খসে যাওয়া নক্ষত্র

তিনি হয়ত ফুটবলের আকাশ থেকে পুরোপুরি খসে পরে যাননি। তবে লোক চক্ষুর আড়ালে চলে গেলেন ঠিকই। এই তারকাকে নি:সন্দেহে মিস করবে ইউরোপিয়ান ফুটবল। তিনি হয়তো তাঁর ধার বাড়িয়ে ফিরবেন আবার ইউরোপে। রদ্রিগেজ নামক তারকা আবার জলজল করবে ফুটবলের আকাশে। আবারো বিশ্বকাপে উরুগুয়ের বিপক্ষে করা ডি-বক্সের বাইরে থেকে করা ভলিতে মুগ্ধ হবে ফুটবল সমর্থকেরা। সম্ভাবনার মৃত্যু নেই, স্বপ্নের মৃত্যু নেই।

স্বপ্ন বিলীন হয় সময়ের স্রোতে, নক্ষত্রের পতন হয় তারই সাথে। ইউরোপিয় ফুটবলের স্বর্ণালি যাত্রার অবসান ঘটিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে পাড়ি জমালেন হামেস রদ্রিগেজ। ২০১৪ সালে ব্রাজিল বিশ্বকাপের গোল্ডেন বুট জেতা রদ্রিগেজ এবার খেলতে চলেছেন কাতারের ক্লাব আল রাইয়ানের হয়ে।

২০১৪ বিশ্বকাপ থেকে প্রাপ্ত তারকাদের সেরা একজন হামেস রদ্রিগেজ। তাঁর অনবদ্য নৈপূন্যে কলম্বিয়া বিশ্বকাপের দ্বিতীয় রাউন্ডে পদার্পণ করে। যদিও তাঁরা শেষমেষ ব্রাজিলের কাছে ১-০ গোলে হেরে বিদায় নেয়। তবুও সেই টুর্নামেন্টে ছয় গোল করে নজড় কেড়েছিলেন রদ্রিগেজ।

সেই বিশ্বকাপের পর ইউরোপিয়ান ফুটবলের ‘হট কেক’ বনে যাওয়া রদ্রিগেজ পরবর্তীতে যোগ দেন রিয়াল মাদ্রিদে। নক্ষত্রের স্থান তো আসমানেই হবে। স্বপ্নের যাত্রার শুরুই বলা চলে। রিয়ালের জার্সি গায়ে জড়ানো তো আর চাট্টিখানি কথা নয়। ক’জনের কপালেই বা জোটে এমনটা? দলের ১০ নাম্বার জার্সিও জুটেছিল তাঁর ভাগ্যে।

তবে রিয়ালেই যে তাঁর ইউরোপিয় যাত্রার শুরু তেমনটা নয়। তিনি এর আগে পর্তুগিজ ক্লাব এফসি পোর্তোর হয়ে পর্তুগিজ প্রিমিয়ার লিগ খেলেছেন তিন সিজন। সেই তিন মৌসুমের ১০৭ ম্যাচে ৩২ গোল করেছিলেন এই অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার। তারপর ২০১৪ বিশ্বকাপের আগে এক সিজন কাটিয়েছেন ফ্রেঞ্চ ক্লাব মোনাকো এফসিতে। মোনাকোর হয়ে ৩৮ ম্যাচ খেলা রদ্রিগেজের গোল সংখ্যা ১০। মিডফিল্ডার হয়েও তাঁর গোল করবার সক্ষমতা প্রসংশনীয়।

কিন্তু তিনি ছিলেন মূলত খেলা গোছানোর, আক্রমন সাজানোর কারিগর। তাঁর সেই কারিগরি দক্ষতা বেশ কাজে দিয়েছিল কলম্বিয়ার বিশ্বকাপ যাত্রায়। তাতেই মুগ্ধ হয়ে তাঁকে লস ব্লাঙ্কোস ডেরায় ভেড়ান কার্লো এনচেলত্তি। এনচেলত্তির একাদশে তিনি ছিলেন একজন গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়। কিন্তু ২০১৭-১৯ দুই মৌসুম তাঁকে বায়ার্ন মিউনিখে ধারে পাঠায় রিয়াল।

বায়ার্নের মিউনিখের হয়ে দুই মৌসুমে ৬৭ ম্যাচে ১৫ গোল করে আবার ২০১৯/২০ আবার রিয়ালে ফেরেন তিনি। কিন্তু রিয়ালে তাঁর জায়গা ততদিনে সঙ্কীর্ণ হয়ে গিয়েছিল। তাছাড়া বেশ কিছু ইনজুরি তাঁর পারফর্মেন্সে ব্যাপক প্রভাব ফেলে। দলবদল ছিল অবসম্ভাবী। ১২৫ ম্যাচের রিয়াল ক্যারিয়ারের সমাপ্তি ঘটে ৩৭ গোল নিয়ে।

মাদ্রিদ ছেড়ে এভারটনের জার্সি গায়ে জড়ান তিনি। বেশি বেশি খেলতে পারার সুযোগ হিসেবেই তাঁর এমন সিধান্ত। কেননা তিনি জিদানের রিয়ালে খুব একটা খেলার সময় পাচ্ছিলেন না। এক মৌসুমে রাফা বেনিতেজের অধীনে রদ্রিগেজ খেলেছেন মোট ২৬ ম্যাচ। কিন্তু রাফা বেনিতেজের পরিকল্পনাতে আরো একটি সিজনের জন্যে যে রদ্রিগেজ ছিলেন না তা মোটামুটি স্পষ্ট হতে থাকে।

এর পেছনে রদ্রিগেজের অফ ফর্ম এবং তাঁর ইনজুরি সমস্যাই অন্যতম কারণ। যার জন্যে তাঁর এবারের কোপা আমেরিকাও খেলা হয়ে ওঠেনি। এমন একজন খেলোয়াড়কে দলে রাখা বেশ ব্যয়বহুল। এভারটনের কাছে তাঁকে বিক্রি করে দেওয়াই তাদের ক্লাবের জন্য মঙ্গল মনে হয়েছিল।

বেশ কিছু ইউরোপিয়ান ক্লাবে রদ্রিগেজের যাওয়ার গুঞ্জন উঠেছিল। এসি মিলান ছিল অন্যতম। এমনও গুঞ্জন উঠেছিল তিনি আবার ফিরে যাবেন রিয়াল মাদ্রিদে। যেহেতু আনচেলত্তি আবার নতুন করে দারিত্বভার পেয়েছেন রিয়ালের এবং তাঁর আগের আমলে রদ্রিগেজ আনচেলত্তির পরিকল্পনার এক গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার ছিলেন।

কিন্তু সকল কিছুর অবসান ঘটিয়ে তিনি পাড়ি জমালেন মরুর দেশ কাতারে। কাতার লিগের দল আল রাইয়ানের ১০ নম্বর জার্সি পরবেন কলম্বিয়ান এই তারকা।

তিনি হয়ত ফুটবলের আকাশ থেকে পুরোপুরি খসে পরে যাননি। তবে লোক চক্ষুর আড়ালে চলে গেলেন ঠিকই। এই তারকাকে নি:সন্দেহে মিস করবে ইউরোপিয়ান ফুটবল। তিনি হয়তো তাঁর ধার বাড়িয়ে ফিরবেন আবার ইউরোপে। রদ্রিগেজ নামক তারকা আবার জলজল করবে ফুটবলের আকাশে।

আবারো বিশ্বকাপে উরুগুয়ের বিপক্ষে করা ডি-বক্সের বাইরে থেকে করা ভলিতে মুগ্ধ হবে ফুটবল সমর্থকেরা। সম্ভাবনার মৃত্যু নেই, স্বপ্নের মৃত্যু নেই।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...