পুরো বাংলাদেশেই সেদিন আনন্দ মিছিল। বাংলাদেশ সেবার আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জিতে এসেছে। সেই আনন্দের ছোঁয়া লাগলো পুরান ঢাকার অলি গলিতেও। পুরো এলাকা রঙিন হয়ে উঠলো। সেই মিছিলে একটা ছোট্ট ছেলেও ছিল, মাজহার উদ্দিন অমি। মিছিল শেষে সবাই বাড়ি ফিরে গিয়েছিলেন। তবে সেদিনের ছোট্ট ছেলেটা সেই মিছিলে মিশে গিয়েছিলেন আজীবনের জন্য, ক্রিকেট নামের মিছিলে।
সেদিন থেকেই ক্রিকেট তাঁর স্বপ্ন, ধ্যান-জ্ঞান। ১৯৯৭ সালে পুরান ঢাকার অলিতে গলিতে ক্রিকেট খেলা ছেলেটা স্বপ্ন দেখে ফেললো বড় ক্রিকেটার হবার। বাবাও ছেলের স্বপ্নে ঠায় হয়ে দাঁড়ালেন। প্রাতাষ্ঠানিক ভাবে শুরু হলো মাজহার উদ্দিন অমির ক্রিকেট খেলা। এরপর বয়সভিত্তিকের নানা ধাপ পার করতে থাকেন খুব দ্রুতই।
২০০৩ সালে অনূর্ধ্ব ১৫ এশিয়া কাপ বসে দুবাইয়ে। সেই এশিয়া কাপে বাংলাদেশের নেতৃত্বে ছিলেন তিনিই। সেই দলে বাংলাদেশ ক্রিকেটের বড় তারকা মুশফিকুর রহিমও ছিলেন। সবমিলিয়ে ওই দলটার উপর বাড়তি নজর ছিল বাংলাদেশের। অমিদের সেই ব্যাচে যুক্ত হন সাকিব, তামিম, মুশফিকরা।
একে একে ক্রিকেটের নানা ধাপ পেড়িয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলেন তাঁরা। ২০০৬ সালে অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপেও স্বাভাবিক ভাবেই খেলার কথা ছিল তাঁর। যে বিশ্বকাপে সাকিব, তামিমরা খেলেছিলেন। ফলে সাকিব, তামিম, অমিদের নিয়ে গড়া সেই দলটা ছিল বাংলাদেশের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় যুব দল। ফলে প্রত্যেকের উপরই ছিল বিশেষ নজর।
তবে হঠাতই সেই ক্রিকেট মিছিলে আর খুঁজে পাওয়া যায় না মাজহার উদ্দিন অমিকে। এরপর অনেকটা সময় বাংলাদেশের ক্রিকেটে কোথাওই যেন আর তাঁর নাম আসে না। এমন একজন সম্ভাবনাময় ক্রিকেটার কোথায় হারিয়ে গেলেন? এমনকি ২০০৬ সালের সেই অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপটাও পরে আর খেলা হয়নি তাঁর।
মাজহার উদ্দিন অমি আসলে ছিটকে গিয়েছিলেন কাঁধের ইনজুরিতে। সেই ইনজুরি থেকে সেরে উঠতে তাঁর সময় লেগেছিল প্রায় দেড় বছর। এরপর অমি আবার ক্রিকেটে ফিরেছিলেন তবে আগের সেই ছন্দটা আর কখনো খুঁজে পাননি। এরপর ২০১১ সাল পর্যন্তও ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগ খেলেছেন। তবে সর্বোচ্চ পর্যায়ের ক্রিকেটে আর তাল মেলাতে পারছিলেন না।
সেই ইনজুরির পর আর কেন ক্রিকেটে ফেরা হলো না এমন প্রশ্নের উত্তরে অমি বলছিলেন, ‘ইনজুরিটা থেকে ফিরে আসতে আমার প্রায় দেড় বছর লেগেছিল। ওটা আমার একটা টার্নিং পয়েন্ট। ততদিনে আমার সাথের অনেকেই (সাকিব, তামিম, মুশফিক) আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে চলে এসেছে। আমি আর তখন আগের সেই ছন্দটা পাচ্ছিলাম না।’
সেই ইনজুরিটা না হলে হয়তো সাকিব, তামিম, মুশফিকদের আরেকজন বন্ধুকেও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দেখতে পেত বাংলাদেশ। মাজহার উদ্দিন অমি এরপর ব্যাট-বল তুলে রাখলেও, ক্রিকেটটাকে ছাড়তে পারেননি। কোচ হতে তিনি কখনোই চাইতেন না। তবে ক্রিকেটের সাথেই থাকতে চাইতেন।
সেজন্যই পরে তিনি চলে এসেছেন ক্রীড়া সাংবাদিকতায়। দেশের ইংরেজি দৈনিক পত্রিকা দ্য ডেইলি স্টারে কাজ করছেন তিনি। তবে তাঁর তো স্বপ্ন ছিল আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করা। বাইশ গজে না পারলেও অমি পরে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করেছেন কমেন্ট্রিবক্স থেকে। ২০১৭ সালে প্রথম কোন আন্তর্জাতিক ম্যাচে ধারাভাষ্য দেন তিনি।
এরপর থেকে নিয়মিতই ধারাভাষ্য দিয়ে যাচ্ছেন আন্তর্জাতিক ম্যাচ কিংবা বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের মত আসরগুলোতে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলা না হলেও অমির স্বপ্ন এখন কমেন্ট্রিবক্সকে ঘিরেই। তবে ক্রীড়া সাংবাদিকতাও বেশ উপভোগ করেন তিনি। ফলে দুটোই পাশাপাশি করে যেতে চান অমি। মাজহার উদ্দিন অমি হতে চান একজন কমেন্ট্রেটর যিনি কিনা লেজেন্ড জার্নালিস্ট। সেটাই হোক, মাজহার উদ্দিন অমির কণ্ঠ ছড়িয়ে পড়ুক ক্রিকেট দুনিয়ার আনাচে কানাচে।