বিদঘুটে ওটামেন্ডি কাণ্ড!

দ্য সান উইল রাইজ টুমরো – লিওনেল স্ক্যালোনির এই কথাকে সত্য প্রমাণ করে আর্জেন্টিনার আকাশে ঠিকই সূর্য উঠেছে। তিন যুগের প্রতীক্ষা শেষে বিশ্বসেরার তকমা লেগেছে আর্জেন্টিনার গায়ে আর আকাশি-সাদা জার্সিতে যোগ হয়েছে নতুন তারকা। এমন বহুল আরাধ্য জয়ের পর ভক্ত-সমর্থকদের উদযাপন কোন বাঁধ মানার কথা নয়; মানছেও না। আর্জেন্টিনার প্রতিটি রাস্তাতেই চোখে পড়েছে তাদের উন্মাদনা।

শুধু ভক্ত নয়, আর্জেন্টিনার ফুটবলাররাও এমন স্বপ্নীল সময় উদযাপনে কোন কার্পণ্য করছেন না। খোলা বাসের প্যারেড থেকে শুরু করে নাচ, গানে মজে আছেন তাঁরা। আর এসব উদযাপনের খন্ডচিত্র বা ভিডিও প্রায়শই ইন্টারনেট বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সাহায্যে দেখা যাচ্ছে।

আলবিসেলেস্তাদের ট্রফি নিয়ে আনন্দ উল্লাসের ছবিগুলোতে অবশ্য অ্যালকোহলীয় পানীয়ের ব্যাপক উপস্থিতি রয়েছে। স্বয়ং লিওনেল মেসিকেও দেখা গিয়েছে বিয়ার পান করতে। তবে সবকিছু ছাড়িয়ে আলাদাভাবে নজরে পড়েছেন নিকোলাস ওটামেন্ডি। বাস প্যারেড চলাকালে একটি জয়েন্ট তৈরি করতে দেখা গিয়েছে তাঁকে।

আর্জেন্টিনার মধ্য মাঠের কাণ্ডারি রদ্রিগো ডি পল বাস প্যারেডের একটি ছবি ভক্তদের সাথে ভাগাভাগি করেছিলেন ইনস্টাগ্রামে। আর সেখানেই চোখে পড়ে ওটামেন্ডির জয়েন্ট তৈরির দৃশ্য। ইতোমধ্যে এই বিষয় নিয়ে নেট দুনিয়ায় শুরু হয়েছে ব্যাপক জল্পনা-কল্পনা। যদিও অভিজ্ঞ এই ডিফেন্ডার হয়তো ধূমপান করছেন সেই সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায় না; তবে বেশিরভাগ লোক মনে করছেন যে তিনি জয়েন্ট তৈরি করছিলেন।

মজার ব্যাপার যে, সতীর্থকে নিয়ে এমন নেতিবাচক আলোচনার পরেও ইনস্টাগ্রাম আইডি থেকে ছবিটি সরিয়ে নেননি রদ্রিগো ডি পল। এমনকি টুইটারেও ওটামেন্ডিকে নিয়ে শুরু হয়েছিল আলোচনার ঝড়, কিন্তু ডি পল বা ওটামেন্ডি দুজনের কেউই কোন ব্যবস্থা নেননি।

এর আগে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল আর্জেন্টিনার গোলরকক্ষক এমিলিয়ানো মার্টিনেজের উদ্ভট সেলিব্রেশন। এছাড়া কিলিয়ান এমবাপ্পের পুতুল হাতে নিয়ে ব্যঙ্গ করায় ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন তিনি। আর এবার তাঁর আরেক সতীর্থ নিকোলাস ওটামেন্ডিকে নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা প্রশ্ন তুলেছেন বেনফিকা তারকার সময় জ্ঞান নিয়ে।

অনেক সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারী আর্জেন্টাইন ডিফেন্ডারের এমন কর্মকাণ্ডকে তুলেছেন কাঠগড়ায়। সমালোচকরা ওটামেন্ডির এমন আচরণকে দায়িত্বজ্ঞানহীন বলে মনে করেছেন। এই ফুটবলারের হাতে থাকা বস্তুটি একটি জয়েন্ট বা তামাক যাই হোক, প্রায় সবারই সাধারণ সম্মতি ছিল যে তাঁর মোটেও এমন সময় এবং স্থানে এটি ব্যবহার করা উচিত হয়নি।

অবশ্য স্রোতের প্রতিকূলে হাঁটা মানুষের সংখ্যাও কম নয়। তাঁরা যুক্তি দিয়ে ওটামেন্ডিকে সমালোচনার হাত রক্ষা করতে উন্মুখ ছিলেন। তাঁরা মনে করে, বিশ্বকাপ জুড়ে এমন দুর্দান্ত পারফরম্যান্স উপহার দিয়েছে নিকোলাস ওটামেন্ডি। দারুণ একটি বিশ্বকাপ মিশন শেষে তাই এই ডিফেন্ডার যা চান সেটি তিনি করতে পারেন। সোনালী ট্রফি জয়ে অবদান রাখার মাধ্যমে সেটি করার অধিকার অর্জন করেছেন তিনি।

যদিও এমন যুক্তি নেহায়েৎ-ই শিশুতোষ। কেননা চমৎকার পারফরম্যান্স দিয়ে কখনোই ব্যক্তির বাজে আচরণকে বিচার করা যায় না। বিশ্বকাপ জয়ের পর সারা বিশ্বে বেড়েছে আর্জেন্টিনার জনপ্রিয়তা; সেই সাথে লিওনেল মেসি, ডি মারিয়াদের আরও বেশি অনুসরণ করতে শুরু করেছে বিশ্ববাসী। ফলে প্রায় সময়ই খেলোয়াড়দের আচরণ দ্বারা প্রভাবিত হয় শিশু ও কিশোররা।

বিশ্বের যেকোনো দেশে, যেকোনো পরিস্থিতিতেই তামাক বা জয়েন্টের মত পণ্যের ব্যবহারকে নিরুৎসাহিত করা হয়। অথচ বিখ্যাত হওয়া সত্ত্বেও নিকোলাস ওটামেন্ডি কি না জনবহুল স্থানেই করেছেন এমন কাজ। তাঁকে দেখে হয়তো নেশার পথ নিয়ে আরও আগ্রহ, কৌতূহল বাড়বে অল্প বয়সী ছেলেমেয়েদের। আপাতত তাই এমন ঘটনা দ্বিতীয়বার না ঘটার আশা করাই একমাত্র কাজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link