যে কারণে অধিনায়কত্ব পাননি যুবরাজ

২০০৭ সাল। প্রথমবারের মত ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ততম ফরম্যাটে আয়োজন করেছিল বিশ্বকাপ। প্রথম বিশ্বকাপেই তরুণ অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনির হাত ধরে বাজিমাত করে টিম ইন্ডিয়া। জয় করে নেয় প্রথম টিটোয়েন্টি বিশ্বকাপ। তবে ট্রফি জয় ছাড়িয়ে সবার মন জয় করে নেয় লম্বা চুলের কাপ্তান ধোনির কাপ্তানি। ভারতীয় ক্রিকেটে শুরু হয় নতুন এক যুগ।

ধোনির অধিনায়কত্ব সবার মন জয় করলেও, তাঁর অধিনায়ক হওয়ার পিছনের গল্পটা ক্রিকেট বোদ্ধাদের অবাক করেছিল, অবাক করেছিল ভারতীয় দলের অনেক খেলোয়াড়কেও। ২০০৭ সালে ভারত দলে অনেক সিনিয়র খেলোয়াড় ছিলেন ভারতের নেতৃত্ব পাওয়ার দৌড়ে। কিন্তু কিছুটা আশ্চর্যজনকভাবেই অপেক্ষাকৃত অনভিজ্ঞ ধোনি’র নামই ঘোষণা করা হয়েছিল অধিনায়ক হিসেবে।

অধিনায়কত্ব নিয়ে এমন ঘটনায় অবাক হওয়া ক্রিকেটারদের মধ্যে একজন যুবরাজ সিং। সেসময় তিনি ছিলেন জাতীয় দলের সহ-অধিনায়ক এবং স্বাভাবিকভাবেই নেতৃত্বের দায়িত্ব যুবরাজের কাঁধেই আসার কথা ছিল। মঞ্চটা তাঁর জন্য প্রস্তুতই ছিল বলা যায়। কিন্তু, শেষ মুহূর্তে পাল্টে যায় পাশার দান।

যাই হোক, ভারতীয় ক্রিকেটের গত দশকের অন্যতম বড় নাম যুবরাজ সিং এবার ২০০৭ সালের অধিনায়কত্বের সেই আলোচিত ও সমালোচিত ঘটনা নিয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন ক্রিকেট বিশ্লেষক ও সাবেক ক্রিকেটার সঞ্জয় মাঞ্জরেকারের সঙ্গে। এতে করে অনেক ব্যাপারই খোলাসা হয়েছে।

সঞ্জয় মাঞ্জরেকারের সাথে দেয়া এই সাক্ষাৎকারে যুবরাজ ভারতের সাবেক কোচ গ্রেগ চ্যাপেল এবং দলের প্রবীণ সদস্য শচীন টেন্ডুলকারের মধ্যকার ঘটনা তুলে আনেন। যুবরাজ জানান, চ্যাপেলের কিছু সিদ্ধান্তের কারনে ভারত দলের অধিনায়ক হতে পারেননি তিনি। এমনকি এসবের ধারাবাহিকতায় সহ-অধিনায়কের দায়িত্ব থেকে তাকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে বলেও মনে করেন যুবি।

তিনি বলেন, ‘আমি অধিনায়ক হবো এমনটা অনুমিত ছিল। তারপর গ্রেগ চ্যাপেল আসেন, যা ঘটানোর তিনিই ঘটান। এরপর ‘চ্যাপেল বা শচীন’ এমন পরিস্থিতি হয়ে গেল। আমি সম্ভবত একমাত্র খেলোয়াড় ছিলাম যে সমর্থন করতাম শচীনকে। দেখুন, বরাবরই আমি আমার সতীর্থকে সমর্থন করি। এবং অনেক লোক ছিল বিশেষ করে বিসিসিআইয়ের কয়েকজন কর্মকর্তারা এটি পছন্দ করেননি। বলা হয়েছিল যে তারা অন্য যে কাউকে অধিনায়ক বানাবে কিন্তু আমাকে বানাতে রাজি নয়। এসব আমি শুনেছি।’

যুবরাজ সিং আরো খুব অবাক হয়েছিলে সেসময়, বিসিসিআইয়ের সিদ্ধান্তে। তিনি বলেন, ‘আমি নিশ্চিত নই এটা কতটা সত্য। সহ-অধিনায়কত্ব থেকে হঠাৎ করেই আমাকে সরিয়ে দেওয়া হয়। সে সময় দলেই ছিলেন না বীরেন্দ্র শেবাগ। আর তাই হুট করেই মাহিকে (এমএস ধোনি) ২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের অধিনায়ক করা হয়েছিলেন। তবে আমি ভেবেছিলাম আমি অধিনায়ক হতে যাচ্ছি।’

অধিনায়ক না হলেও, সেবারের বিশ্বকাপে দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন এই অলরাউন্ডার। ধোনির নেতৃত্বেই ২০০৭ সালের প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ব্যাট-বলে পারফর্ম করে দলকে শিরোপা জেতানোতে অবদান রেখেছিলেন তিনি। টুর্নামেন্ট সেরার পুরস্কারও উঠেছিল তার হাতে। এছাড়া ২০১১ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপে ঘরের মাঠে ভারতের ঐতিহাসিক বিশ্বজয়ের টুর্নামেন্টেও ধোনির নেতৃত্বে খেলেছিলেন যুবি। সেবারও সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়েছিল তিনি।

অবশ্য ধোনির হাতে নেতৃত্বের ব্যাটন তুলে দেয়ায় লাভ হয়েছে ভারতীয় ক্রিকেটের। তার ক্রিকেটীয় মেধার জোরে অসামান্য সব সাফল্য লাভ করেছে ভারত। ক্যাপ্টেন কুল খ্যাত ধোনির অধিনায়কত্বের সময় ছিল ভারতের অন্যতম গৌরবময় কার্যকাল। এসময় টিটোয়েন্টি এবং ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতা ছাড়াও টেস্টে নিজেদের শক্তিশালী দল হিসেবে গড়ে তুলেছিল ভারত।

যুবরাজ অবশ্য অধিনায়ক না হওয়া নিয়ে আক্ষেপ করেন না। তিনি অকপটেই বলে দিয়েছেন, আমি দলের সহ-অধিনায়ক ছিলাম যখন রাহুল দ্রাবিড় অধিনায়ক ছিলেন। তাই পরবর্তীতে আমারই অধিনায়ক হওয়ার কথা ছিল। স্পষ্টতই, এটি এমন একটি সিদ্ধান্ত যা আমার বিরুদ্ধে গিয়েছিল। তবে এটি নিয়ে আমার কোনও আক্ষেপ নেই’

অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনির দুর্দান্ত সব সাফল্যের ফলে হয়তো যুবরাজের অধিনায়ক না হওয়া নিয়ে কোন আক্ষেপ থাকবে না ভারতীয় ভক্ত,সমর্থকদের। যুবরাজের নিজেরও আক্ষেপ হয় না। তবু ব্যাটে বলে নিজ দেশকে প্রায় দুই দশক সেবা দিয়ে যাওয়া যুবরাজ অধিনায়ক হিসেবে কেমন করতেন তা নিয়ে একটু তো কৌতুহল হয় বটে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link