ক্রিকেটের ‘শ্যালক-দুলাভাই’ একাদশ

ক্রিকেট দল হল একটা পরিবার। পরিবারের মত এক হয়ে তাঁদের মাঠে পারফর্ম করতে হয়। তবে, এর বাইরে কেউ কেউ আক্ষরিক অর্থেই নিজেদের মধ্যে পারিবারিক সম্পর্ক গড়ে তোলেন। তাই দেখা যায় – এখানে কেউ কারো দুলাভাই কেউ বা শ্যালক।

ক্রিকেট দল হল একটা পরিবার। পরিবারের মত এক হয়ে তাঁদের মাঠে পারফর্ম করতে হয়। তবে, এর বাইরে কেউ কেউ আক্ষরিক অর্থেই নিজেদের মধ্যে পারিবারিক সম্পর্ক গড়ে তোলেন। তাই দেখা যায় – এখানে কেউ কারো দুলাভাই কেউ বা শ্যালক।

আন্তুর্জাতিক ক্রিকেটে এরকম বেশ কয়েকটা নজীর পাওয়া যায়। এদের মধ্যে কেউ কেউ সতীর্থ, এক সাথে খেলেছেন জাতীয় দলে। কেউ বা চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দু’টি দলের হয়েও খেলেছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে। ক্রিকেটের এই ‘শ্যালক-দুলাভাই’দের নিয়ে ভিন্নধর্মী একটা একাদশ বানিয়েছে খেলা ৭১।

  • সুনীল গাভাস্কার-গুন্ডাপ্পা বিশ্বনাথ (ভারত)

গাভাস্কার নাকি বিশ্বনাথ – কে ‘বেটার’ ব্যাটসম্যান? ৭০-এর দশকে এই নিয়ে চলতে বিরাট আলোচনা। দুজনেরই জন্ম ১৯৪৯ সালে। দুজনই ছিলেন ভারতের অধিনায়ক। তাছাড়া টেস্ট ক্রিকেটে দুজনই ছিলেন ভারতের ব্যাটিং ভরসার প্রতীক। গুন্ডাপ্পার বিয়ে হয় সুনীলের বোন কবিতার সাথে। সুনীলের ছেলের নাম হল রোহান জয়বিশ্ব গাভাস্কার। এই নামকরণে তিনি সাবেক তিন ব্যাটসম্যানকে ট্রিবিউট দেন। তারা হলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের রোহান কাহ্নাই, ভারতের এম. এল. জয়সীমা ও গুন্ডাপ্পা বিশ্বনাথ।

  • জাহাঙ্গীর খান-বাকা জিলানি (ভারত)

জাহাঙ্গীর খান উপমহাদেশীয় ক্রিকেটের কিংবদন্তি। এখানকার ক্রিকেটকে মাথা তুলে দাড়াতে রাত ভূমিকা অপরিসীম। তিনি পাকিস্তানের হয়ে খেললেও উত্তরসূরিরা সবাই খেলেছেন পাকিস্তানের হয়ে। এদের মধ্যে আছেন মাজিদ খান ও ইমরান খানের মত কিংবদন্তিরাও। এদিকে জিলানির ক্যারিয়ার থেমেছে মাত্র একটি টেস্টেই। যদিও, ঐতিহাসিকরা বলেন সি.কে নাইডুর সাথে ঝামেলায় না জড়ালে নি:সন্দেহে তাঁর ক্যারিয়ারটা আরও বড় হত। জাহাঙ্গীর খানের শ্যালক ছিলেন বাকা জিলানি।

জাহাঙ্গীর খান (ডানে)
  • ড্যারেন লেহম্যান-ক্রেইগ হোয়াইট (অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ড)

এই ব্যাপারটা খুব ভুতুড়ে। অ্যাশেজের দুই প্রতিদ্বন্দ্বী তাঁরা। প্রতিপক্ষ হিসেবেই তাঁদের দেখা হয় বেশি। তবে, বৈবাহিক সূত্রে তাঁরা একই পরিবারের মানু। শুরুটা হয়েছিল যখন লেহম্যান ইংল্যান্ডের একটি ক্লাবের হয়ে খেলতে যান। এরপর হোয়াইটের বোন এনড্রিয়া হোয়াইটকে বিয়ে করেন তিনি। ইয়র্কশায়ারের হয়ে ২০০১ সালে লেহম্যান ও হোয়াইট জেতেন কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশিপ।

  • অ্যালেক স্টুয়ার্ট ও মার্ক বুচার (ইংল্যান্ড)

ইংল্যান্ড ও সারেতে দু’জন খেলেছেন এক সাথে। মার্ক বুচার বিয়ে করেন অ্যালেক স্টুয়ার্টের বোন জুডিকে। মজার ব্যাপার হল অ্যালেক ও মার্কের বাবা মিকি স্টুয়ার্ট ও অ্যালান বুচার দু’জনই ইংল্যান্ডের হয়ে টেস্ট খেলেছে, খেলেছেন সারের হয়েও।

  • উমর আকমল ও উসমান কাদির (পাকিস্তান)

প্রতিভাবান কিন্তু সমালোচিত পাকিস্তানি ব্যাটসম্যান উমর আকমল ও লেগ স্পিনার উসমান কাদির কখনোই এক সাথে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেননি। তবে, তাঁদের মধ্যে পারিবারিক সম্পর্ক আছে। উসমান হলেন উমরের শ্যালক। উসমানের বাবা হলেন স্বয়ং গ্রেট লেগ স্পিনার আব্দুল কাদির। মানে, আব্দুল কাদিরের জামাতা হলেন উমর আকমল।

  • বিক্রম রাঠোর ও আশিষ কাপুর (ভারত)

রাঠোর ও কাপুর – দু’জনের বড় মিল হল তাঁরা ঘরোয়া ক্রিকেটের বড় তারকা ছিলেন। কিন্তু, তাঁর প্রতিফলন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ছিল না। রাঠোর ছয়টি ও কাপুর চারটি টেস্ট খেলেন। অন্যদিকে, রাঠোর সাতটি কাপুর ১৭ টি ওয়ানডে খেলেন। দু’জন এক সাথে পাঞ্জাবের হয়ে রঞ্জি খেলেন। ১৯৯৯৬-৯৭ মৌসুমে দু’জন এক সাথে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্টও খেলেন তখনকার ফিরোজ শাহ কোটলায়। এক সাথে একটি ওয়ানডেও খেলেন দু’জন। রাঠোরের বোনকে বিয়ে করেন কাপুর।

  • স্পেশাল মেনশন: টেরি অ্যাল্ডারম্যান ও রস এমারসন (অস্ট্রেলিয়া)

টেরি অ্যাল্ডারম্যান আশির দশকে অস্ট্রেলিয়া দলে খেলেন। তিনি হলেন একমাত্র বোলার যিনি দু’বার এক টেস্ট সিরিজে ৪০ উইকেট পেয়েছেন। আজকাল পাঁচ টেস্টের সিরিজ তো তেমন একটা হয় না। ফলে, এই রেকর্ড ভাঙা কঠিন।

টেরির বোন ডেনিস অ্যাল্ডারম্যানও সাতটি টেস্ট খেলেন। ডেনিসের বিয়ে হয় রস এমারসনের সাথে। এমারসন ক্রিকেটার নয়, ছিলেন আম্পায়ার। তিনি অবশ্য টেস্ট নয়, ১০ টি ওয়ানডেতে অন ফিল্ড আম্পায়ার হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন। এখানেও তিনি বিখ্যাত। কারণ, চাকিংয়ের জন্য তিনি স্বয়ং মুত্তিয়া মুরালিধরনকে ‘নো’ ডেকেছিলেন।

বিখ্যাত সেই নো-বল কাণ্ড
  • যেমন হবে একাদশ

ওপেনার: অবশ্যই সুনীল গাভাস্কার ও গুন্ডাপ্পা বিশ্বনাথ। জাতীয় দলেও এক সাথে ওপেন করত তারা।

তিন-চার-পাঁচ: মার্ক বুচার, অ্যালেক স্টুয়ার্ট (উইকেটরক্ষক) ও উমর আকমল। মার্ক বুচার ও অ্যালেক স্টুয়ার্ট জাতীয় দল কিংবা কাউন্টি ক্রিকেটে এক সাথে খেলছেন লম্বা সময়।

ছয়-সাত-আট: ড্যারেন লেহম্যান, জাহাঙ্গীর খান ও আশিষ কাপুর। একাদশে লেহম্যান ও কাপুর স্পিনিং অলরাউন্ডার। আর জাহাঙ্গীর খান হলেন পেস বোলিং অলরাউন্ডার।

লোয়ার অর্ডার: বাকা জিলানি, টেরি অ্যাল্ডারম্যান ও উসমান কাদির। জিলানি ও অ্যাল্ডারম্যান এখানে ডান হাতি পেসার। আর উসমান কাদির লেগ স্পিনার।

দ্বাদশ ব্যক্তি: ক্রেইগ হোয়াইট। তিনি অলরাউন্ডার। মিডল অর্ডারে ব্যাট করেন। বোলিংয়ে মিডিয়াম পেস কিংবা অফ স্পিন – দুটোই পারেন।

কোচ: বিক্রম রাঠোর। জাতীয় দল বলেন কিংবা ঘরোয়া ক্রিকেট – ভারতীয় এই কোচের কোচিং ক্যারিয়ারটা বেশ সমৃদ্ধ। নির্বাচক হিসেবেও কাজ করেছেন।

আম্পায়ার: কে আবার, অবশ্যই রস এমারসন।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...