এতটা বিদ্বেষ নিয়ে গান্ধীর রাজ্যে মানুষ বাঁচে!

মেকমাইট্রিপের বিজ্ঞাপনটা দেখে মনটা বিষিয়ে আছে। চার প্রজন্ম ধরে বিষ ছড়ানো হচ্ছে। অথচ, ভারত নাকি ‘বসুধৈব কুটুম্বকম’ দর্শনে বিশ্বাসী। সে যাক, সময় বিষ ছড়ায়, আবার সময়ই সর্বংসহা শিব হয়ে সেই বিষ শুষে নেয়।

যাই হোক, ম্যাচটার কথায় আসি। কিছু না। পিচটা শুধুমাত্র কৃষ্ণমৃত্তিকার তৈরি মনে হল না। সেক্ষেত্রে বল পুরনো হলে স্পঞ্জি বাউন্স আর বল গ্রিপ করত না। আহমেদাবাদের অধিকাংশ পিচই কালো মাটির। বল সেখানে সঠিক উচ্চতায় আসে, বাউন্সও। হিট দ্য ডেক বোলারদের সুবিধা হয়, আবার ব্যাকফুট ব্যাটারদেরও। তা পাকিস্তানে দুটোই ছিল।

বাকি পিচগুলোতে তিনটে মাটি মেশানো। অর্থাৎ লাল মাটি আর সাধারণ এঁটেল। খান দুই বোধহয় শুধু কালো আর লাল। তবে এই পিচটা কেন এরকম ব্যবহার করল কে জানে!

কেউ না জানুক, ভারত জানত। অশ্বিনকে আগের দিন এত তৈরি করিয়েও সকালে শার্দুল ঠাকুর। শার্দুল ক্রস সিমে বল করে, রিভার্স স্যুইং-এর জন্য বল তৈরি করতে পারে। সেটা হার্দিকও করে। প্রথম দিকে সিরাজ উইকেটের চেষ্টা করছিল বলে টপ অর্ডারে দাঁত ফোটাতে পারেনি।

আর জাসপ্রিত বুমরাহ! ওয়াও। সেদিন ইএসপিএন ক্রিকইনফোতে সিদ্ধার্থ মোঙ্গার লেখা পড়ছিলাম, ‘হি ইস টু প্রাউড টু টেক উইকেটস’। বুমরাহ ম্যাকগ্রা-র মতো। রান দেবে না, ব্যাটারকে নিশ্বাস নিতে দেবে না। আর শেষে কখন ঘটিবাটি নিয়ে চলে যাবে কে জানে!

পাকিস্তান, বিশেষত বাবর আর রিজওয়ান। ধরে নিয়েছিল খেলাটা। স্পিনারদের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকছিল। সব বল নয়, কিছু বল ঘুরছে জাদেজার। সামলে-সুমলে খেলা আর কি।

বুমরাহ ম্যাজিক শুরু হল। যে বলটায় রিজওয়ানের উইকেট নিল সেটা আউট অব দ্য ওয়ার্ল্ড। প্রথম চারটে বল চতুর্থ স্ট্যাম্পে ঠেলে, রিজওয়ানের সামনের পা আর ব্যাটের মধ্যে ফাঁক তৈরি করা। তারপর শেষ বলে একই জায়গায় ফেলে অফ কাট। কিন্তু সে তো সামলে দেবার কথা, রিজওয়ান যথেষ্ট সক্ষম ব্যাট। তাহলে? কিছু না ম্যাকগ্রার পরে আর কারও এতো সুন্দর কব্জির ব্যবহার নেই।

সেই বহুদিন আগে বুমরাহর বোলিং নিয়ে বলতে গিয়ে বলেছিলাম যে যে বলগুলো বুমরাহ কব্জির মোচড়ে মারে সেগুলো গতি পায়। কিন্তু আহমেদাবাদের পিচে গতি মানে হাওয়ায় গতি। অফ কাট, পিচে সিমে পড়েনি ফলে বল গ্রিপ করল, আর তারপর ধীরে হয়ে একটা স্পঞ্জি বাউন্স নিয়ে রিজওয়ানের ডাণ্ডা নড়িয়ে দিল।

তার পরের বলটা একজন লোয়ার মিডল অর্ডার পেল, কিছু করার ছিল না। পিওর সিম বোলিং-এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। কুলদীপ বা জাদেজা পিচের চরিত্র বুঝে সামান্য ধীর গতিতে বল করা শুরু করলেন। ওখানেই খেলা শেষ।

ভারতের ব্যাটিং-এর ক্ষেত্রে এই উইকেটকে কাজে লাগাবার মতো বোলার ছিল আফ্রিদি আর নাসিম। নাসিম তো নেই! আর দুজনেরই সিম পজিশন দারুণ কিন্তু আফ্রিদিকে রোহিত এবং গিল যেন শুরু থেকেই আক্রমণ করবে বলে ধরেই নিয়েছে। বাকিদের কিছু করার ছিল না। রোহিত স্পিনারদের থিতুই হতে দেয়নি, রউফকেও। এই উইকেটে রউফ থ্রেট নিউট্রালাইজ করার পর ম্যাচে আর কিছু ছিল না।

পরিশেষে একটা কথা। এটা আগেও বলেছি। আর্জেন্টিনা, পাকিস্তান বা ইস্ট বেঙ্গল। ‘চিরশত্রু’ তো মাঠে, তাদের দুরবস্থায় ভালো লাগে না। তবে আহমেদাবাদের খেলা দেখার কোনও ঐতিহ্য নেই। নতুন ভারত, অর্থের নির্লজ্জ প্রদর্শনী এবং সংখ্যাধিক্যের গা জোয়ারি। যে সমস্ত শ্লোগান শোনা গেল মাঠে, সেগুলো যুদ্ধক্ষেত্রে হয়। এতটা বিদ্বেষ নিয়ে গান্ধীর রাজ্যে মানুষ বাঁচে!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link