শেষযাত্রার ট্রেন ধরেছে একদিবসী ক্রিকেট

বিশ্বকাপ শুরুর এক মাস আগে প্রতিটি দলকে ৪-৫ টি প্রস্তুতিমূলক ওয়ানডে খেলার সুযোগ দেওয়া যেতে পারে, যাতে খেলোয়াড়রা ৫০ ওভারে ফরম্যাটে মানিয়ে নিতে পারে। বছরের পর বছর ধরে চলা নিষ্প্রাণ দ্বিপাক্ষিক সিরিজ আর টিকিয়ে রাখা উচিত নয়।

ওয়ানডে ক্রিকেট ধুকছে। অবস্থান করছে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে। লাইফ সাপোর্টে। তার ওপর চাপ কমাতে হবে। না হলে, ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে পিষ্ঠ হয়ে ওষ্ঠাগত প্রাণ উড়াল দেবে আকাশে।

হাতে সময় কম। কময় সময়টা কাজে লাগাতে হবে হিসাব করে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বর্তমান ক্যালেন্ডার ভারসাম্যহীন এবং দীর্ঘমেয়াদে টিকে থাকার মতো নয়। দ্বিপাক্ষিক ওয়ানডে সিরিজগুলো এখন প্রায় অপ্রাসঙ্গিক হয়ে গেছে।

এই ফরম্যাটে শুধু বিশ্বকাপই যথেষ্ট। বিশ্বকাপ শুরুর এক মাস আগে প্রতিটি দলকে ৪-৫ টি প্রস্তুতিমূলক ওয়ানডে খেলার সুযোগ দেওয়া যেতে পারে, যাতে খেলোয়াড়রা ৫০ ওভারে ফরম্যাটে মানিয়ে নিতে পারে। বছরের পর বছর ধরে চলা নিষ্প্রাণ দ্বিপাক্ষিক সিরিজ আর টিকিয়ে রাখা উচিত নয়।

এই কথাটা বলে দিলেন হেনরিখ ক্লাসেন, যিনি মাত্র ৩৩ বছর আগে ক’দিন আগে ‍হুট করেই বিদায় বলে দেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে। অমানবিক ক্রিকেট ক্যালেন্ডারের বলি।

সেই ক্লাসেন মনে করেন, অর্থহীন ওয়ানডের পরিবর্তে টেস্ট ম্যাচের পরিমাণ বাড়াতে হবে, বিশেষ করে যেসব দল টেস্ট খেলার সুযোগ কম পায় তাদের জন্য। পাশাপাশি টি-টোয়েন্টিকে আরও গুরুত্ব দিয়ে গড়ে তুলতে হবে। কারণ, দর্শকের আগ্রহ, বাণিজ্যিক সম্ভাবনা এবং বিনোদনের কেন্দ্রবিন্দু এখন এই ফরম্যাট।

আসল সংকট ফরম্যাট নয়, বরং খেলোয়াড়দের ব্যবস্থাপনায়। যারা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিয়মিত খেলে, তাদের জন্য টানা সব ফরম্যাট খেলা এবং ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগগুলোতে অংশ নেওয়া একসাথে আর সম্ভব নয়। এরকম ভার বহন করলে দ্রুতই ঝরে পড়ার শঙ্কা থাকে।

তামিম ইকবাল চাইলে তাঁর টেস্ট ক্যারিয়ার লম্বা করতে পারতেন আরও, যদি বাকি ফরম্যাটগুলো ছাড়তেন। ছাড়েনন তাই পারেননি। খেলোয়াড়দের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা বজায় রাখতে হলে আন্তর্জাতিক সূচিকে হালকা করতে হবে। ছাড় দিতে হবে খেলোয়াড়দেরও।

ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার মতো দলগুলো তাদের খেলোয়াড়দের ভালোভাবে দেখভাল করে, পর্যাপ্ত বিশ্রাম দেয়, আয় নিশ্চিত করে। ওয়ার্কলোড ম্যানেজমেন্টের গুরুত্ব ভারত বা নিউজিল্যান্ডও বোঝে- কিন্তু সব সময় পরিস্থিতির চাহিদা মেটাতে গিয়ে ‘ম্যানেজ’ করতে পারে না।

মোদ্দা কথা হল, অজি বা ইংলিশদের মত বাকি দেশগুলোরও একই পথে হাঁটতে হবে। খেলোয়াড় ধরে রাখতে হলে উপযুক্ত সম্মান ও প্রণোদনা দিতে হবে। না হলে তারা লিগভিত্তিক ক্রিকেটে ঝুঁকে পড়বে, আন্তর্জাতিক দলগুলো হয়ে যাবে দ্বিতীয় বিকল্প।

একইসাথে সব ফরম্যাট খেলা, সাথে ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট লিগে অংশ নেওয়া এখন আর বাস্তব ধারণা নয়। পৃথিবীর সব ক্রিকেটার বিরাট কোহলি হতে পারেন না। কিংবা বিরাট কোহলির মত সবাইকে শুধু একটা ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটই খেলতে হয় না।

খেলোয়াড়দের নিজের দক্ষতা আর গুরুত্ব অনুযায়ী ফরম্যাট বেছে নেওয়ার সুযোগ দিতে হবে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে টিকিয়ে রাখতে চাইলে এখনই কাঠামোগত পরিবর্তন দরকার। নয়তো সামনে ওয়ানডে ক্রিকেটকে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে শুধুই স্মৃতির সামনে।

লেখক পরিচিতি

সম্পাদক

Share via
Copy link