জয়াসুরিয়া-মহানামা ও অতিমানবীয় এক রানের পাহাড়

আর এক রান করতে পারলেই প্রথম শ্রেণির ইতিহাসেরও সর্বোচ্চ রানের জুটি হয়ে যেত। ১৯৪৬-৪৭ মৌসুমে বিজয় হাজারে ও গুল মাহমুদ মিলে করেছিলেন ৫৭৭ রানের জুটি। তবে, টেস্টে এর আগে টেস্টে কখনোই কোনো জুটি ৫০০’র ওপরে রান করতে পারেনি। জয়াসুরিয়া আর মহানামা মিলে ৬৩ বছরের পুরনো জুটি ভাঙেন (উইলিয়াম পোন্সফোর্ড ও ডন ব্র্যাডম্যানের ৪৫১)।

টেস্টের সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ আর সর্বোচ্চ রানের জুটি – দু’টোরই দেখা মিলেছিল একই দিনে। সময়টা ছিল ১৯৯৭ সালের আগস্ট। কলম্বোর আর. প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে সেই টেস্টে রীতিমত রানের বৃষ্টি হয়েছিল। ভারতের প্রথম ইনিংসে করা ৫৩৭/৮ রানের জবাবে শ্রীলঙ্কা ছয় উইকেট হারিয়ে করে ৯৫২ রান।

টেস্টের ইতিহাসে এক ইনিংসে কোনো দলই এর আগে এত রান তুলতে পারেনি। আগের রেকর্ডটা ছিল সেই ১৯৩৮ সালের। সেবার ওভালে ইংল্যান্ড করেছিল ৯০৩ রান।

  • কী হয়েছিল সেই ম্যাচে?

কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামের উইকেট বরাবরই রান প্রসবা। সেই ম্যাচেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। তবে, সেবার একটু বাড়াবাড়ি রকমের বেশি রান উঠেছিল।

টসে জিতে ব্যাট করতে নেমে ওপেনার নয়ন মঙ্গিয়া মাত্র সাত রান করেই ফিরে যান সাজঘরে। এরপরের চার ব্যাটসম্যানই বড় স্কোর গড়েন। নভজ্যোৎ সিং সিধু, রাহুল দ্রাবিড়, অধিনায়ক শচীন টেন্ডুলকার কিংবা আজহার উদ্দিন – সবাই সেঞ্চুরি করেন। সিধু ১১১, দ্রাবিড় ৬৯, শচীন ১৪৩ ও আজহার ১২৬ রান করেন।

জবাবে ব্যক্তিগত ২৬ রানে ওপেনার মারভান আতাপাত্তু সাজঘরে ফেরেন। দলীয় রান তখন ৩৯। এরপর দ্বিতীয় উইকেট যখন পরে তখন বোর্ডে জমা ৬১৫ রান। মানে, দ্বিতীয় উইকেটে সনাথ জয়াসুরিয়া আর রোশান মহানামা মিলে ৫৭৬ রান যোগ করে ফেলেছেন। টেস্টের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রানের জুটি।

আর এক রান করতে পারলেই প্রথম শ্রেণির ইতিহাসেরও সর্বোচ্চ রানের জুটি হয়ে যেত। ১৯৪৬-৪৭ মৌসুমে বিজয় হাজারে ও গুল মাহমুদ মিলে করেছিলেন ৫৭৭ রানের জুটি। তবে, টেস্টে এর আগে টেস্টে কখনোই কোনো জুটি ৫০০’র ওপরে রান করতে পারেনি। জয়াসুরিয়া আর মহানামা মিলে ৬৩ বছরের পুরনো জুটি ভাঙেন (উইলিয়াম পোন্সফোর্ড ও ডন ব্র্যাডম্যানের ৪৫১)।

এই ম্যাচে ক্যারিয়ারের একমাত্র ট্রিপল সেঞ্চুরি পান জয়াসুরিয়া। তিনি করেন ৩৪০ রান। ইনিংসে ছিল ৩৬ টি চার ও দু’টি ছক্কা। মহানামাও ডাবল সেঞ্চুরি (২২৫) করেন। মহানামাকে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলে জুটি ভাঙেন অনিল কুম্বলে।

এবারই প্রথমবারের মত কোনো জুটি টেস্টে টানা দু’দিন ব্যাট করেন। তৃতীয় ও চতুর্থদিন গোটা সময় উইকেটে ছিলেন জয়াসুরিয়া আর মহানামা। পঞ্চম দিনে গিয়ে জুটি ভাঙে।

এখানেই শেষ হয়ে গেলে রক্ষা ছিল, কিন্তু এরপর অরবিন্দ ডি সিলভা এসে করেন ১২৬ রান। এরপর অধিনায়ক অর্জুনা রানাতুঙ্গা ৮৬ ও মাহেলা জয়াবর্ধনে করেন ৬৬ রান। সব কিছু মিলিয়ে রেকর্ড সহজেই ভাঙতে সক্ষম হয় শ্রীলঙ্কা। তবে, ভারতের আর ব্যাটিং করার সুযোগ হয়নি।

ম্যাচ সেরা হন জয়াসুরিয়া। ৩৪০ রানের ইনিংস ছাড়াও ভারতের একমাত্র ইনিংসে তিন উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। বলাই বাহুল্য যে, ম্যাচটা ড্র হয়েছিল। নি:সন্দেহে বোলার আর ফিল্ডারদের জন্য এমন নির্মম টেস্ট ম্যাচ ক্রিকেটের ইতিহাসে আর আসেনি।

টেস্টের ইতিহাসের সেরা জুটি হিসেবে জয়াসুরিয়া ও মহানামার কীর্তি টিকেছিল টানা নয় বছর। ২০০৬ সালে সেই রেকর্ড ভাঙেনও দুই লঙ্কান – ‍কুমার সাঙ্গাকারা ও মাহেলা জয়াবর্ধনে। এবার প্রতিপক্ষ দক্ষিণ আফ্রিকা। তৃতীয় উইকেটে ৬২৪ রানের জুটি তাঁরা গড়েন কলম্বোরই আরেক মাঠ সিংহলিজ স্পোর্টস ক্লাবে। এরপরের ১৫ বছরেও সেই রেকর্ড কেউ ভাঙতে পারেনি।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...