হাপুশ নয়নে কাঁদছেন বাবা। ছেলেকে ক্রিকেটার বানাবেন বলে চাকরি ছেড়েছেন। এর মধ্যেই নেমে এসেছে আর্থিক অনটন। কি করবেন? চোখের জলটাই এখন মুতাইলা রেড্ডির শেষ সম্বল।
আড়াল থেকে দেখছেন কিশোর নিতীশ কুমার রেড্ডি। এই দৃশ্যের সাথে তিনি একেবারেই পরিচিত নন। বাবাকে আগে কখনওই এতটা ভেঙে পড়তে দেখেননি। ঠিক ওই দৃশ্যটাই আমূল বদলে দিল নিতীশের ধ্যান-ধারণা ও ভাবনা। ভবিষ্যত নিয়ে রেড্ডি এবার সিরিয়াস।
যে করেই হোক বড় ক্রিকেটার হতে হবে। সেই একটা ভাবনাতেই পাল্টে গেলেন রেড্ডি, পাল্টে গেল ভারতের ক্রিকেট ভবিষ্যৎ। নবাগত এক বিস্ময়ের আবির্ভাব হল ভারতীয় ক্রিকেটে।
কাট টু মেলবোর্ন ২০২৪। বক্সিং ডে টেস্ট। অজি সাম্রাজ্যে ফুল হয়ে ফুটল সেই বিস্ময়। অথচ, রেড্ডি প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে একেবারেই অনভিজ্ঞ। রান নেই এক হাজারও। ব্যাটিং গড় ২০-এর আশেপাশে।
তারপরও যখন ভারত ভরসা রাখল নিতীশ কুমার রেড্ডির ওপর, তখন নড়েচড়ে বসার কোনো বিকল্প ছিল না। ভারতীয় ম্যানেজমেন্টের রাখা সেই ভরসার প্রতিদান দিয়েছেন রেড্ডি।
মেলবোর্নে যখন একে একে সাজঘরে ফিরছে ভারতের মিডল অর্ডার, তখন পাল্টা প্রতিরোধের ঘোষণা দিলেন তিনি। পেলেন ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি। গড়লেন অনবদ্য ও অদেখা এক ইতিহাস।
আর এই গল্পের নায়ক নিতীশের বাবা। নিতীশের বয়স যখন ছয়, তখন থেকে তাঁর কোচ কুমার স্বামী। তিনি বলেন, ‘সবাই নিজের গল্পের নায়ক হতে চায়। কিন্তু, নিতীশের গল্পের নায়ক ওর বাবা মুতাইলা। ওর বাবা ওর জন্য এতটাই পরিশ্রম করেছে যে নিতীশ বড় ক্রিকেটার হতে বাধ্য হয়েছে। ওর বাবার ওপর দিয়ে কি কি গেছে, সব ও চোখের সামনে দেখেছে।’
নিতীশকে ক্রিকেট বাদে অন্য কিছু ভাবতেও দেননি মুতাইলা। কিন্তু, কুছ তো লোগ কাহেঙ্গে – লোগো কা কাম হি হ্যায় ক্যাহনা। তেমন আত্মীয় রেড্ডিদেরও আছে। নিতীশকেও নয়টা-পাঁচটার চাকরিতে দেখতে চেয়েছিলেন তাঁরা।
কিন্তু, মুতাইলা সেটা হতে দেননি। তাঁর কড়া নিষেধে কটু-কথা বলা আত্মীয় স্বজনদের মুখে কুলুপ এঁটে যায়। আর এরই ফলাফল এবার পাচ্ছে ভারত।
নিজের স্বভাবজাত স্ট্রোক প্লেয়িং ঘরানাকে মাটিচাপা দিয়ে নিতীশ রেড্ডি এগিয়ে গেলেন ওয়াশিংটন সুন্দরকে সাথে নিয়ে। এখনও যে মেলবোর্ন থেকে ভারতের খালি হাতে ফেরার সম্ভাবনা একেবারে উড়ে যায়নি সেটা কেবল সম্ভব হয়েছে এই নিতীশের জন্যই।
ব্যাটারদের যাওয়া আসার মিছিলের মধ্যেই নন স্ট্রাইকার এন্ডে দাঁড়ানো ব্যাটারের ওপর দিয়ে মারলেন। দৃষ্টিনন্দন শট। মিড অনে দাঁড়ানো ট্রাভিস হেডের দৌঁড়ে বল আনা ছাড়া কিছু করার ছিল না। খোদ শচীন টেন্ডুলকার আর ঋষাভ পান্তের পর সবচেয়ে কম বয়সে অস্ট্রেলিয়ার সেঞ্চুরি পেলেন একজন ভারতীয়।
এক রেড্ডি ব্যাট তুলে ধরলেন আকাশে। আরেক রেড্ডি গ্যালারিতে বসে নয়ন ভেজালেন। এবার সেই কান্না পুরো বিশ্ব দেখল। বাবার চোখের জলের দাম দিয়ে কেনা এক ক্রিকেট স্বপ্ন পূরণ হল মেলবোর্নের ময়দানে! সেই জলে মিশে থাকল বুক ভরা গর্ব!