অতিরঞ্জিত পরীক্ষায় অতিরিক্ত সংকট

২০১৩ সালে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জিতে শেষবার কোনো আইসিসি’র শিরোপা ঘরে তুলেছিল ভারত। এরপর আইসিসির আট টুর্নামেন্টের তিনটিতে ফাইনালে গেলেও একবারও শিরোপা ছুঁয়ে দেখা হয়নি তাদের। সময়ের হিসেবে শিরোপা খরার প্রায় দশ বছর হতে চললো। মহেন্দ্র সিং ধোনির পর বিরাট কোহলির অধিনায়কত্বে ভারত টেস্টে বেশ সফল হলেও শিরোপা জয়ের প্রাপ্তির খাতায় সংখ্যাটা শূন্যই ছিল। 

বিরাট কোহলি অধিনায়কত্ব ছেড়েছেন। নেতৃত্বের নতুন ব্যাটন এখন রোহিত শর্মার হাতে। বৈশ্বিক আসরে নতুন অধিনায়ক হিসেবে এসেই কি বাজিমাত করবেন তিনি? এমনিতে অধিনায়ক হিসেবে বেশ সফল রোহিত শর্মা। তবে এশিয়া কাপে বহু বছর বাদে ভারত সুপার ফোর পর্ব উৎরাতে পারেনি তাঁর অধিনায়কত্বেই।

এ ছাড়া ইনজুরির কারণে বুমরাহ, জাদেজা ছিটকে যাওয়ায় ভারতের বোলিং লাইন আপের অবস্থা হয়ে গিয়েছে বেশ নাজুক। ব্যাটিং লাইন আপেও টপ অর্ডাররা ধারাবাহিক নন। সব কিছু মিলিয়ে ভারত দলটা এই মুহুর্তে একটু সংকটময় পরিস্থিতির মধ্য দিয়েই যাচ্ছে।

ভিন্ন সময়ে ভিন্ন দল খেলানোতে ভারত বেশ ক’বছর ধরেই অভ্যস্ত হয়ে উঠছে। এই যেমন ভারতের বিশ্বকাপ দল যখন অস্ট্রেলিয়ায়, ঠিক তখনই তাদের আরেকটি দল দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ঘরের মাটিতে ওয়ানডে সিরিজ খেলছে। এর আগের ওয়ানডে সিরিজও ভারত তাদের দ্বিতীয় সারির দল নিয়ে খেলেছিল।

এশিয়া কাপের আগে টি-টোয়েন্টি দল নিয়ে কম পরীক্ষা নিরীক্ষা হয়নি। বছর জুড়ে প্রায় গোটা ত্রিশেক ক্রিকেটার বিশ্বকাপ দলের রাডারে ছিল। তবে অধিক পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে ভারত কি দল হিসেবে নিজেদের সমন্বয় নষ্ট করে ফেলছে, এমন প্রশ্নও উঠেছে প্রবলভাবে। 

দল নিয়ে নির্দিষ্ট টুর্নামেন্টের আগে একেক ম্যাচে একেক ক্রিকেটারদের নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা বিশ্ব ক্রিকেটে নতুন কিছু নয়। ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটীয় সংস্কৃতিতে সেটা বহু আগে থেকেই আছে। কিন্তু ভারতের ক্ষেত্রে যেটা হয়েছে সেটা হলো, এমন প্রসেসে সঠিক আউটপুটটা ঠিক তারা পাচ্ছে না।

এর একটিই কারণ, নির্দিষ্ট করে একটি একাদশ নিয়ে অধিকাংশ সময়েই ভারত তাদের প্রস্তুতি ঠিকঠাক ভাবে সম্পন্ন করে না। এশিয়া কাপের আগে যেমন একাদশ ছিল, ঠিক তাঁর বিপরীত একাদশের দেখা মেলে এশিয়া কাপে এসে। আর এশিয়া কাপে ভরাডুবি হয় এই সমন্বয়হীনতার কারণেই। 

সম্প্রতি পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক রশিদ লতিফ ভারতের এমন এক্সপেরিমেন্ট নিয়ে কথা বলেছেন বিস্তর ভাবে। তিনি বলেন, ‘ভারত সব সময় তাদের প্রধান খেলোয়াড়দের পরিকল্পনায় রেখে দেয়। কিন্তু সারা বছর জুড়ে এক্সপেরিমেন্ট চালায় অন্য ক্রিকেটারদের উপর। তাদের পুলে ৫৬/৫৭ ক্রিকেটার সব সময় দলে আসা যাওয়ার ভিতরেই থাকে। এদের মধ্যে ভারতের হয়ে টানা ম্যাচ কেউই খেলতে পারে না। তাই দল নিয়ে এমন পরীক্ষা নিরীক্ষায় তেমন কাজেও আসে না। আর এ কারণে বছরের পর বছর তারা এত এক্সপেরিমেন্ট চালিয়েও কোনো শিরোপা জিততে পারেনি। এটাই সমস্যা।’ 

এ ছাড়া রশিদ লতিফ আরও বলেন, ‘যে কোনো টুর্নামেন্টে সঠিক পরিকল্পনা করার দিক দিয়ে ইংল্যান্ড আর অস্ট্রেলিয়া এগিয়ে। এরপরে পাকিস্তান। প্রতিটা টুর্নামেন্ট নিয়ে তাদেরও নির্দিষ্ট কিছু পরিকল্পনা থাকে।’

আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে এরই মধ্যে অস্ট্রেলিয়ায় পৌঁছেছে টিম ইন্ডিয়া। ২৩ অক্টোবরে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে বিশ্বকাপ মিশন শুরু করবে তারা। আগের বার সংযুক্ত আমিরাতে হওয়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে, গ্রুপ পর্বের ম্যাচে ভারতকে ১০ উইকেটে হারিয়েছিল পাকিস্তান। এবার সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি নিশ্চয়ই চাইবে না রোহিত শর্মার দল।

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link