ব্যাট হাতে কী অবিশ্বাস্য একটা বছর কাটিয়েছেন। টেস্ট ক্রিকেটে নিজের প্রথম সেঞ্চুরিও তুলে নিলেন। রঙিন পোশাকে সময়টা ভালো যাচ্ছিল না। তবে তাঁর ছাপ পড়তে দেননি সাদা পোশাকের ক্রিকেটে। গতবছর ঠিক যেখানে শেষ করেছিলেন এবছর আবার ঠিক সেখান থেকেই শুরু করেছেন। টেস্টে লিটন কুমার দাস ব্যাট করতে নামা মানেই যেনো ব্যাট হাতে নতুন এক শিল্পকর্মের সৃষ্টি হওয়া।
লিটন যে শুধু রান করেন তা নয়। লিটনের ব্যাটিং প্রতিপক্ষকে তচনচ করে। তাঁর ব্যাটিং দেখে মুগ্ধ হয় গোটা ক্রিকেট দুনিয়া। ইয়ান বিশপ, হার্শা ভোগলেরা অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন। সবাই এক বাক্যে স্বীকার করেন লিটনের ব্যাটিং দেখা আর কোন শিল্পকর্ম দেখায় একইরকম চোখের শান্তি পাওয়া যায়।
এত এত রান, এত প্রশংসার পরেও কোথায় একটা আক্ষেপ থেকে গেল। কেননা ক্রিকেটের সর্বোচ্চ সংস্থা থেকে যে স্বীকৃতিটা এলো না। আইসিসি ২০২১ সালের বর্ষসেরা টেস্ট একাদশ ঘোষণা করেছে। তবে সেখানে দারুণ ফর্মে থাকা লিটনের জায়গা হয়নি। অথচ গতবছর উইকেট কিপার ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি গড়ে ব্যাটিং করেছেন লিটন।
তবুও কেন লিটন টেস্ট একাদশে জায়গা পেল না সেই প্রশ্ন তোলাই যায়। শুধু বাংলাদেশের হয়ে নয়, পুরো বিশ্বেরই তো সেরা কিপার ব্যাটসম্যান ছিলেন লিটন। তবে আইসিসির বর্ষসেরা টেস্ট একাদশে কিপার ব্যাটসমক্সান হিসেবে জায়গা পেয়েছেন ঋষাভ পান্ত। ভারতের এই কিপার ব্যাটসম্যানও পার করেছেন দারুণ সময়।
গতবছর কিপার ব্যাটসম্যানদের মধ্যে টেস্টে সবচেয়ে বেশি রান অবশ্য এসেছে তাঁর ব্যাট থেকেই। তবে ভারতের এই উইকেটরক্ষক ম্যাচও খেলেছেন বেশি। ২০২১ সালে তিনি মোট ১২ টি টেস্ট খেলেছন। সেখানে ৩৯.৩৬ গড়ে তাঁর ঝুলিতে আছে ৭৪৮ রান। গতবছর ব্যাট হাতে পান্ত সেঞ্চুরি করেছিলেন একটি। এছাড়া তাঁর ঝুলিতে আছে পাঁচটি হাফ সেঞ্চুরি।
ওদিকে লিটন ম্যাচ খেলেছিলেন মোটে ৭ টি। তবে এই সাত ম্যাচেই দারুণ সব ইনিংস খেলেছে ক্রিকেট দুনিয়ার নজর কেড়েছেন। কিপারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি গড়ে ব্যাটিং করেছেন। ফলে টেস্ট একাদশের জায়গা পাওয়ার জোর দাবিদার ছিলেন এই ব্যাটসম্যান। এছাড়া লিটন ব্যাটিং করেছেন বাংলাদেশের মন্থর উইকেটে। ফলে এখানে রান করা ছিল অনেক বেশি কঠিন।
সেই কঠিন কাজটা করার পরেও আইসিসির বর্ষসেরা টেস্ট একাদশে জায়গা না পাওয়ায় খানিকটা অবাক হওয়াই যায়। পান্ত যেখানে ব্যাটিং করেছেন ৩৯.৯৬ গড়ে লিটনের ব্যাটিং গড় প্রায় ৫০ ছুঁই ছুঁই। গতবছর বাংলাদেশের হয়ে মোট ৭ টেস্ট খেলে লিটন করেছেন ৫৯৪ রান। তাঁর ব্যাটিং গড় ছিল ৪৯.৫০। এছাড়া গতবছরই তুলে নিয়েছেন ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি। পাশাপাশি তাঁর ঝুলিতে আছে ৫ টি হাফ সেঞ্চুরিও।
ফলে একাদশ তৈরি করার সময় আইসিসিও নিশ্চয়ই বেশ দ্বিধার মধ্যেই ছিল। পান্ত ও লিটন দুজন কিপার ব্যাটসম্যানই দারুণ সময় কাটিয়েছেন। ফলে তাঁদের মধ্যে থেকে একজনকে বেঁছে নেয়াটা বেশ কঠিন কাজই। আর বর্ষসেরা টেস্ট একাদশে লিটনের জায়গা না পাওয়াটাও এক দুর্ভাগ্য বটে।