টেস্টের ইতিহাসে নিজের ক্যারিয়ারের প্রথম বলেই উইকেট নিয়েছেন – এমন বোলারের সংখ্যাটা নেহায়েৎ কম নয় – ১৯ জনের। এর মধ্যে মাত্র তিনি জন বোলার ক্যারিয়ার শেষ করতে পেরেছেন ১০০-এর ওপর উইকেট নিয়ে। তাঁদের একজনই হলেন আজকের গল্পের নায়ক – ইন্তিখাব আলম।
নায়ক না বলে আসলে তাকে পাকিস্তান ক্রিকেটের সত্যিকারের এক সব্যসাচী ব্যক্তিত্ব বলা উচিৎ। মাঠে খেলোয়াড়, বোলার কিংবা ব্যাটসম্যান, আবার মাঠের বাইরে কোচ কিংবা কর্মকর্তা – নানা ভূমিকায় তিনি আলোচিত একজন চরিত্র।
পঞ্চাশ থেকে সত্তর দশকের পাকিস্তান ক্রিকেটে তিনি গুরুত্বপূর্ণ মুখ। খেলোয়াড়ী জীবন শেষ করে আসেন কোচিংয়ে। মাঠের বাইরের ভূমিকায় তিনি পাকিস্তানের হয়ে জিতেন দু’টি বিশ্বকাপ। দু’টোই কোচ হিসেবে – এই কীর্তি ক্রিকেট বিশ্বে আর কারোই নেই।
ইন্তিখাবের জন্ম অবশ্য বর্তমান ভারতের ভূখণ্ডে। ১৯৪১ সালের ২৮ ডিসেম্বর তাঁর জন্ম হয় আজকের দিনের পাঞ্জাবের হুশিয়ারপুরে। দেশ বিভাগের সময় পরিবার চলে আসে পাকিস্তানে।
কুঁড়ি থেকে ক্রিকেটে প্রতিভা বিকাশ শুরু হয় ইন্তিখাবের। ১৯৫৭ সালের ১১ অক্টোবর যখন কায়েদ ই আজম ট্রফিতে করাচির হয়ে অভিষেক হয় তখন বয়স মাত্র ১৫ বছর। এর দু’বছর পরেই টেস্ট অভিষেক। প্রথম বলেই উইকেট। করাচিতে তাঁর লেগ স্পিনে বিভ্রান্ত হয়ে বোল্ড হয়ে ফিরে যান ক্লাসিক অস্ট্রেলিয়ান ওপেনার কলিন ম্যাকডোনাল্ড।
ইংল্যান্ড কাউন্টি ক্রিকেটে তিনি খেলতেন সারের হয়ে। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে আসলে শুধু লেগ স্পিনার নয়, আক্ষরিক অর্থেই শীর্ষমানের এক অলরাউন্ডার ছিলেন। সারের হয়ে ২৩২ টি প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ২৫ বার পাঁচ উইকেট সহ নেন ৬২৯ টি উইকেট। এর বাদে চারটি সেঞ্চুরি-সহ করেন ৫৭০৭ রান।
সব মিলিয়ে ইন্তিখাবের প্রথম শ্রেণি ক্রিকেটের রেকর্ড আরো বেশি বিস্ময়কর। তিনি প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারী পাকিস্তানি বোলার, নিয়েছেন ১৫৭১ টি উইকেট। এমনকি ভারতীয় স্পিন গ্রেট বিষাণ সিং বেদিও প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে উইকেট সংখ্যায় তাঁর চেয়ে ১১ টি উইকেটে পিছিয়ে আছেন।
যদিও টেস্ট ক্যারিয়ারটা তাঁর আহামরী বড় নয়। ৪৭ টি টেস্টের ক্যারিয়ারে ১২৫ টি উইকেট আর ১৫০০’র মত রান নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয় এই লেগ স্পিনিং অলরাউন্ডারকে। আর ওয়ানডে খেলেছেন চারটা। তবে, অধিনায়ক হিসেবে তাঁর অনন্য এক রেকর্ড আছে। তিনি প্রথম পাকিস্তানি অধিনায়ক হিসেবে বিদেশের মাটিতে সিরিজ জিতেন।
১৯৭৩ সালের সেই নিউজিল্যান্ড সফরে তিনি ডানেডিনে ৫২ রান নিয়ে সাত উইকেট নেন নিউজিল্যান্ডের প্রথম ইনিংসে। নিউজিল্যান্ড অলআউট হয় ১৫৬ রানে। পাকিস্তান নিউজিল্যান্ডকে ফলোঅনে পাঠায়। এবার আলম নেন ৪৯ রানে পাঁচ উইকেট। সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন জয়ে।
সেবছরই টেস্টে নিজের একমাত্র শতকের দেখা পান। ফয়সালাবাদে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১৩৮ রানের। আসিফ ইকবালের সাথে মিলে দারুণ এক জুটি গড়েন। পাকিস্তান সেই ইনিংসে করে ৫৬৯ রান।
যদিও, ইন্তিখাবের ক্যারিয়ারের সেরা মুহূর্ত আসে খেলোয়াড়ী জীবন শেষে। ১৯৯২ সালে ইংল্যান্ডে তিনি যান পাকিস্তানের কোচ হয়ে। ইমরান খানের নেতৃত্বে সেবার পাকিস্তান প্রথমবারের মত বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়।
২০০৮ সালের অক্টোবরে প্রায় হঠাৎ করেই তাঁকে কোচ বানানো হয়। ফলাফল পরের বছরই ইউনুস খানের দল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপা জিতে। কোচ হিসেবে ক্রিকেটের দু’টি ভিন্ন ফরম্যাটের বিশ্বকাপ শিরোপা জেতা একমাত্র মানুষ তিনি।
কোচ ইন্তিখাবের আরেকটা বড় ব্যাপার হল, তিনি একমাত্র পাকিস্তানি কোচ হিসেবে ভারতের ঐতিহ্যবাহী রঞ্জি ট্রফিতে কোচিং করান। ২০০৪ সালে তিনি পাঞ্জাব দলের কোচের দায়িত্ব পান। তিনি রঞ্জির ইতিহাসেরই প্রথম বিদেশি কোচ। আসলে এখানে তাঁকে ঠিক বিদেশি বলাও যায় না। এই পাঞ্জাবেই তো তাঁর জন্ম!