খুব কাছে চলে এসেছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, আগামী মাসে অস্ট্রেলিয়ায় মাঠে গড়াবে এই বৈশ্বিক টুর্নামেন্ট। বর্তমানে টি-টোয়েন্টি র্যাংকিংয়ে এক নম্বরে থাকা ভারত স্বাভাবিকভাবেই শিরোপার দৌড়ে সবচেয়ে ফেভারিট দলগুলোর একটি। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়টা ভাল যাচ্ছে না তাদের। এশিয়া কাপ এবং দ্বিপাক্ষিক সিরিজগুলোর পারফরম্যান্স মোটেই সন্তুষ্ট করতে পারেনি ভক্ত-সমর্থকদের।
এশিয়া কাপে দুর্দান্ত শুরুর পরেও সুপার ফোরে অপ্রত্যাশিত বিদায় নিয়েছে রোহিত শর্মার দল। এরপর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ২০৮ রান করেও হেরে গিয়েছে। এই সব ব্যর্থতার ফলেই ফুঁটে উঠেছে ভারতের বেশ কয়েকটি দুর্বলতা। বিশ্ব আসরে অংশ নেয়ার আগে এই দুর্বলতাগুলোই দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছে টিম ম্যানেজমেন্টের।
- ডেথ বোলিং
কাগজে-কলমে ভারতের বোলিং লাইনআপ বিশ্বের অন্যতম সেরা। কিন্তু মাঠের খেলায় এখন সেটা খুব বেশি বোঝা যায় না। বিশেষ করে ডেথ ওভারে বোলারদের ছন্নছাড়া বোলিং শঙ্কিত করে তুলেছে। জাসপ্রিত বুমরাহ এর উপস্থিতিতে অনেকটা নির্ভার থাকলেও তাঁর অনুপস্থিতিতে কেউই আস্থা হয়ে উঠতে পারছে না। আর্শ্বদীপ সিং এশিয়া কাপে ভাল করলেও হার্শাল প্যাটেলের কাছে জায়গা হারিয়েছেন।
কিন্তু হার্শালের প্রত্যাবর্তন মোটেই ভাল হয়নি, অজিদের বিপক্ষে দুই ইনিংসের শেষ দিকেই বেহিসেবী বোলিং করেছেন তিনি। অন্যদিকে ভুবনেশ্বর কুমার অনেকদিন থেকেই ডেথওভারে ছন্দহীন পারফর্ম করছেন। সব মিলিয়ে বিশ্বকাপে বুমরাহ এর পাশাপাশি অন্তত আরও এক-দুইজন বোলার প্রয়োজন ভারতের যারা ডেথ ওভারে রান আটকে রাখতে পারবেন।
- ফিল্ডিং
গত কয়েক বছরে ফিল্ডিং বিভাগে ভারত অন্যদেশগুলোর আদর্শ হয়ে উঠেছিল। অথচ মিস ফিল্ডিং আর ক্যাচ মিস এখন যেন ভারতের সঙ্গী হয়ে উঠেছে। সাম্প্রতিক ম্যাচগুলোতে বেশ কয়েকটি সহজ ক্যাচ মিস করেছে ভারতীয় ফিল্ডাররা। এশিয়া কাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে আর্শীবাদ সিংয়ের সেই ক্যাচ মিস অনেকদিন মনে থাকবে দর্শকদের।
এছাড়া অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথম টি-টোয়েন্টিতে তিনটি ক্যাচ মিস করেছে ভারত, আর এর ফলেই ২০০ এর বেশি রান করেও জয়ের স্বাদ পায়নি রোহিত, বিরাটরা। বিশ্বকাপের মত বড় আসরে ফিল্ডিং প্রায় ব্যবধান গড়ে দেয় তাই এক্ষেত্রে নিজেদের সেরাটাই দিতে হবে ভারতীয়দের।
- বোলিং কম্বিনেশন
বিশ্বকাপকে সামনে রেখে ভারত সর্বশেষ সিরিজগুলোতে টানা পরীক্ষা নিরীক্ষা করেছে একাদশ নিয়ে। কিন্তু এখন পর্যন্ত নির্দিষ্ট কোন বোলিং লাইনআপে থিতু হতে পারেনি টিম ম্যানেজমেন্ট। জাসপ্রিত বুমরাহ ইনজুরি থেকে ফিরলেও ভুবনেশ্বর কুমার, হার্শাল প্যাটেলের অফ ফর্ম এবং জাদেজার ছিটকে যাওয়া নতুন করে চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ফিট থাকলে একাদশে বুমরাহ অটো চয়েজ, নতুন বল কাজে লাগানোর জন্য ভুবনেশ্বরও হয়তো সুযোগ পেতে পারেন; অলরাউন্ডার হিসেবে হার্দিক পান্ডিয়া এবং অ্যাক্সার প্যাটেল প্রায় নিশ্চিত। তবে তৃতীয় পেসার কে হবেন – সেটি এখন প্রশ্ন। বিশ্বকাপের আগের ম্যাচগুলোতে এই প্রশ্নের উত্তর বের করতে না পারলে বিপদ বাড়বে টিম ইন্ডিয়ার।
- নড়বড়ে টপ অর্ডার
টি-টোয়েন্টিতে ভারতের ব্যাটিং লাইনআপ যে কোনো দলের ঈর্ষার কারণ। বিরাট, রোহিতদের পাশাপাশি সুরিয়াকুমার, হার্দিক পান্ডিয়ারা এখন রীতিমতো বোলারদের ত্রাস হয়ে উঠেছে। কিন্তু ওপেনার লোকেশ রাহুলের অফ ফর্ম ভাবাচ্ছে ভারতকে।
এছাড়া টপ অর্ডারে খেলা রোহিত, বিরাট, রাহুল তিনজনই কিছুটা রয়ে-সয়ে খেলায় পাওয়ার প্লের সুবিধা পুরোপুরি কাজে লাগাতে ব্যর্থ হচ্ছে ভারত। আশার কথা যে, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচে ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছে ভারতের ওপেনাররা, এবার ধারাবাহিকতা দেখাতে পারলেই অনেকটা নিশ্চিন্তে থাকতে পারবে ভক্ত-সমর্থকরা।
- দীনেশ কার্তিক নাকি ঋষাভ পান্ত
ভারতের হয়ে উইকেট কিপিং করবেন কে – দিনেশ কার্তিক নাকি ঋষাভ পান্ত। এমন বিতর্ক এখন সর্বত্র, কেননা টিম কম্বিনেশন অনুযায়ী দুইজনকে একই সাথে খেলানো বেশ কঠিন। তাই ফিনিশার কার্তিক অথবা মিডল অর্ডার ব্যাটার পান্তের মধ্যে যে কোনো একজনকে বেঞ্চে থাকতে হবে। দুই ভিন্ন ঘরানার ব্যাটসম্যানের এই দ্বৈরথে অবশ্য দিনেশ কার্তিক এগিয়ে আছেন।
জাতীয় দলে প্রত্যাবর্তনের পর থেকে ফিনিশিংয়ের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন এই বর্ষীয়ান তারকা। অন্যদিকে তরুণ পান্ত অন্য দুই ফরম্যাটে রান পেলেও টি-টোয়েন্টিতে এখনও ছন্দহীন। অবশ্য পান্তকে বাদ দিলে লাইনআপে বামহাতি ব্যাটারের ঘাটতি দেখা দিবে। এখন আপাতত দেখার বিষয় টিম ম্যানেজমেন্ট কার হাতে দস্তানা তুলে দেয়।