টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দল ঘোষণা করার আগ পর্যন্ত ভারত সর্বশেষ সিরিজগুলোতে স্কোয়াড নিয়ে নানাভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছে। কিন্তু প্রায় সময়ই দলে রবিচন্দ্রন অশ্বিনের জায়গা ছিল নিশ্চিত। সব ম্যাচে একাদশে সুযোগ না পেলেও রোহিত শর্মার কাছে এই অভিজ্ঞ স্পিনার ছিলেন গুরুত্বপূর্ণ একজন; বিশ্বকাপ স্কোয়াডেও তাই স্বাভাবিকভাবেই রয়েছে অশ্বিনের নাম।
সাম্প্রতিক সময়ে রবিচন্দ্রন অশ্বিনের বোলিং দেখার পর ক্রিকেট বিশ্লেষকদের মনে প্রশ্ন জেগেছে – অফ স্পিনার অশ্বিন কেন টি-টোয়েন্টিতে খুব বেশি অফ স্পিন ডেলিভারি করেন না? একই সাথে তাঁর উইকেট তুলে নেয়ার সামর্থ্য নিয়েও রয়েছে সংশয়। কোন ম্যাচে ব্রেক থ্রু প্রয়োজন হলে রোহিত শর্মা কি অশ্বিনের উপর ভরসা করবে নাকি বল তুলে দিবে যুজবেন্দ্র চাহাল কিংবা জাসপ্রিত বুমরাহর হাতে?
এটি একটি জটিল প্রশ্ন কারণ অশ্বিনের এমন বোলিং স্টাইলে উইকেট শিকার করার সম্ভাবনা কমে যায়। তবে আগের মত অফ ব্রেক বোলিং করে তিনি চাইলে উইকেট তুলে নিতে পারেন। কিন্তু কেন অশ্বিন হঠাৎই অফ স্পিন ছেড়ে ক্যারম ডেলিভারির উপর বেশি নির্ভর করছেন?
ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) সর্বশেষ আসরে রবিচন্দ্রন অশ্বিন প্রায় সময়ই ক্যারম বল করেছেন। ডাগআউটে বসে থাকা কুমার সাঙ্গাকারা এতে সন্তুষ্ট হননি, টুর্নামেন্ট শেষ হওয়ার পর সাবেক এই লঙ্কান ক্রিকেটার বলেন, ‘তাঁর জন্য ভাবার এবং উন্নতির অনেক জায়গা রয়েছে। বিশেষ করে অফ স্পিনের ক্ষেত্রে, তাকে অফ স্পিন আরো বেশি পরিমাণে করতে হবে।’
এটা স্পষ্ট যে, টেস্ট ক্রিকেটে যেমন অফ স্পিন করেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন, সেটির পরিবর্তে টি-টোয়েন্টিতে দ্রুতগতির ক্যারম বল করাই তাঁর লক্ষ্য। তিনি মূলত এখন অফ স্পিনকে তাঁর বোলিংয়ের ভেরিয়েশন হিসেবে ভাবছেন।
আর অশ্বিনের অফ স্পিন ডেলিভারির গুরুত্ব জানা আছে দেখেই এমন পরিবর্তন দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে। আইপিএলে নিজের অফ স্পিন দিয়ে রোহিত শর্মার মত ব্যাটসম্যাকেও বোকা বানিয়েছিলেন অশ্বিন। অথচ এখন তিনি অনিয়মিতভাবে অফ ব্রেক বোলিং করে থাকেন।
নিজের ইউটিউব চ্যানেলে অশ্বিন প্রায় তাঁর টি-টোয়েন্টি অ্যাপ্রোচ নিয়ে কথা বলে। এই ডানহাতি স্পিনার জানান যে তিনি মূলত নিয়ন্ত্রিত বল করে ব্যাটারদের উপর চাপ সৃষ্টি করতে চান। ব্যাটারকে বড় শট খেলার সুযোগ না দিতে তিনি ভ্যারিয়েশন ব্যবহার করেন। এককথায় অশ্বিন রক্ষণাত্মক বোলিং করে থাকেন।
সত্যি বলতে ক্যারম বল রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে আরো পরিপূর্ণ করে তুলেছে। কিন্তু যে-ই অফ স্পিন তাকে এত এত খ্যাতি এনে দিয়েছে, নির্দিষ্ট ফরম্যাটে সেই অফ স্পিনকে দূরে সরিয়ে রাখার রহস্য কি – বিশেষ করে তিনি অফ স্পিনেও যথেষ্ট সফল ছিলেন।
ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ততম সংস্করণে রবিচন্দ্রন অশ্বিন শুধুই একজন স্পিনার হয়ে উঠেছেন। এখন আর তাকে অফ স্পিনার বলে চিহ্নিত করার কোন কারণ নেই। ক্যারম বল এই ক্রিকেটারকে অফ স্পিনের উপর অতিনির্ভরশীলতা থেকে দূরে রেখেছে। এছাড়া এই ক্যারম বোলিংয়ের মাধ্যমে ব্যাটারদের বড় শট খেলার ইচ্ছে দমিয়ে রাখতে পারেন অশ্বিন। সেই সাথে ক্যারম বোলিংয়ে তাঁর বৈচিত্র্য ব্যাটারকে ভাবতে বাধ্য করে।
আরেকটা প্রশ্ন তাই থেকেই যায় – দলের যখন উইকেট প্রয়োজন হবে, অশ্বিন তখন কতটা ভরসাযোগ্য। রান আটকানো, ব্যাটারের উপর চাপ তৈরির কাজে সফল অশ্বিন এক্ষেত্রে পিছিয়ে আছেন। তাঁর ক্যারম বল আগের মত উইকেট তুলে নিতে পারছে না।
রবিচন্দ্রন অশ্বিন হয়তো দাবি করতেই পারেন এই ক্যারম বল তাকে রঙিন পোশাকের দলে পুনরায় জায়গা করে দিয়েছে। কিন্তু পরিস্থিতি বিবেচনায় তাকে অফ স্পিনের ব্যবহারও করতে হবে ঠিকঠাক। শুধু রান আটকানো নয়, বিশ্বকাপে এই অভিজ্ঞ ক্রিকেটারকে উইকেট শিকারের দিকেও নজর দিতে হবে। কেননা অশ্বিনের উপর ভক্ত-সমর্থকদের প্রত্যাশা একটু বেশিই।