সারা বছর পরিশ্রম করে ক্রিকেটাররা নিজেদের মানসিক আর শারিরিকভাবে ফিট রাখেন বৈশ্বিক আসরগুলোর জন্য। পেস বোলারদের জন্য কাজটা একটু বেশিই কঠিন, ইনজুরি যে তাঁদের নিত্যসঙ্গী।
তবে এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার পেস সহায়ক কন্ডিশনে আগুন ঝরাতে দেখা যাবে বেশ কয়েকজন বিধ্বংসী পেসারকে, যারা কিনা মূহুর্তের মাঝেই ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিতে সক্ষম। আসুন দেখে নেয়া যাক, সেই পাঁচ পেসারকে যারা হতে পারেন আসন্ন টি- টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি।
- হারিস রউফ – পাকিস্তান
সাম্প্রতিক সময়ে বল হাতে দারুন ফর্মে আছেন পাকিস্তানি পেসার হারিস রউফ। বিশেষ করে শাহীন আফ্রিদির ইনজুরির পর থেকে পাকিস্তানের বোলিং লাইন আপকে টেনেছেন অনেকটা একা হাতেই। ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে ছিলেন অপ্রতিরোধ্য। ডেথ ওভারে তাঁর দ্রুতগতির ইয়র্কার সামলানো ব্যাটসম্যানদের জন্য দু:সাধ্যই বটে।
এবারের বিশ্বকাপের আসর বসছে যেখানে সেই অস্ট্রেলিয়ার আলোবাতাসেই পরিপূর্ণ পেসার হয়ে ওঠা হারিসের। বিগব্যাশে খেলার অভিজ্ঞতাও আছে এই পেসারের। মেলবোর্ন স্টারের হয়ে ১৯-২০ মৌসুমে শিকার করেছিলেন ২০ উইকেট। গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও ভারত এবং নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জয় পাওয়া ম্যাচে বল হাতে আলো ছড়িয়েছিলেন হারিস। এবারের বিশ্বকাপেও হারিস চাইবেন চেনা আঙ্গিনায় প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানদের নাভিশ্বাস তুলতে।
- জশ হ্যাজেলউড – অস্ট্রেলিয়া
অস্ট্রেলিয়ার বোলিং লাইনআপে গ্লেন ম্যাকগ্রার যোগ্য উত্তরসূরি জশ হ্যাজেলউড। টানা পারফেক্ট লাইন-লেংথে বল করে ব্যাটসম্যানদের বাধ্য করেন উইকেট ছুঁড়ে আসতে। গত বিশ্বকাপের ফাইনালে মূলত তাঁর স্পেলের কাছেই হেরে গিয়েছিল নিউজিল্যান্ড, ১৬ রানে তিন উইকেট কিউইদের ব্যাটিংয়ের মেরুদন্ড গুঁড়িয়ে দিয়েছিলেন এই পেসার।
অজিদের হয়ে ৩৬ ম্যাচে ৫২ উইকেট নিয়ে তিনিই বর্তমানে আইসিসি টি- টোয়েন্টি বোলিং র্যাংকিং এর এক নম্বর বোলার। ঘরের মাঠে চেনা কন্ডিশনে তিনি অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠতে পারেন। তাঁর লিথাল বাউন্সার এবং ইয়র্কার নিশ্চিতভাবে ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়াবে ব্যাটসম্যানদের কাছে।
- ট্রেন্ট বোল্ট – নিউজিল্যান্ড
সাদা বলের ক্রিকেটে নতুন বলে দুধর্ষ এক বোলারের নাম ট্রেন্ট বোল্ট। পাওয়ার প্লেতে তাঁর সুইং এবং ইয়র্কার সামলানোর জবাব থাকে না প্রতিপক্ষের ব্যাটারদের কাছে। কিউইদের হয়ে এখনও পর্যন্ত ৫০টি টি-টোয়েন্টি খেলে তাঁর সংগ্রহ ৬৬ উইকেট। আরব আমিরাতে গত টি- টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দলকে ফাইনালে তুলতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা ছিল তাঁর, ৭ ম্যাচে ব্যাটসম্যানদের সাজঘরে ফেরত পাঠিয়েছেন ১৩ বার।
আশ্চর্যজনক কিছু না ঘটলে ৩৩ বছর বয়সী বোল্টের এটাই শেষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। নিজের শেষটা তিনি নিশ্চয়ই রাঙিয়ে তুলতে চাইবেন দলকে শিরোপা জেতানোর পাশাপাশি নিজে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি হয়ে। অন্তত তাঁর যা সামর্থ্য তাতে অস্ট্রেলিয়ার পেস বোলিং কন্ডিশনে তিনি নিজের সেরাটা দিতে পারলে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারির খেতাবের আশা করাটা অমূলক নয় বটেই।
- মিশেল স্টার্ক – অস্ট্রেলিয়া
দুর্দান্ত গতি আর অসাধারণ ইয়র্কারে ব্যাটসম্যানদের পরাস্ত করতে মিচেল স্টার্কের জুড়ি মেলা ভার। জাতীয় দলে পেস বোলিং লাইন আপের নেতৃত্বভার থাকে তাঁর কাঁধেই। বড় আসরগুলোতে নিজের সেরাটা দেবার জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত থাকতে আইপিএল সহ বিশ্বব্যাপি ফ্যাঞ্চাইজি লিগ এড়িয়ে চলেন স্টার্ক।
ঘরের মাঠে চেনা কন্ডিশনে স্টার্কের বাউন্সার আর ইয়র্কার সামলানো ব্যাটসম্যানদের জন্য দু:সাধ্য হয়ে উঠতে পারে। টি-টোয়েন্টি তাঁর রেকর্ডও ঈর্ষণীয়, ৫৪ ম্যাচ খেলে এর মাঝেই তুলে নিয়েছেন ৭০ উইকেট। ইকোনমিটাও দুর্দান্ত, মাত্র ৭.৫০। এবারের বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারির তালিকায় বাঁ-হাতি স্টার্কের নামটা দেখলে তাই অবাক হবেন না যেন।
- শাহীন শাহ আফ্রিদি – পাকিস্তান
বয়স মাত্র ২২ বছর হলেও এর মাঝেই বিশ্বক্রিকেটের অন্যতম সেরা পেসার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন পাকিস্তানি পেসার শাহীন শাহ আফ্রিদি। পূর্বসূরি ওয়াসিম আকরাম-শোয়েব আকতাররা যা পারেননি, তাই করে দেখিয়েছেন শাহীন। তাঁর অনবদ্য বোলিংয়ের সুবাদেই বিশ্বমঞ্চে প্রথমবারের মত ভারতের বিপক্ষে জয় পেয়েছে পাকিস্তান।
গত বিশ্বকাপে নতুন বলে তাঁর গতি আর সুইংয়ের কোনো জবাব ছিল না ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের কাছে। ইনজুরির কারণে এবারের এশিয়া কাপ খেলতে না পারলেও বিশ্বকাপে পুরোপুরি ফিট আফ্রিদিকে পাওয়া যাব বলে আশাবাদী পাকিস্তান। নতুন বলে দারুণ দক্ষতা প্রশ্নাতীত, তাঁর ইনসুইং আর ইয়র্কার ব্যাটসম্যানদের জন্য মৃত্যুকূপের সামিল। এবারের বিশ্বকাপে তাই পাকিস্তানি সমর্থকরা চেয়ে থাকবেন শাহিন আফ্রিদির পারফরম্যান্সের দিকে।