মিশেল স্টার্ক ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন উইকেটরক্ষক হিসেবে। পরে ফাস্ট বোলার বনে যান। নর্দার্ন ডিস্ট্রিক্টের হয়ে নয় থেকে ১৪ বছর বয়স পর্যন্ত তিনি উইকেটরক্ষকই ছিলেন, আদর্শ মানতেন স্বয়ং ইয়ান হিলিকে।
এই ইয়ান হিলির ভাতিজি এলিসা হিলির সাথে ও নর্দার্ন ডিস্ট্রিক্ট দলের পরিচয় হয় স্টার্কের কিশোর বয়সে। এলিসা তখন ফাস্ট বোলার হতে চাইতেন। পরে অবশ্য উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান বনে যান।
একেই বলে নিয়তি! উইকেটরক্ষক হিসেবে কিশোরে ক্যারিয়ার শুরু করা মিশেল স্টার্ক আজ ফাস্ট বোলার। আর ফাস্ট বোলার হতে চাওয়া এলিসা হিলি আজকে উইকেটররক্ষক ব্যাটসম্যান। যাকে আদর্শ মানতেন, সেই কিংবদন্তি ইয়ান হিলির ভাতিজিকেই জীবনের সাথী হিসেবে পেয়েছেন স্টার্ক।
২০১৫ সালে তাঁদের বাগদান হয়। এরপর ২০১৬ সালের ১৫ এপ্রিল বিয়ে করেন। স্টার্ক ২০১৫ সালে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে বিশ্বকাপ জিতেন, সেবার আসরের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারী ছিলেন। অন্যদিকে, এলিসা হিলি মেয়েদের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতেন পাঁচবার। এর মধ্যে ২০১৮ সালে সর্বোচ্চ রান করে টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জিতেন। এরপর ২০২০ সালে তিনি ছিলেন ফাইনালের সেরা খেলোয়াড়।
হিলি-স্টার্কের মত দেশের হয়ে টেস্ট খেলেছেন এরকম আর মাত্র দু’টি জুটি আছে। তাঁরা হলেন ইংল্যান্ডের – রজার প্রিডক্স ও রুথ ওয়েস্টব্রুক, এবং শ্রীলঙ্কার গাই ডি অ্যালিস ও রাসাঞ্জালি ডি সিলভা। তবে, দেশের হয়ে বিশ্বকাপ জিততে পেরেছেন কেবল হিলি-স্টার্ক জুটিই!
‘চ্যাম্পিয়ন’ হওয়ার দিক থেকে এই দম্পতি রীতিমত কিংবদন্তি। দু’জনে গুণে গুণে জিতেছেন নয়টা বিশ্বকাপের শিরোপা। অস্ট্রেলিয়ার নারী ক্রিকেট দলটা তাঁদের পুরুষ দলের চেয়েও অজেয়। ফলে, এলিসা হিলি তাঁর স্বামীর চেয়ে বিশ্বকাপ জয়ের চেয়ে বড় ব্যবধানে এগিয়েই আছেন। তিনি জিতেছেন সাতটি বিশ্বকাপ, স্টার্ক জিতেছেন দুটি বিশ্বকাপ। আর যা বোঝা যাচ্ছে, স্ত্রীর চেয়ে বিশ্বকাপ ট্রফির সংখ্যা কম রেখেই ক্যারিয়ারের ইতি টানতে হবে স্টার্ককে।
হিলি অস্ট্রেলিয়া নারী দলের হয়ে পাঁচটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপা জয় করেন। আর ২০১৩ সালে প্রথম জিতেন ওয়ানডে বিশ্বকাপের শিরোপা। তখনও পর্যন্ত বিশ্বকাপে নিজেরে খাতাই খুলতে পারেননি স্টার্ক। ২০১৫ সালে এসে অপেক্ষার অবসান হয়। দেশের মাটিতে অস্ট্রেলিয়ার পুরুষ দল নিজেদের ইতিহাসে পঞ্চম বারের মত ওয়ানডে বিশ্বকাপের শিরোপা জিতে, স্টার্ক জিতেন নিজের প্রথম বিশ্বকাপ। সেই বিশ্বকাপ জয়ে তিনি রাখেন বড় অবদানও।
তবে, টি-টোয়েন্টির গেরোটা কোনো ভাবেই খুলছিল না। সংযুক্ত আরব আমিরাতে সদ্য শেষ হওয়া বিশ্বকাপেও ঠিক ফেবারিট ছিল না অস্ট্রেলিয়া দল। কারণ, বিশ্বকাপের আগেই টানা পাঁচটি টি-টোয়েন্টি সিরিজে তাঁরা হারে।
তবে, সব হিসাব নিকাশ আর পরিসংখ্যানকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে প্রথমবারের মত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপা জয় করে নেয় অস্ট্রেলিয়া। ওয়ানডের পাঁচটি বিশ্বকাপ ও দু’টি আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয়ের পর ২০২১ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও নাম উঠল অস্ট্রেলিয়া পুরুষ ক্রিকেট দলের।
ফাইনাল বা গোটা আসর কোনোটাই স্টার্কের জন্য খুব সুবিধারা না গেলেও সেটা বিশ্বকাপ জয়ের পথে কোনো বাধা হয়নি। এবার অন্তত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ট্রফিতে স্ত্রীর পাশে নাম লেখালেন, ১৪ নভেম্বর অস্ট্রেলিয়ার সাথে সাথে মিশেল স্টার্কেরও একটা চক্রপূরণ হল।
যদিও, এখানেও তাঁর স্ত্রী ৫-১ ব্যবধানে এগিয়ে আছে। তবে, একটা কথা ঠিক যে টি-টোয়েন্টি কিংবা ওয়ানডে – দুই ফরম্যাটেই বিশ্বকাপ জয়ী একমাত্র দম্পতি এখন হিলি-স্টার্ক। এর আগে আর কোনো ক্রিকেটীয় দম্পতি এক ফরম্যাটের শিরোপাই জিততে পারেননি। সেদিক থেকে এই দম্পতি এখন রীতিমত অজেয়। শুধু ক্রিকেটেই নয়, খেলাধুলার জগতেই এমন সফল দম্পতি খুঁজে পাওয়া মুশকিল!
ওহ হ্যাঁ, সদ্যই ওয়ানডে বিশ্বকাপেও স্বামীর চেয়ে আবার এগিয়ে গেলেন হিলি। ১৭০ রানের এক অনন্য ইনিংস খেলে ২০২২ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপ জিতলেন তিনি। বলাই বাহুল্য, সব রকম বিশ্বকাপ মিলেই এটা ফাইনালের সর্বোচ্চ রানের ইনিংস।