঁর দল। পুরো ক্যারিয়ারে তখনই সবচেয়ে বাজে সময়ের মধ্য দিয়ে গিয়েছিলেন নাফিস।
প্রথম যুব বিশ্বকাপে কিছু করে দেখাতে না পারলেও ২০০৪ সালে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় যুব বিশ্বকাপে নিজের নামের প্রতি সুবিচার করতে ভুল করেননি তিনি। সেই টুর্নামেন্টের তৃতীয় সর্বোচ্চ এবং দলের মধ্যে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ছিলেন নাফিস। টুর্নামেন্টে ৮ ম্যাচে ৫০.৮৩ গড়ে তিনি করেছিলেন ৩৫০ রান। একই বছর ইংল্যান্ড যুব দলের বিপক্ষে তাদের মাটিতে সাড়ে পাঁচ ঘন্টা উইকেটে থেকে ২৬৬ রানের এক কাব্যিক ইনিংস খেলেন নাফিস ইকবাল। ততদিনে অবশ্য নিজের ক্রিকেট প্রতিভার পুরস্কারস্বরূপ লাল সবুজের জার্সি গায়ে জড়িয়ে ফেলেন তিনি।
বাংলাদেশ যুব দলে খেলার সময়ই জাতীয় দলে অভিষেক হয়ে যায় নাফিসের। ২০০৩ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ঘরের মাঠে ওয়ানডে সিরিজের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অঙ্গনে পা রাখেন তিনি। ওয়ানডের আগে অবশ্য টেস্ট অভিষেকটাই হয়ে যেতে পারত তাঁর। বাংলাদেশ ‘এ’ দলের হয়ে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচে খেলা ১১৬ রানের সেই ইনিংসটির জন্য তিনি ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট দলেও ডাক পেতে পারতেন।
কিন্তু, যুব এশিয়া কাপ খেলতে পাকিস্তান যাওয়ার কারণে তা আর হয়ে উঠেনি। তবে টেস্ট অভিষেকের জন্য খুব বেশিদিন অপেক্ষাও করতে হয় নি তাকে। ২০০৪ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তিনি প্রথমবারের মত সাদা পোশাকে মাঠে নামেন। অভিষেক ম্যাচের দ্বিতীয় ইনিংসে দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৪৯ রানও করেন তিনি।
টেস্ট ক্রিকেটে নাফিস ক্যারিয়ার সেরা ইনিংসটি খেলেন এর পরের সিরিজে যা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তাঁর সেরা একটি ইনিংস। ২ ম্যাচের সেই টেস্ট সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশের সামনে ৩৭৪ রানের একটি বড় লক্ষ্যমাত্রা ছুড়ে দেয় জিম্বাবুয়ে। টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার পর প্রথম কোন টেস্ট ম্যাচ হিসেবে এই সিরিজের প্রথম ম্যাচে জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ। সিরিজের প্রথম ম্যাচ জিতে বাংলাদেশ যখন প্রথমবারের মত কোন টেস্ট সিরিজ জেতার স্বপ্ন দেখছিলো তখন তা হাতছাড়ার শঙ্কা জাগে দ্বিতীয় ম্যাচে এসে।
সিরিজ জিততে হলে এই ম্যাচটি হয় জিততে হবে নয়ত ড্র করতে হবে বাংলাদেশকে। কিন্তু ৩৭৪ রানের একটি বিশাল লক্ষ্যমাত্রা তাড়া করে জয় পাওয়া মানে একপ্রকার বিশ্বরেকর্ড করে ফেলা যা তখনকার বাংলাদেশ দলের প্রেক্ষাপটে কল্পনা করাও ছিল দুরূহ ব্যাপার। অন্যদিকে ম্যাচটি ড্র করতে হলে তাদেরকে উইকেটে টিকে থাকতে হবে প্রায় সাড়ে ৫ সেশনের মত লম্বা সময় যা মোটেও সহজ ছিল না। আর সেই কঠিন কাজটিই বাংলাদেশ সহজে হাসিল করে নেয় নাফিস ইকবাল ও জাভেদ ওমরের ব্যাটিং দৃঢ়তায়।
৩৭৪ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে প্রথম উইকেট জুটিতে এই দুইজন ৮৩ ওভার ব্যাটিং করে যোগ করেন ১৩৩ রান। তাতেই ম্যাচের ভাগ্য অনেকটা ঝুলে পড়ে ড্রয়ের দিকে। জাভেদ ওমর ৩৪০ মিনিট উইকেটে কাটিয়ে দিয়ে ২৫৮ বলে ৪৩ রান করে ফিরে যাবার পর প্রতিরোধ গড়ে তুলেন নাফিস ইকবাল ও রাজিন সালেহ। পরবর্তীতে ম্যাচ ড্রয়ের বাকি কাজগুলো তাঁরাই সম্পন্ন করে মাঠ ছাড়েন।
এরই মধ্যে নাফিস পেয়ে যান ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি। ব্যাট হাতে ৪৭০ মিনিট উইকেটে থেকে ৩৫৫টি বল মোকাবেলায় তিনি করেন ১২১ রান। তাঁর এই ধৈর্য্যশীল ইনিংসটির জন্যই মূলত ম্যাচটি ড্র করতে সক্ষম হয় বাংলাদেশ। এই ড্র এবং আগের ম্যাচে জয়ের সুবাদে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজটি জিতে যায় বাংলাদেশ যা তাদের ক্রিকেট ইতিহাসে প্রথম কোন টেস্ট সিরিজ জয়।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ারে নাফিস ইকবাল খেলেছেন ১১টি টেস্ট। সেখানে ২৩.৫৪ গড়ে তাঁর সংগ্রহ ৫১৮ রান এবং ওয়ানডেতে ১৬ ম্যাচে ১৯.৩১ গড়ে তিনি সংগ্রহ করেছেন ৩০৯ রান। তিনি সর্বশেষ ওয়ানডে খেলেন ২০০৫ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এবং সর্বশেষ টেস্ট ম্যাচটি খেলেন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২০০৬ সালে।
ক্যারিয়ারজুড়ে নির্ভরযোগ্য ওপেনার হিসেবেই জাতীয় দলে খেলে গেছেন নাফিস ইকবাল। ছিলেন খুব ধৈর্য্যশীল একজন ব্যাটসম্যান। বেশকিছু শটসও ছিল তাঁর আয়ত্ত্বে। তখন তাঁর মত একজন স্ট্রোকমেকিং ব্যাটসম্যান খুব বেশি একটা ছিল না জাতীয় দলে। কিন্তু আক্ষেপের ব্যাপার হলো অমিত প্রতিভাবান এই ক্রিকেটার মাত্র ২০ বছর বয়সে জাতীয় দল থেকে বাদ পড়ার পর আর দলে ফিরতে পারেননি।
সে এক ট্র্যাজিক ঘটনা। ২০০৭ সালে মিরপুরে ঐচ্ছিক অনুশীলনে একদিন উপস্থিত নাফিস ইকবাল। সেসময় নেটে অনুশীলন করছিলেন তাঁরই ছোট ভাই তামিম ইকবাল। তখন ছোট ভাইয়ের অনুশীলন বেশ উপভোগ করছিলেন নাফিস। আকস্মাৎ তামিমের করা এক শটে দ্রুত গতিতে বল এসে আঘাত হানে নাফিসের চোখের ঠিক ওপরে। এতে চোখের ওপরে হাড় ভেঙ্গে যায় তাঁর।
এই চোট সারিয়ে মাঠে ফিরে আসতে মাস দুয়েকের মত সময় লাগে নাফিসের। তবে মাঠে ফেরার কিছুদিনের মধ্যেই গোড়ালির ইনজুরিতে পড়ে যান তিনি। এই ইনজুরি থেকে সেরে উঠতে তাঁর সময় লাগে প্রায় দেড় বছর। ততদিনে ফিটনেস হারানোর পাশাপাশি আত্মবিশ্বাসেও বড় ধরনের চিড় ধরে যায় তাঁর।
২০০৬ সালের পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আর খেলা না হলেও ঘরোয়া ক্রিকেটে দাপটের সাথে খেলে গেছেন নাফিস ইকবাল। বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৩ দলের হয়ে খেলা শেষ পর পরই ১৯৯৯ সালের ১৬ নভেম্বর জাতীয় লিগে মাত্র ১৪ বছর বয়সে অভিষেক হয় তাঁর। আর অভিষেক ম্যাচেই অসাধারণ ব্যাটিং নৈপুণ্যে তিনি সেঞ্চুরি করে বসেন।
২৭৯ বলে তাঁর ১২৬ রানের সেই ইনিংসটি সাজানো ছিল ১৩টি চার ও ১টি ছয়ে। তখন অবশ্য জাতীয় লিগ প্রথম শ্রেণির মর্যাদা পায়নি। তাই রেকর্ড বইয়ে ঠাই পায়নি নাফিসের এই ইনিংসটি। তবে পরের বছরই প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অনুষ্ঠানিক অভিষেক হয় তাঁর যেখানে অভিষেক ম্যাচে একটি ইনিংসে ব্যাট করার সুযোগ পাওয়া নাফিস করেছিলেন ৭৫ রান।
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে নিজ বিভাগ চট্টগ্রামের জার্সিতে অভিষেক হয় নাফিস ইকবালের এবং চট্টগ্রামের হয়েই ক্যারিয়ারজুড়ে খেলে গেছেন তিনি। ৩১টি হাফসেঞ্চুরি ও ১০টি সেঞ্চুরিতে ১২০ ম্যাচ খেলে ২৯.৯৬ গড়ে সেখানে তাঁর সংগ্রহ ৬২০২ রান। দেশের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ৭ম ক্রিকেটার হিসেবে ৬ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করা ব্যাটসম্যানও তিনি। আর লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে ১০৮ ম্যাচে খেলে ২৭.৩১ গড়ে তিনি করেছেন ২৭০৪ রান যেখানে ২১ টি হাফসেঞ্চুরি ও ২টি সেঞ্চুরি রয়েছে তাঁর।
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটটা বরাবরই ভীষণ অপছন্দ নাফিসের। তাই বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) গত আসরে নিজের নামই দেননি তিনি। তবে বিপিএলে খুলনা টাইটান্সের ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এর মাধ্যমে ভবিষ্যতে ক্রিকেট প্রশাসনের সাথে জড়িত হওয়ার একটা ইঙ্গিতই বোধহয় দিয়ে দিয়েছেন তিনি। নিজের ব্যবসা-বানিজ্য আছে, কাজ করেছেন ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগেও (আইপিএল)।
নাফিস ইকবালের ছোট ভাই তামিম ইকবাল খান লাল সবুজের প্রতিনিধি হয়ে এখন বিশ্ব ক্রিকেটে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। তামিম ইকবাল বর্তমান বাংলাদেশ দলের সেরা ওপেনার এবং দেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা ব্যাটসম্যানদের একজন। অবশ্যই খান পরিবারে তিনিই সবচেয়ে প্রতিভাবান ক্রিকেটার।
নাফিস ইকবাল তাই এখনকার অনেকের কাছে পরিচিত তামিমের বড় ভাই হিসেবে। অথচ সম্ভাবনাময় ক্রিকেট ক্যারিয়ারটা যদি আরো দীর্ঘয়িত করতে পারতেন নাফিস তাহলে আজ হয়ত তামিম ইকবালকেই অনেকে চিনতেন নাফিস ইকবালের ছোট ভাই হিসেবে।