বাবরের জন্য ভুবির পাতা ফাঁদ

ভুবনেশ্বর কখনোই খুব গতিশীল কিংবা আক্রমণাত্নক ঘরানার পেসার ছিলেন না। তিনি ছিলেন মেরুট ঘরানার পেসার যারা কিনা উইকেটের জন্য সাধারণত সুইং এর উপর নির্ভরশীল। হুট করেই কেন বাবর আজমের বিপক্ষে বদলে গেলেন এই পেসার?

এশিয়া কাপে চিরপ্রতিদ্বন্দী পাকিস্তানকে হারিয়ে বিশ্বকাপে হারের মধুর প্রতিশোধ নিল ভারত। প্রতিটা বড় ম্যাচেই তারকাদের মাঝে একে অন্যকে ছাড়িয়ে যাবার মধুর এক লড়াই দেখা যায়। এদিনের ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধে লাইমলাইট হার্দিক পান্ডিয়া টেনে নিলেও শুরুটা ছিলো ভুবনেশ্বরময়। তার দারুণ-নিয়ন্ত্রিত বোলিং এ অল্পতেই গুটিয়ে যায় পাকিস্তান। ম্যাচের শুরুতে বাবর আজমকে  আউট করে পাকিস্তানকে ব্যাকফুটে ঠেলে দেন এই পেসার।

ভুবনেশ্বর কুমার সাধারণত ঘণ্টায় ১৩০ কিলোমিটার আশেপাশে গতিতেই বল করে থাকেন। ক্রমাগত ফুল লেংথে বল করে বাতাসের সর্বোচ্চ সুবিধা কাজে লাগিয়ে দুইদিকেই সুইং করাতে তার জুড়ি মেলা ভার। তার বোলিং এর মূল শক্তিই হলো সুইং।

তার গেমপ্ল্যান মোটামুটি খুব  সাধারণ, টানা কয়েকটি আউটসুইং করানোর পর অফকাটার করবেন। কিন্তু পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচে দেখা যায় অন্য এক ভুবিকে, নিজের সহজাত দক্ষতার পাশাপাশি ট্যাকটিক্যালি দারুণ বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দেন। দারুণ এক বাউন্সারে ম্যাচের একদম শুরুতেই সাজঘরে ফেরত পাঠান বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান এবং পাক অধিনায়ক বাবর আজমকে।

ভুবনেশ্বর কখনোই খুব গতিশীল কিংবা আক্রমণাত্নক ঘরানার পেসার ছিলেন না। তিনি ছিলেন মেরুট ঘরানার পেসার যারা কিনা উইকেটের জন্য সাধারণত সুইং এর উপর নির্ভরশীল। হুট করেই কেন বাবর আজমের বিপক্ষে বদলে গেলেন এই পেসার?

এইখানেও মূলত কাজ করেছে ভুবির সুইং বোলার পরিচয়। বাবর ব্যাটিং স্টান্স নিয়েছিলেন সামনের পা’টা মাথার ঠিক বরাবর রেখে, যা কিনা সুইং বোলারদের বিপক্ষে কাট করার জন্য প্রচলিত এক তরিকা। ঠিক এইখানেই বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছেন ভুবনেশ্বর, বাবরের স্টান্স দেখেই একটু খাটো লেংথে বল করেন। ফলে বলের এয়ারটাইম আর সুইং দুটোই কমে যায়।

মহেন্দ্র সিং এই সময়টাতে শর্ট কিপিং করতেন, যেন ব্যাটসম্যান স্ট্যাম্পিং এর ভয়ে সামনে এগিয়ে খেলতে না পারেন। কিন্তু এই কাজটার একটা অসুবিধাও ছিল, বল করার সময় কিপার সামনে এগিয়ে এলে বেশিরভাগ পেসারই তাতে অপমানবোধ করেন। এটা মূলত বোলারের গতির দুর্বলতা প্রকাশ করে।

প্রচলিত আছে একবার কপিল দেব বল করার সময় অধিনায়ক সুনীল গাভাস্কার উইকেটরক্ষক কিরমানিকে উইকেটের আরো কাছে আসতে বলেন। এ ঘটনায় কপিল রেগে যান এবং কিরমানিকে ফেরত পাঠিয়ে আরো জোরে বল করতে শুরু করেন।  তাছাড়া এত সামনে এসে দাঁড়ালে বাই চার রান হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

পাকিস্থানের বিপক্ষে ম্যাচে অবশ্য দীনেশ কার্তিক শর্ট কিপিং করেননি। ভুবি নিজের পছন্দমতোই ফিল্ডিং সাজিয়েছিলেন, ত্রিশ গজের বাইরে ফিল্ডার রেখেছিলেন কেবল স্কয়ার লেগ আর থার্ডম্যানে। আর্শদ্বীপ সিংকে রেখেছিলেন শর্ট ফাইন লেগে। পরিসংখ্যান বলে বাবর পুল শটটা তেমন একটা ভালো খেলেন না, প্রায়ই এই শট খেলে আউট হতে দেখা যায় তাকে। তবে তাই বলে পুল শট বাবরের দুর্বলতা নয়।

পুরনো ক্রিকেটীয় প্রবাদ সত্য মানলে যে শট খেলে আপনি বেশি রান করবেন, সেই শটেই আপনার আউট হবার সম্ভাবনা বেশি। ভুবি লেগ সাইডে মাত্র একজন ফিল্ডার রেখে বাবরকে পুল খেলতে প্রলুব্ধ করেছেন আর বাবর সেই ফাঁদে পা দিয়েছেন। পাক অধিনায়ক অবশ্য ঠিক চেষ্টাই করেছেন। মাথার পজিশন ঠিক রেখে বলটাকে যথাসম্ভব নিচে রাখতে চেয়েছেন। কিন্তু তিনি ভুলে গিয়েছিলেন ভুবি এক্সপ্রেস পেসার নন, তার গতি অনেকটা মিডিয়াম পেসারের মতো।

টাইমিং এ গড়বড় হওয়ায় তাই বলের ঠিকানা হয়ে যায় আর্শদ্বীপের হাত। আরেকটা জায়গায় অবশ্য ভুল করেছিলেন বাবর, তিনি ভেবেছিলেন বলটা কোমর উচ্চতায় উঠবে। কিন্তু বলটা কাঁধ বরাবর উচ্চতা পেলে বেকায়দায় পড়ে যান বাবর। তার ব্যাট উপরের দিকে ঘুরে যায়, ফলে তার শটটি সহজ ক্যাচে পরিণত হয়।

প্রতিদিনই কেউ ভালো খেলে না। কখনো জেতেন ব্যাটসম্যানরা, আবার কখনো তাদের শূন্যতেই ফেরান বোলাররা। তবে বাবর-ভুবনেশ্বরের লড়াইয়ে প্রথম বিজয়ীর নাম ভুবনেশ্বর কুমার।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...