আফগানিস্তান, রেডি ফর নেক্সট চ্যাপ্টার!

ক্রিকেটাঙ্গনে আফগানিস্তানের পথচলাটা খুব বেশিদিনের নয়। হাঁটি হাঁটি পা পা করে চলা দেশটি হুট করেই এবার এশিয়া কাপের আসরে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিচ্ছে। এ যেন নতুন এক আফগানিস্তান! ক্রিকেট বিশ্বে দেরিতে পা রাখলেও নিজেদের জাত চেনাতে ভুল করেনি তারা। অথচ এইতো কদিন আগেও ক্রিকেটে কেবল নতজানু একটি দেশ হিসেবেই পরিচিত ছিল তাঁরা।

কি দুর্দান্ত নৈপুণ্যে শ্রীলঙ্কাকে বধ করে এশিয়া কাপের যাত্রাটা শুরু করেছে! তারপরের ম্যাচে বাংলাদেশকেও হারিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে। পরপর শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশকে হারিয়ে সবার আগে এশিয়া কাপের সেকেন্ড রাউন্ড নিশ্চিত করলো আফগানরা। এশিয়া কাপে তাঁরা প্রমাণ করেছে তাঁদের দলেই মানসম্পন্ন ব্যাটসম্যান, ভালো বোলার এবং মানসম্পন্ন ফিল্ডার রয়েছে।

দারুণ ভারসাম্যপূর্ণ একটি দলই বটে। তাঁদের দলের ক্রিকেটাররা বিশ্বব্যাপী অনুষ্ঠিত টি-টোয়েন্টি লিগগুলোতে বেশ সরব। মূলত এই কারণেই টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটটাতে তাঁরা বেশ আত্মবিশ্বাসী। তাছাড়া দুবাই ও শারজাহ-র মাঠের সাথে বারংবার খেলার অভিজ্ঞতা এবারের এশিয়া কাপে আফগানিস্তান দলের জন্য দারুণ এক প্লাস পয়েন্ট তাঁদের জন্য।

এতোকাল আফগানিস্তানকে নিয়ে ক্রিকেটবিশ্বের সমালোচনা ছিলো যে তাঁরা রান তাড়া করে জিততে পারেনা। সেই সমালোচনার যোগ্য জবাবটা এশিয়া কাপেই দিয়েছে তাঁরা। চলতি আসরে দুটি ম্যাচেই রান তাড়া করে জয় ছিনিয়ে এনেছে তাঁরা। তাও তাঁদের চেয়ে শক্তিশালী দল বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার সাথে।

আধুনিক টি- টোয়েন্টির সাথে তাল মিলিয়ে খেলতে পারার মতো ব্যাটার রয়েছে দলটিতে। হজরতউল্লাহ জাজাই, রহমানউল্লাহ গুরবাজরা, নাজিবুল্লাহ জাদরানের মতো পাওয়ার হিটার তৈরী হয়েছে দলটিতে। অন্যদিকে ক্রিকেট বিশ্বে আফগানিস্তানের এই দ্রুত উত্থানের পিছনে অন্যতম অবদানটা দেশটির স্পিনারদের। রশিদ খান, মুজিবুর রহমান, অভিজ্ঞ মোহাম্মদ নবির মতো বিশ্বমানের দুর্দান্ত স্পিনার রয়েছে দলটিতে। ওদিকে ফজল হক ফারুকি, নাভিন উল হক সাম্প্রতিক সময়ে  আফগান পেস বিভাগের দায়িত্বটা নিজের করে নিয়েছেন।

সুপার ফোরে আফগানিস্তান। সামনে বন্ধুর পথ। আরও কঠিন বিরোধী দলকে মোকাবেলা করতে হবে। যদিও নতুন এই আফগানিস্তানের ভয়ডর নেই এই নিয়ে। বরং তাঁদের কণ্ঠে ঝরছে আশার বাণী। আফগানিস্তানের কোচ হলেন প্রাক্তন ইংল্যান্ড ব্যাটসম্যান জোনাথন ট্রট। আর পাকিস্তানের প্রাক্তন ফাস্ট বোলার উমর গুল বোলিং কোচের দায়িত্বে আছেন। সামনে এই আসরের শক্তিশালী দলের মোকাবেলা করতে ইতোমধ্যেই প্রস্তুত তাঁরা। সুপার ফোরে যাওয়ার পর অধিনায়ক মোহাম্মদ নবী আত্মপ্রত্যয়ী কণ্ঠে জানিয়েছেন, ‘আশা করি আমরা পরের রাউন্ডে বড় দলের বিপক্ষে ভালো করব।’

ঘোষণাটা পরিস্কার। এশিয়া কাপটা জিততেই এসেছে তাঁরা। অথচ, দলটার ক্রিকেট ইতিহাস খুব আগের কথা নয়। ১৯৯৫ সালে আফগানিস্তানের প্রথম ক্রিকেট বোর্ড গঠিত হয় এবং ২০০১ সালে প্রথম জাতীয় দল। ২০১৭ সালে টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার ফলে সমস্ত বড় আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে সরাসরি খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে তাঁরা।

অবশ্য এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল আয়োজিত এসিসি টিটোয়েন্টি কাপের শিরোপার তিনবারের একক বিজয়ী ও একবার ওমানের সাথে যৌথভাবে জয়ী। এছাড়া দলটির এতোদিন বলার মতো তেমন কোন অর্জন ছিলনা। তবে হয়ত এই এশিয়া কাপেই তাঁরা রচনা করতে যাচ্ছে নতুন ইতিহাসের। যা তাঁদের ক্রিকেটকে রাতারাতি বদলে দিবে। বিশ্বক্রিকেটে আফগানদের আন্ডাররেটেড হয়ে থাকার দিনগুলোর অবসান ঘটাবে।

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link