মাঠহীন নগরীতে বসে বিশ্বকাপের আকাশকুসুম স্বপ্ন…

আবার অনেক ক্ষেত্রে মাঠ আছে বা কোনভাবে খেলাধুলা করছে এমন তরুণদের সামনে কোন পথ খোলা নেই। ধরুন পাড়া গাঁয়ের একটি ছেলে ভাল খেলে। এখন সে কি করবে? কিভাবে সে প্রশিক্ষণ নিবে বা প্রফেশনাল হয়ে উঠবে? এক বিকেএসপি ছাড়া কোনো পথ আছে কি?

শেষ হয়ে গেছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। অনেকেই বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলকে নিয়ে অনেক আশা করেছিলেন। তাঁদের স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে।

পারফরমেন্সের কথা যদি বলি তাহলে বলতে হয় কয়েকটি ম্যাচ জেতা আর কিছু ম্যাচে প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তোলা ছাড়া তেমন কোন ইমপ্যাক্ট ফেলতে পারেনি। ২৪ বছর আগে টেস্ট স্ট্যাটাস অর্জন করা দেশটি প্রতিবার বিশ্বকাপে যায় এবং একই ধরনের পারফরমেন্স করে। ট্রফি জয় দূরে থাক সমীহ করার মতো কোন শক্তি হয়ে উঠতে পারেনি। এখন প্রশ্ন হলো কেন এমনটা হচ্ছে!

ভাল ফলাফলের জন্য যতই বিদেশি কোচ আনেন কিংবা জাতীয় দলের পেছনে কোটি কোটি টাকা ঢালেন না কেন অবস্থার কোন উন্নতি হবে না।

খেলাধূলায় ভাল করতে হলে দেশে খেলাধূলা করার মতো পরিবেশ-পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে হবে। যেখানে দেশের কোটি কোটি শিশু-কিশোরের খেলার জায়গা নেই, মাঠ নেই সেখানে ভাল খেলোয়াড় উঠে আসবে কি করে?

আবার অনেক ক্ষেত্রে মাঠ আছে বা কোনভাবে খেলাধুলা করছে এমন তরুণদের সামনে কোন পথ খোলা নেই। ধরুন পাড়া গাঁয়ের একটি ছেলে ভাল খেলে। এখন সে কি করবে? কিভাবে সে প্রশিক্ষণ নিবে বা প্রফেশনাল হয়ে উঠবে? এক বিকেএসপি ছাড়া কোনো পথ আছে কি?

স্কুল-কলেজ পর্যায়ের টুর্নামেন্টগুলো যথেষ্ট গুরুত্ব পায় না। সব স্কুলেই খেলাধূলায় আগ্রহী বাচ্চা আছে, অথচ ১০% স্কুলও টুর্নামেন্টে অংশ নেয় কিনা সন্দেহ আছে। আবার, টুর্নামেন্টগুলোও নিয়মিত হয় কিনা তাতেও আমার সন্দেহ হয়। কারণ আগে নির্মাণ স্কুল ক্রিকেটের মতো টুর্নামেন্টগুলোর কথা শুনতাম এখন পত্রিকায় সেসব খবর আসে না।

একটা দেশের জাতীয় লিগ হলো প্রতিভা তৈরির কারখানা। যে দেশের লিগ যত ভালো তাদের জাতীয় দলও তত ভালো করে। ক্রিকেটের জন্য ৪ দিনের খেলার লিগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ যেখানে খেলতে খেলতে খেলোয়াড়দের বেসিক গড়ে ওঠে। বাংলাদেশের লিগের কি অবস্থা? খেলাগুলো নিয়মিত হয় কিনা তাতেও সন্দেহ আছে।

তারপরে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হলো পেশাদারিত্ব। খেলাকে পেশা হিসেবে নেয়ার মতো পরিস্থিতি এখনো এদেশে গড়ে ওঠেনি। এখানে জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা লাখ লাখ, কোটি কোটি টাকা আয় করতে পারে কিন্তু বাকিরা পেট চালানোর জন্য বিকল্প আয়ের পথ খোঁজে। এখানে জাতীয় দলে ঢুকতে না পারলে একজন ক্রিকেটার ব্যর্থ হিসেবে চিহ্নিত হয়।

ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার কাউন্টি কিংবা ভারতের রঞ্জি ট্রফিকে যেভাবে যত্নের সাথে পরিচর্যা করা হয় তার ধারেকাছে কোন প্রকল্প বাংলাদেশে নেই। পুরো দেশ (সাংবাদিক, জনগণ ও বোর্ড কর্মকর্তা) শুধু জাতীয় দলের দিকে তাকিয়ে বসে থাকে।

সবশেষে বলব খেলাধূলার মূল উদ্দেশ্য হলো নির্মল আনন্দ। আমাদের শিশুরা, আমাদের তরুণরা আসলে মাঠে দৌড়ানোর আনন্দ থেকে বঞ্ছিত হচ্ছে। এদেরকে সোশ্যাল মিডিয়, ইউটিউবে আটকে রেখে আমরা শুধু জাতীয় দলের সাফল্য আশা করছি। যদি কোন সাফল্য আসেও তার আদৌ কোন মূল্য আছে কি?

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...