রোহান ‘এন্টারটেইনিং’ কাহ্নাই

ভারতীয় কিংবদন্তি ও বিশ্বকাপ জয়ী ব্যাটার সুনীল গাভাস্কারের আইডল কে জানেন? আজকালকার ক্রিকেট ভক্তদের কাছে নামটা খুব পরিচিত নয়। তিনি হলেন রোহান কাহ্নাই। শুনতে অপরিচিত ঠেকলেও আসলে তিনি বিরাট ব্যাপার ছিলেন নিজের সময়ে। আর সুনীলের আইডল হবেন-ই বা না কেন? দীর্ঘ ৪৭ বছর যাবৎ তাঁর করা একটি রেকর্ড কেউ ভাঙতে পারেনি। রেকর্ডটা খুব সরল। ভারতের মাটিতে ভারতের বিপক্ষে ভিন্নদেশের কোন খেলোয়াড়ের করা সর্বাধিক রান করার রেকর্ড।

ভারতীয় কিংবদন্তি ও বিশ্বকাপ জয়ী ব্যাটার সুনীল গাভাস্কারের আইডল কে জানেন? আজকালকার ক্রিকেট ভক্তদের কাছে নামটা খুব পরিচিত নয়। তিনি হলেন রোহান কাহ্নাই। শুনতে অপরিচিত ঠেকলেও আসলে তিনি বিরাট ব্যাপার ছিলেন নিজের সময়ে। আর সুনীলের আইডল হবেন-ই বা না কেন? দীর্ঘ ৪৭ বছর যাবৎ তাঁর করা একটি রেকর্ড কেউ ভাঙতে পারেনি। রেকর্ডটা খুব সরল। ভারতের মাটিতে ভারতের বিপক্ষে ভিন্নদেশের কোন খেলোয়াড়ের করা সর্বাধিক রান করার রেকর্ড।

অবশ্য রোহান কাহ্নাই ছিলেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত। খেলোয়াড়ি জীবনে তিনি ওয়েস্ট ইন্ডিজকেই বেছে নিয়েছিলেন প্রতিনিধিত্ব করবার জন্য। তারপর তো রীতিমত কিংবদন্তি সব ব্যাটারদের তালিকায় নিজের নামটি খোদাই করে রেখে গেলেন রোহান।

রোহান কাহ্নাইয়ের জন্ম ২৬ ডিসেম্বর ১৯৩৫ সালে। ব্রিটিশ কলোনিয়াল দেশ ব্রিটিশ গায়ানাতে তাঁর জন্ম। যা কিনা ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের অন্তর্ভুক্ত। ভারত উপমহাদেশ থেকে রোহানের পরিবার তাঁর জন্মের আগেই পাড়ি জমিয়েছিলেন সেখানে। হয়ত ভাল ভবিষ্যতের চিন্তায় কিংবা অন্য কোন কারণে। তা খুব একটা আলোচ্য বিষয় নয়।

রোহান বরং নিজেকে সুপরিচিত করেছিলেন ক্রিকেট দিয়ে, নিজের ক্রিকেটীয় দক্ষতা দিয়ে। মাত্র আট বছর বয়সেই স্থানীয় এক স্কুলের ক্রিকেট দলে জায়গা করে নিয়েছিলেন তিনি। তারপর তো শুধু তাঁর ব্যাট চলেছে হয়েছে রান।

মাত্র ১৬ বছর বয়সেই নিজের প্রথম সেঞ্চুরির দেখা পাওয়া রোহান কাহ্নাই পরবর্তীতে নিজের পেশাদার ক্যারিয়ারে হাঁকিয়েছেন ১০৮টি সেঞ্চুরি। অবশ্য সব ধরণের ক্রিকেট মিলিয়েই তাঁর এই অর্জন। স্কুল জীবনে চার বছর কাটিয়ে শেষের দিকে অধিনায়কত্বও করেছিলেন তিনি। তারপর রোহান খেলতে শুরু করেন আন্ত:প্রদেশ বা ইন্টার কাউন্টি লিগে।

সেখান থেকেই তিনি কলোনিয়াল ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনগুলোর নজরে আসতে শুরু করেন। তিনি জায়গা করে নেন ইস্ট ইন্ডিয়া ক্রিকেট ক্লাবে এবং সেই ক্লাবের হয়ে খেলেন ‘কেস কাপ’। সেই টুর্নামেন্টে নিজের ব্যাটিং প্রদর্শনে ব্রিটিশ গায়ানা দলের জার্সি পেতে খুব একটা বেশি বেগ পোহাতে হয়নি তাঁকে।

১৯৫৫ সালে মাত্র ১৯ বছর বয়সেই রোহান কাহ্নাই ব্রিটিশ গায়ানা দলে ডাক পান। এর পর থেকে তাঁকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। কেননা অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মাত্র ২৭ বলে ৫১ রানের একটি ইনিংস খেলে তিনি নিজের ব্যাটিং সামর্থ্যের প্রমাণ রাখেন সকলের সামনে। ঘরোয়া লিগে নিয়মিত পারফর্মেন্স অব্যাহত রাখা রোহান ইংল্যান্ডের উদ্দেশ্যে যাওয়া দল নির্বাচনের ক্যাম্পে জায়গা করে নিয়েছিলেন এবং পরবর্তীতে ইংল্যান্ডেও পৌঁছে গিয়েছিলেন তিনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাথে।

যদিও নিজের প্রথম আন্তর্জাতিক ট্যুরে বাকি সব ক্যারিবিয়ান ব্যাটারদের মত নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি। পাঁচ টেস্টে মাত্র ২০৬ রান করেন তিনি মাত্র ২২.৮৮ গড়ে। ঘরোয়া ক্রিকেটে ব্যস্ত থাকা রোহান কাহ্নাই নিয়মিত ছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটেও। ভারতীয় বংশোদ্ভূত দ্বিতীয় খেলোয়াড় রোহান ১৯৫৮/৫৯ এ এই উপমহাদেশে ভারত পাকিস্তানের মুখোমুখি হয়েছিলেন বেশ কয়েকবার।

সেই সময়কালেই তিনি ভারতের বিপক্ষে কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে খেলেছিলেন ২৫৬ রানের অনবদ্য এক টেস্ট ইনিংস। সেই ২৫৬ রান টপকাতে অন্যদেশের সব বাঘাবাঘা ব্যাটারদের লেগেছিল সুদীর্ঘ ৪৭টা বছর। অবশেষে ২০০৫ সালে পাকিস্তানের ব্যাটার ইউনুস খান ২৬৭ করে রোহানের সেই রেকর্ডটি ভেঙ্গে দেন।

তাছাড়া কোলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে করা সেই ২৫৬ রানটিও ছিল প্রথম কোন দ্বিশতক পার করা ইনিংস। ২০০১ সাল নাগাদ রোহান কাহ্নাইয়ের করা সেই ইনিংসটিই ছিল ইডেন গার্ডেন্সে করা সেরা ইনিংস। ২০০১ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ভিভিএস লক্ষণ টপকে যান রোহান কাহ্নাইকে ২৮১ রান করে।

সেই সময়ে লাহোরেও রোহান ২১৭ রানের আরও একটি দারুণ ইনিংস খেলেছিলেন। ১৯৫৮-৫৯ এই সময়কালে উপমহাদেশে করা তাঁর ট্যুরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে রোহান সর্বমোট রান করেছিলেন ১৫১৮। গড় ছিল প্রায় ৫৮.৩৮।

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলা এক সিরিজেও তিনি ছিলেন দারুণ ছন্দে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচ সিরিজে তিনি রান করেছিলেন নিয়মিত। গড় ছিল পঞ্চাশের ঘরে। মোট মিলিয়ে রোহানের ব্যাট থেকে ১৯৬১ সালে করা অস্ট্রেলিয়ান ট্যুরে রান এসেছিল ৫০৩। সময়ের পরিক্রমায় রান তোলা অব্যাহত থাকে রোহানের। বনে যান ওয়েস্ট ইন্ডিজের নির্ভরযোগ্য ব্যাটারদের একজন।

তবে এত এত রানের ভীরে তিনি ছিলেন বেশ ক্লিন-হিট করা একজন ব্যাটার। প্রাথমিক পর্যায়ে কোন ধরণের প্রাতিষ্ঠানিক দীক্ষা না পাওয়া সত্ত্বেও তাঁর ব্যাটিং ছিল এক কথায় মনোমুগ্ধকর। তাইতো তাঁর ব্যাটিং এ মুগ্ধ হওয়া সুনীল গাভাস্কার নিজের ছেলের নামটি রেখেছেন রোহান কাহ্নাইয়ের প্রথম নামানুসারে।

এমনকি রোহানের সতীর্থ আলভিন কালিচরণও তাঁর ছেলের নাম রেখেছিলেন রোহানের নামেই। অসাধারণ এই ক্যারিবিয়ান নিজের প্রথম শ্রেণির ক্যারিয়ারের ইতি টানেন ১৯৭৭ সালের দিকে। তাঁর নামের পাশে তখন ছিল ২৯২৫০ রান। সাথে ৮৬টি শতক।

তাছাড়া ক্যারিবিয়ানদের হয়ে ৭৯টি আন্তর্জাতিক টেস্ট খেলে ১৫ শতকের বদৌলতে রোহানের ক্যারিয়ারের রান ছিল ৬২২৭। এই ৭৯ টেস্টের মধ্য থেকেও ১৩ টেস্টে তিনি পালন করেছিলেন অধিনায়কের দায়িত্ব। তাঁর আন্তর্জাতিক টেস্ট ক্যারিয়ার থেমে গিয়েছিল অবশ্য ঘরোয়া ক্যারিয়ার শেষ হওয়ার তিন বছর আগেই। এরপর অবশ্য পাঁচটি ওয়ানডে খেলেছিলেন রোহান। এই ফরম্যাটে অবশ্য বলার মত তেমন কোন অর্জন নেই রোহানের। কিন্তু ইতিহাসে তিনি অন্যতম সেরা ব্যাটার হয়েই রইবেন চির অমলিন।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...