ফিরবেন স্টোকস, নাকি এখানেই শেষ!

মানসিক বিপর্যয়ের জের ধরে এর আগে যারা বিরতি নিয়েছেন ক্রিকেট থেকে, তাঁদের কেউ আর পুরনো দিনের প্রতাপে ফিরতে পারেননি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে। কেউ কেউ ঘরোয়া ক্রিকেটে ফিরেছিলেন, কিন্তু আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিবেচিত হননি। তবে, বেন স্টোকস নি:সন্দেহে অন্য ধাতুর গড়া। তারপরও ফেরার রাস্তাটা সহজ হবে না তাঁর। তবে, এই মুহূর্তে ক্রিকেটের মাঠ নয়, মগজের বাইশ গজের রানিং বিটুইন দ্য উইকেটটাই ঠিক করে নিতে হবে এই গ্রেটকে।

ক্রিকেটারদের মানসিক স্বাস্থ্য আজকের দিনে খুবই আলোচিত এক ব্যাপার। মানসিক সমস্যায় এক গাদা ক্রিকেটারের ক্যারিয়ার সংক্ষিপ্ত হয়ে গেছে নানা সময়ে। আর কাকতালীয় ভাবে এখানে ইংলিশ ক্রিকেটারের সংখ্যাই বেশি।

জনি বেয়ারস্টোর বাবা ডেভিড বেয়ারস্টো তো মানসিক অবসাদে ভুগে আত্মহত্যাই করে বসেন। আধুনিক কালে এসে মার্কাস ট্রেসকোথিক, জোনাথন ট্রট, অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফ কিংবা নারী ক্রিকেটার সারা টেলর – এক গাদা ইংলিশ তারকাকে দেখা গেছে মানসিক অবসাদে আগাম বিদায় বলে দিতে।

এবার সদ্যই সেই তালিকায় এমন একটি নাম যোগ হয়েছে যেটা শুনলে রীতিমত আকাশ থেকে পড়বেন। তিনি হলেন ইংল্যান্ডকে বিশ্বকাপ ও অ্যাশেজ জেতানো নায়ক বেন স্টোকস। অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্রিকেট থেকে বিরতি নিয়েছেন তিনি। ভারতের বিপক্ষে আসছে টেস্ট সিরিজে তো তাঁকে দেখা যাবেই না, কবে দেখা যাবে সেটাও নিশ্চিত না। আদৌ তিনি আর ফিরবেন কি না সেই ব্যাপারে কিছুই খোলাসা করেনি ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি)।

সম্প্রতিই স্টোকস ফিরেছিলেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে। ফিরেই অধিনায়ক হিসেবে পাকিস্তানের বিপক্ষে দ্বিতীয় সারির একটা দল নিয়ে জিতেন ৩-০ ব্যবধানে। টি-টোয়েন্টি সিরিজে ছিলেন বিশ্রামে। তখন কে জানতো, মনের মধ্যে এতটা অন্ধকার জমে গেছে ৩০ বছর বয়সী এই কিউই বংশদ্ভুত। হ্যাঁ, এটা ঠিক যে বিশ্বকাপ ও অ্যাশেজের পর থেকেই বাবার অসুস্থতাজনিত কারণে মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন তিনি।

আপাতত পরিবারের সাথে সময় কাটিয়েই মনের ভাঙা অংশগুলো জোড়া লাগাতে চান স্টোকস। সেটা যত দ্রুত হয়, ততই মঙ্গল ইংলিশ ক্রিকেটের। তাঁর জায়গায় ভারতের বিপক্ষে দলে এসেছেন সমারসেটের ক্রেইগ ওভারটন। ইসিবি বেন স্টোকসের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। স্টোকসকে এই বিরতির সময়ে কোনোরকম সাহায্য-সহযোগীতা করতেও প্রস্তুত তারা।

ইসিবির পুরুষ ক্রিকেট বিষয়ক ব্যবস্থাপনা পরিচালক অ্যাশলে জাইলস বলেছেন, ‘বেন আমাদের কাছে নিজের সব কিছু খুলে বলেছে। এই বলতে পারার জন্য যথেষ্ট সাহস দরকার। আমরা অবশ্যই সবার আগে চাই আমাদের একজন সদস্য যেন নিজের মানসিক স্বাস্থ্যের ভারসাম্য ফিরে পান। একজন ক্রীড়াবিদের জন্য যেমন পরিবেশ দরকার সেটা এই মহামারীর সময়ে আমাদের পক্ষেও সব সময় দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।  গেল ১৬ টা মাস ধরে তাঁদের পরিবার থেকে বড় সময়ের জন্য দূরে থাকতে হচ্ছে, আগের মত চলাচলের স্বাধীনতা পাচ্ছেন তা তাঁরা। এটা খুব চ্যালেঞ্জিং। মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি হতে এটা বড় একটা কারণ। বেনের নিজেকে ফিরে পেতে যত সময় প্রয়োজন সেটা আমরা দিতে প্রস্তুত। আশা করবো, দ্রুতই ও আবারো ফিরে এসে ইংল্যান্ডের হয়ে খেলবে।’

মানসিক বিপর্যয়ের জের ধরে এর আগে যারা বিরতি নিয়েছেন ক্রিকেট থেকে, তাঁদের কেউ আর পুরনো দিনের প্রতাপে ফিরতে পারেননি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে। কেউ কেউ ঘরোয়া ক্রিকেটে ফিরেছিলেন, কিন্তু আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিবেচিত হননি। তবে, বেন স্টোকস নি:সন্দেহে অন্য ধাতুর গড়া। তারপরও ফেরার রাস্তাটা সহজ হবে না তাঁর। তবে, এই মুহূর্তে ক্রিকেটের মাঠ নয়, মগজের বাইশ গজের রানিং বিটুইন দ্য উইকেটটাই ঠিক করে নিতে হবে এই গ্রেটকে।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...