পাকিস্তান ক্রিকেটের ‘শাহ ব্রাদার্স’

পাকিস্তান ক্রিকেটে ভাইদের গল্প নতুন কিছু নয়। কামরান, উমর আর আদনান, আকমল ব্রাদার্সের এই তিন ভাই-ই পাকিস্তানের হয়ে খেলেছেন। তবে এ সময়ে এসে উত্থান ঘটেছে নতুন ভাইদের বিচরণ। পাকিস্তান ক্রিকেটে এখন আলোচিত শাহ ব্রাদার্স—উবায়েদ শাহ, নাসিম শাহ আর হুনাইন শাহ।

২১ বছর বয়সী নাসিম শাহ এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের পরিচিত মুখ হয়ে উঠেছেন। ৫ বছর আগে মাত্র ১৬ বছর বয়সেই পা পড়ে টেস্ট আঙিনায়। এরপর একে একে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটেও হয়ে উঠেছেন পাকিস্তানের অন্যতম আস্থার নাম।

নাসিম শাহর আরেক ভাই উবায়েদ শাহও হঠাতই আলোচনায় অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের মাধ্যমে। কদিন আগে বাংলাদেশের বিপক্ষে  ৪৪ রানে ৫ উইকেট নিয়েই তিনিই থামিয়েছিলেন জুনিয়র টাইগারদের সেমি যাত্রা। আর উবায়েদ শাহর বয়সে বড় হুনাইন শাহ এখন খেলছেন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে।

পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশে বেড়ে ওঠা শাহ ব্রাদার্সরা সব মিলিয়ে ৬ ভাই। এর মধ্যে নাসিম চতুর্থ, হুনাইন পঞ্চম আর উবায়েদ ষষ্ঠ। যদিও এ পরিবারে ক্রিকেটের চলটা শুরু হয়েছিল বড় ভাই সালিম শাহর কল্যাণে। কিন্তু বাবা মুজাফফর শাহর কড়াকড়ির কারণে উইকেটরক্ষক ব্যাটার হিসেবে ক্যারিয়ার গড়ার স্বপ্ন পূরণ হয়নি সালিম শাহর। মেজ ভাই জহির শাহ অবশ্য শুরু থেকেই ক্রিকেটবিমুখ ছিলেন। কিন্তু বাকিরা ছিলেন ক্রিকেট অন্তঃপ্রাণ মানুষ।

এই যেমন ৬ ভাইয়ের তৃতীয় ভাই নাইম শাহ ক্রিকেট ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন পাকিস্তানের ক্রিকেট আকাশে নাম লেখার স্বপ্নে। যদিও টেপ টেনিস ক্রিকেট পর্যন্তই আটকে ছিলেন তিনি। তবে সব জাল, গণ্ডি কিংবা বাঁধা পেরিয়ে নাসিম শাহই ‘শাহ পরিবারে’ প্রথম আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার বনে যান। বাবার কড়া নিষেধও তাঁকে দমাতে পারেনি। শাহ পরিবারে পেশাদার ক্রিকেটের যে চল নাসিম শাহ শুরু করেছিলেন, তার শেষটা এখন করছেন উবায়েদ শাহ। পাকিস্তানের ক্রিকেট আকাশে এখন তিন তারকা আঁকার পথে এ তিনি ভাই।

তিনজনই ডানহাতি পেসার। সবার বলেই গতি ছাড়িয়েছে ১৪০ কিলোমিটার। কীভাবে একই পরিবার থেকে এমন পেসত্রয়ী উঠে আসলো সেই গল্প শুনিয়েছেন তৃতীয় বড় ভাই নাইম শাহ। ভারতের এক গণমাধ্যমকে সেই গল্প শোনাতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা পাঠান। আমরা কাউকেই ভয় পাই না। এটা আমাদের রন্ধ্রে মিশে আছে। জোরে বল করার এটাই একমাত্র কারণ। ব্যাটারদের চোখে ভয় দেখতে আমাদের ভালো লাগে। আর পেস বোলার হওয়াও তো সহজ। একটা বল হলেই চলে। দরকার শুধু নিজের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে প্রতিপক্ষের উপর ছুঁড়ে মারা।’

বাবার নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও কীভাবে এই পরিবার থেকে এত পেসার উঠে আসলো? এমন প্রশ্নে নাইম বলেন, ‘আমাদের বড় ভাই ভাল উইকেটরক্ষক ব্যাটার ছিলেন। কিন্তু বাবার কারণে খেলতে পারেননি। বাবা আসলে কখনোই এই খেলা সমর্থন করেনি। তাঁর কাছে, ক্রিকেট হচ্ছে ইংরেজদের খেলা। তবে বড় ভাই আমাদের সব কিছুর রক্ষক হিসেবে পাশে ছিলেন। আর নাসিম ছোটবেলা থেকেই ক্রিকেট পাগল ছিল। ওর সূত্র ধরে বাকি দুই ভাই ক্রিকেটের পথে এগিয়েছে।’

ক্রিকেটার হওয়ার পথে নাসিমকে নাকি একবার বাবার হাতে মারও খেতে হয়েছে। সেই স্মৃতি টেনে নাইম বলেন, ‘বাবা প্রায়ই নাসিমকে মারধর করতেন। কারণ ওর দেখাদেখি হুনাইন আর উবায়েদও সব ভুলে ক্রিকেটে মন দিচ্ছিল। তবে কাজটা সহজ হয়ে যায়, নাসিম যখন পাকিস্তান দলে ডাক পেল। এরপরে আর বাঁধা আসেনি। বাকি দুজনও একই পথে এগোচ্ছে।’

এবারের যুব বিশ্বকাপের প্রথম পাঁচ ম্যাচে ১৭ উইকেট নিয়েছেন উবায়েদ শাহ। এ দিকে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের হয়ে বিপিএল খেলছেন হুনাইন শাহ। আর নাসিম শাহ তো পাকিস্তান ক্রিকেটের এখন প্রায় প্রতিষ্ঠিত এক তারকা। সব মিলিয়ে পাকিস্তান ক্রিকেটে শাহ ব্রাদার্সের উত্থানটা চোখে পড়ার মতো। কে জানে, কোনো একদিন পাকিস্তান একাদশে একই সাথে দেখা যেতে পারে এই তিন পেসারকে, পাকিস্তানের পেসত্রয়ী হিসেবে। সে দিন নিশ্চয়ই গর্বিত হবেন কড়া মেজাজী বাবা মুজাফফর শাহও।

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link