‘সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়েছে তামিম’

তামিম ইকবালকে নিয়েই আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দল সাজিয়েছিল নির্বাচকরা। তবে আজ এই ওপেনার নিজেই নিশ্চিত করেছেন বিশ্বকাপে খেলবেন না তিনি। আর তামিমের এমন সিদ্বান্তকে সাহসী অ্যাখ্যা দিয়েছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। এবারের বিশ্বকাপে না খেললেও বোর্ড সভাপতি আশাবাদী পরের বিশ্বকাপে খেলবেন তামিম।

দীর্ঘ দিন ধরেই টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট থেকে দূরে রয়েছেন তামিম। এই ওপেনার দেশের হয়ে সর্বশেষ টি-টোয়েন্টি খেলেছেন গত বছরের মার্চে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। আর সর্বশেষ দুই মাস ধরে চোটের কারণে রয়েছেন মাঠের বাইরে। চলতি নিউজিল্যান্ড সিরিজও খেলছেন না তামিম। তামিমের জয়গায় এই সময় খেলেছেন লিটন দাস, সৌম্য সরকার ও নাঈম শেখ।

তাই তামিম মনে করছেন বিশ্বকাপেও তাঁর সরাসরি খেলা উচিত হবে না। এই সময় তাঁর পরিবর্তে যারা খেলেছেন বিশ্বকাপেও তাদেরই সুযোগ পাওয়া উচিত। তবে পাপন জানিয়েছেন তামিমকে নিয়েই বিশ্বকাপ স্কোয়াড সাজিয়েছিল নির্বাচকরা। তাদের প্রথম পছন্দও ছিলেন অভিজ্ঞ এই ওপেনার। তাই তামিমের এমন সিদ্বান্তকে সাহসী মনে করছেন বোর্ড সভাপতি।

পাপন বলেন, ‘আমাদের প্রথম পছন্দ, এই বিশ্বকাপেও ছিল। ওর ঘোষণার পর আর স্কোয়াডে থাকবে না। নির্বাচকরা যে দল দিয়েছিল সেখানে ও ছিল। তবে আর থাকছে না। আমার ধারণা ও যে সিদ্বান্ত নিয়েছে এটা কিন্তু সহজ সিদ্বান্ত না। সাহসী সিদ্বান্ত নেওয়াটাও কিন্তু বিরাট ব্যাপার। সবাই চায় আমি বিশ্বকাপে খেলি।’

পাপন আরো বলেন, ‘আমার দেখা সেরা ওপেনার হচ্ছেন তামিম ইকবাল। আমার দেখা সেরা অধিনায়ক মাশরাফি ও সেরা ক্রিকেটার সাকিব। আমি সব সময়ই এই কথা গুলো বলে আসছি। তামিম যদি দলে আসে তবে সে প্রথম পছন্দ থাকবে। ওকে বাদ দেওয়ার কোন প্রশ্নই আসেনা। এখানে একটা সমস্য হয়েছে অনেক দিন ধরে তামিম টি-টোয়েন্টি খেলছে না। নিউজিল্যান্ডে গিয়ে টি-টোয়েন্টি খেলেনি, জিম্বাবুয়েতে গিয়ে ওয়ানডে খেলে চলে আসছে টি-টোয়েন্টি খেলেনি। ওটা গেলো, অস্ট্রেলিয়ার সাথে সিরিজও খেলেনি, নিউজিল্যান্ডের সাথেও নেই।’

বিশ্বকাপ থেকে তামিম নাম প্রত্যহার করে নেওয়ার পর অনেকেই শঙ্কা প্রকাশ করছেন এখানেই হয়তো শেষ তামিমের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ার। এই ফরম্যাটে হয়তো আর ফিরবেন না অভিজ্ঞ এই ওপেনার। তবে পাপন আশাবাদী আগামী বছর অস্ট্রেলিয়াতে অনুষ্ঠিত হওয়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেই খেলবেন তামিম।

বোর্ড সভাপতি বলেন, ‘তবে বিশ্বকাপের পর আমাদের তো আরো অনেক খেলা আছে। সামনের বছর তো আরেকটা বিশ্বকাপ আছে। আমি আশা করি তামিম আবার টি-টোয়েন্টি স্কোয়াডে আসবে এবং সে বিশ্বকাপ খেলবে।’

গত মার্চে নিউজিল্যান্ডে বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ খেললেও পারিবারিক কারণে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ না খেলেই দেশে ফিরেছিলেন তামিম। জিম্বাবুয়েতেও টেস্ট ও ওয়ানডে সিরিজ খেললেও চোটের কারণে টি-টোয়েন্টি সিরিজ না খেলেই দেশে ফিরেছিলেন এই ওপেনার।

তখনই অনেকেই প্রশ্ন তুলেছিলেন চোট ও পারিবারিক কারণ দেখিয়ে ইচ্ছে করেই কি টি-টোয়েন্টি থেকে দূরে থাকছেন তামিম? তবে এই প্রশ্ন উড়িয়ে দিয়েছেন বোর্ড সভাপতি। তিনি মনে করেন ওয়ানডেতে অধিনায়ক হওয়ার কারণেই দেশের জন্য ঝুঁকি নিয়ে খেলেছেন তামিম।

পাপন বলেন, ‘আমি খারাপ কোন সেন্সে বলছি না। ওর চোট আছে খেলেনি। অনেকে প্রশ্ন করে ওর যদি চোট থাকে তবে ওয়ানডে খেললো কেমনে। আমি তাদেরকে বলবো ও যেহেতু ওয়ানডে অধিনায়ক ও অনেক ঝুঁকি নিয়ে খেলেছে। ও কিন্তু দেশের জন্য আগেও ঝুঁকি নিয়েছে। শ্রীলঙ্কার সাথে ঐ ম্যাচটার কথা মনে নেই আপনাদের। তামিম ঐ টাইপের, ও কোন দায়িত্ব পেলে সিরিয়াস থাকে। যেহেতু অনেক দিন ধরে খেলছে না, চোটও ছিল। ও মনে করেছে না খেলাই ভালো। সিদ্বান্ত নেওয়ার আগেই আমার সাথে কথা বলেছে। এরপর সিদ্বান্ত নিয়েছে। এটা তাঁর ব্যক্তিগত সিদ্বান্ত।’

সব কিছু বিবেচনা করে পাপনের কাছে মনে হচ্ছে সঠিক সিদ্বান্তই নিয়েছেন তামিম। কারণ এই দলটা গত কয়েকটা সিরিজ ধরেই ভালো পারফরম্যান্স করে যাচ্ছে। তাই বিশ্বকাপের আগে দলে পরিবর্তন করাটাও ভালো হতো না বলে মনে করছেন বোর্ড সভাপতি। পাপন জানিয়েছেন তামিমও এগুলো ভেবেই নিজকে বিশ্বকাপ থেকে সরিয়ে নিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘সরাসরি বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়া নিয়ে অনেকের মনে একটা প্রশ্ন থাকতেই পারে। আর দ্বিতীয় কারণ এখনকার দলটা ভালো করছে। হতে পারে আমাদের নিজেদের কন্ডিশনে। জিম্বাবুয়েতেও ভালো খেলেছে। একটা দল যখন ভালো খেলতে থাকে তার ভিতর খুব একটা পরিবর্তন করতে অনেকেই চায় না। এটাও একটা কারণ হতে পারে। সব দিক দিয়ে চিন্তা করে ও যে কথা গুলো বলেছে ওর কথা গুলা খুব ভালো কথায় বলেছে। ও জানে ওকে স্কোয়াডে রাখা হলে ও খেলবেই। ও মনে করেছে এটা হলে অনেকের প্রতি অবিচার হতে পারে, এটা একটা কারণ।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link