মাশরাফি ২.০

বয়সটা এখন প্রায় ৪০ ছুঁই ছুঁই। অনেক কাটাছেড়া হওয়া ওই শরীরটাও এখন আর আগের মত সায় দেয় না। ভারতে গিয়ে পায়ে অস্ত্রপাচার করার কথা ছিল। তবে তিনি আরেকবার মাঠে নামা থেকে নিজেকে বিরত রাখতে পারলেন না। ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে মাঠে নামবেন বলে ঠিক করলেন। আরেকবার অধিনায়ক হয়ে, হয়তো মাশরাফি বিন মুর্তজা তাঁর ক্যারিয়ারে এই শেষ বার অধিনায়ক হয়ে।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নেই অনেকদিন। লাল-সবুজ জার্সি পরে তাঁর আর  ফেরার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। ঘরোয়া ক্রিকেট থেকেও দূরেই চলে গিয়েছিলেন। তবে এই বছর বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) দিয়ে আবার মাঠে ফিরেছেন। প্রিমিয়ার লিগে অধিনায়কত্ব করছেন। এখনো বল হাতে প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানদের ঘায়েল করার সূত্র তাঁর জানা আছে। তবে এটাও সত্য যে আগের সেই নড়াই এক্সপ্রেস আর নেই। সময় সেসব কেড়ে নিয়েছে অনেক আগেই।

মাশরাফি তাঁর ক্যারিয়ারের একেবারে শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে। ক্রিকেটের সাথে নিজেঁকে এখন আর খুব একটা জড়িয়েও রাখেন না। তবুও অধিনায়ক মাশরাফি এখনো একটা রহস্যে ঘেরা জাল, এখনো একটা নস্টালজিয়া।

হয়তো তাঁর ক্যারিয়ারের এক নতুন শুরুও বলা যায়। এখন আর লিগের বড় বড় দল গুলো তাঁকে নেয়ার আগ্রহ দেখায় না। একটা সময় তিনি মাঠে নামা মানে পুরো আলোটা তাঁর উপরই পড়া চাই। তাঁকে ঘিরে ক্রিকেটার, সাংবাদিকদের একটা জটলা হওয়া চাই। সেগুলোও এখন অনেকটা ইতিহাসই। শেষবেলায় নিজের মত করে ক্রিকেটটা খেলে যাচ্ছেন, অধিনায়কত্ব করে যাচ্ছেন। এ যেন নতুন এক মাশরাফি – ‘মাশরাফি ২.০’ অধ্যায়টা যেন আমাদের সবার অগোচরেই চলছে দিব্যি।

লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জকে মাশরাফি একটা সুতোয় গেঁথে ফেলেছেন। অধিনায়ক ম্যাশের রূপকথা এখনো শোনা যায় ক্রিকেট পাড়ায়। তবে মাঠের ক্রিকেটে, বল হাতে ছিলেন একেবারেই মলিন। বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সফলতম পেসার মাশরাফি যেন আরেকজন সাধারণ কোন পেসারের মতই। সময়, বয়স এতোটাই নিষ্ঠুর। বারবার আমাদের মনে করিয়ে দেয়, তারাদেরও একদিন ঝড়ে যেতে হয়।

তবুও দূর আকাশের তাঁরা তো। সুযোগ পেলেই মিটমিট করে জ্বলে উঠেন। নিজের উপস্থিতি জানান দিতে চান। আমাদের মত নিতান্তই ভক্তরা কোন এক পাহারের চূড়ায় বসে আকাশে ভাসতে থাকা সেই তারাকে ছুঁয়ে ফেলতে চাই। কিন্তু তাঁকে ছোয়া যায় না, তিনি ও দূর আকাশেই শোভা পান।

এই যেমন সেদিনই খেলাঘরের বিপক্ষে সেই চেনা মাশরাফি। মাত্র ৩৮ রান দিয়েই তুলে নিয়েছেন চার উইকেট। এক ওভারেই পেয়েছেন তিন উইকেট। হয়েছেন ম্যান অব দ্য ম্যাচও। তবে এসবকিছু ছাপিয়ে মাশরাফি একটা মোহ রেখে যাচ্ছেন। যেই মোহ কাটিয়ে উঠতে হয়তো একটা অন্ততকাল কেটে যাবে।

এই কত উইকেট কিংবা কত রানের হিসেব আসলে খুব একটা ভাবায় না। কেননা এই ম্যাচগুলোই আসলে একটা বিদায়ের ধ্বনি বাজিয়ে চলছে। মাশরাফির শেষবেলায়, শেষ স্মৃতিগুলোর মত। এগুলোই তো শেষ কিছু ম্যাচ, শেষ কিছু মুহূর্ত। যেন শেষ বেলায় আরো বেশি মায়াটা বাড়িয়ে দিয়েই যাচ্ছেন দেশের ক্রিকেটের মহা নায়ক। তিনি এক সময় সব রকম ক্রিকেটই ছাড়বেন, তখন টিকে থাকবে সেই মায়াটাই কেবল।

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link