চার অজি বোলার = একটি প্রশ্ন

মিশেল স্টার্ক, জশ হ্যাজেলউড, অ্যাডাম জ্যাম্পা, অ্যাশটন অ্যাগার। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বাংলাদেশ সিরিজ জিততে পারবে কিনা, এই প্রশ্নের উত্তর সম্ভবত লুকিয়ে এখানেই। এই বোলারদের কতটা সামলাতে পারবে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা।

মিশেল স্টার্ক, জশ হ্যাজেলউড, অ্যাডাম জ্যাম্পা, অ্যাশটন অ্যাগার। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বাংলাদেশ সিরিজ জিততে পারবে কিনা, এই প্রশ্নের উত্তর সম্ভবত লুকিয়ে এখানেই। এই বোলারদের কতটা সামলাতে পারবে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা।

বাংলাদেশে আসা অস্ট্রেলিয়া দলটা খর্বশক্তির। তবে শক্তি কমার ধাক্কা লেগেছে মূলত ব্যাটিংয়ে। ওয়ার্নার-ফিঞ্চ-স্মিথ-ম্যাক্সি-স্টয়নিস নেই। বোলিংয়ে কেবল প্যাট কামিন্স ছাড়া মূল সবাই আছেন। কেন রিচার্ডসন ও জাই রিচার্ডসন যদিও নেই, তবে মূল আক্রমণের অন্যরা আছেন।

যথারীতি নতুন বল ও পুরনো, দুই সময়েই স্টার্ক হবেন মূল হুমকি। তাঁকে নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। এখানে আসার আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে যদিও টি-টোয়েন্টি সিরিজে একটি ম্যাচ ছাড়া অন্য ম্যাচগুলোয় ভালো করেননি।  লম্বা বিরতির পর তখন হয়তো মরচে ছাড়াতে একটু সময় লেগেছে। পরে ওয়ানডে সিরিজে আগুন বোলিং করেছেন। ৩ ম্যাচে ১১ উইকেট নিয়ে সিরিজ সেরা হয়ে বাংলাদেশে এসেছেন।

হ্যাজেলউড সীমিত ওভারের ক্রিকেটে কখনোই সেভাবে থিতু হতে পারেননি। কিংবা অস্ট্রেলিয়া তার থিতু হওয়ার প্রয়োজন দেখেনি, টানা খেলায়নি। মূলত টেস্টের জন্য তাকে জমিয়ে রেখেছে। তবে যখনই সুযোগ পেয়েছেন, খারাপ করেননি। ওয়েস্ট ইন্ডিজে টি-টোয়েন্টি সিরিজে ভালো শুরুর পর আর ভালো করতে পারেননি। তবে ওয়ানডেতে ছিলেন দুর্দান্ত।

এমনিতে মিরপুরের উইকেটে তার সুবিধা করতে পারার কথা নয়। এই উইকেটে গতি নেই, মুভমেন্ট নেই, বাউন্স নেই। তবে হেইজেলউডের স্কিলেরও তো কমতি নেই! সুইং করানোর ক্ষমতা তার সহজাত। উচ্চতার কারণে বাউন্স তিনি সব উইকেটেই কিছুটা আদায় করতে পারেন। বিশেষ করে, উইকেটে বল যদি গ্রিপ করে, স্টপ করে, হ্যাজেলউডের বাড়তি বাউন্স বিপদের কারণ হতে পারে। তিনি হুমকি হবেন মূলত নতুন বলে।

আমাদের এমনিতেই লিটন-তামিম-মুশফিক নেই। নতুন বলে স্টার্ক ও হেইজেলউড তিন-চার উইকেট তুলে নিলে বড় বিপদ হবে।

পেস আক্রমণে এছাড়া রাইলি মেরেডিথ আছেন। গতি অনেক, কিন্তু লাইন-লেংথ কিছুটা এলোমেলো। জেসন বেহরেনডর্ফ আছেন, উইকেটে সুইং-মুভমেন্ট না থাকলে বড় হুমকি হওয়ার কথা নয়। অ্যান্ড্রু টাই আছেন, স্লোয়ার-ইয়র্কার মিলিয়ে স্লগ ওভারে অনেক সময়ই দারুণ কার্যকর, তবে অধরাবাহিক। ওয়েস অ্যাগার সম্ভাবনাময়, কিন্তু একদমই অনভিজ্ঞ।

এছাড়া মিশেল মার্শ আছেন। মিরপুরের উইকেটে মোইজেস হেনরিকেস ও ড্যানিয়েল ক্রিস্টিয়ানের কাটারও তারা কাজে লাগাত চাইতে পারেন। এই মেরেডিথ-বেনরেনডর্থ-টাই-মার্শরা, ধারহীন নন অবশ্যই। তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এইটুকু তো সামলাতে হবেই! স্টার্ক-হেইজেলউডই গড়ে দিতে পারেন মূল পার্থক্য।

স্পিনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ অবশ্যই জ্যাম্পা। সীমিত ওভারের সত্যিকারের ক্লাস বোলার এখন। রান আটকানো, উইকেট শিকার, সবই করেন। তাঁর গুগলি দুর্দান্ত। ক্রিজের চতুর ব্যবহার করে অ্যাঙ্গেল বদলান ক্রমাগত। সঙ্গে অ্যাশটন অ্যাগার এখন অনেক পরিণত। একসময় খুব সাদামাটা স্পিনার ছিলেন। এখন স্কিল যেমন বেড়েছে, খুব বুদ্ধিদীপ্ত বোলিংও করেন। টি-টোয়েন্টিতে তার ৬ উইকেট আছে, ৫ উইকেট আছে, হ্যাটট্রিক আছে।

এই দুজনের জুটিও দারুণ, পরস্পরকে কমিপ্লিমেন্ট করেন। এছাড়াও স্পিনে অ্যাশটন টার্নার হাত ঘোরাবেন নিশ্চিত। স্কোয়াডে বিকল্প আছেন লেগ স্পিনার মিচেল সোয়েপসন। রিজার্ভ আছেন আরেক লেগ স্পিনার তানভির সাংঘা।

ব্যাটিংয়ে সেই অর্থে বড় নাম কিংবা প্রতিষ্ঠিত ম্যাচ উইনার নেই একজনও। তার মানে এই নয় যে ব্যাটিং তাদের একদম যাচ্ছেতাই। জশ ফিলিপি, অ্যাশটন টার্নার, বেন ম্যাকডারমট নিজেদের দিনে বেশ বিপজ্জনক। তবে বাস্তবতা হলো, এই কন্ডিশনে ও মন্থর উইকেটে তারা অনভিজ্ঞ এবং তাদের আটকে রাখা কঠিন হওয়ার কথা নয়। ব্যাটিংয়ের মূল দায়িত্বটা পালন করতে হবে মিচেল মার্শ, ম্যাথু ওয়েড, মোইজেস হেনরিকেস ও অ্যালেক্স কেয়ারিকে।

তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজে টি-টোয়েন্টি সিরিজে কেবল মার্শ ছাড়া তারা কেউ ভালো করেননি। শেষ ওয়ানডেতে ওয়েড ফিফটি করেছেন বটে। তবে টি-টোয়েন্টিতে তারা কেউ ছন্দে নেই। মিরপুরের উইকেটে ছন্দে ফেরাটা সহজ হওয়ার কথা নয়।

মার্শ অবশ্য তিন নম্বরে নতুন ভূমিকায় দারুণ ফর্মে আছেন। পরের দিকে ক্রিস্টিয়ান ঝড় তুলতে পারেন। তার পরও এই ব্যাটিং লাইন আপ বড় দুর্ভাবনা হওয়া উচিত নয়।

অস্ট্রেলিয়ার বোলিং কতটা সামলাতে পারবে বাংলাদেশ, সেটির ওপরই হয়তো নির্ভর করবে সিরিজের ভাগ্য। যেহেতু ৭ দিনে ৫ ম্যাচ, স্টার্ক-হেইজেলউড সব ম্যাচে খেলবেন না। এটাও কাজে লাগাতে হবে।

কয়েকদিন আগে যেটা লিখেছি, এটা বড় সুযোগ। নিজ আঙিনায় এমন অস্ট্রেলিয়াকে সবসময় পাওয়া যাবে না। সুযোগটি লুফে নাও, ভাইয়েরা আমার।

সংযুক্তি: ৭ দিনে ৫ ম্যাচ খেলতে হবে। যদিও টি-টোয়েন্টি, তার পরও ফিটনেসের বড় পরীক্ষা হবে। শারীরিক-মানসিক, সব দিক থেকেও। এই পরীক্ষায় পাশ করারও জরুরি।

– ফেসবুক থেকে

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...