অভিমানে রানের পিছে ছুটে চলেছেন রাহানে!

রাহানের এই ফিরে আসা যেন এক জীবন শিক্ষাও বটে। জীবন অবেহলা ছুড়ে দিলে ভেঙে না পড়ে নিজের কম্ফোর্ট জোন থেকে বেরিয়ে,  বুক চিতিয়ে লড়াইটা চালিয়ে যেতে হয় । তবেই কষ্ট আর অবহেলাকে  রূপান্তর করা যায় সাফল্যের পথে।

ভালোবেসে ভালোবাসার প্রতিদান হিসেবে কেও অবহেলা চায় কি! ভাঙা হৃদয় নিতে চায় প্রতিশোধ, জাগায় সফল হবার বিভোর নেশা। অজিঙ্কা রাহানের গল্পটাও যেন একই সূত্রে গাথা। তবে তার প্রতিশোধ তলোয়ার দিয়ে নয়, বরং ব্যাট হাতে। ৩৬ বছর বয়সেও টি-টোয়েন্টির মতো কঠিন ফরম্যাটে ব্যাট হাতে ঝড় তুললেন সৈয়দ মুশতাক আলী ট্রফিতে। টুর্নামেন্টের সেমিফাইনালে বারোডার বিপক্ষে ৫৭ বলে ৯৮ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলে দলকে নিলেন ফাইনালে।

রাহানে কখনোই টি-টোয়েন্টি বা মারকাটারি ধরনের ব্যাটার ছিলেন না। এজন্যই ভারতীয় জাতীয় দলের বিবেচনার বাইরেই ছিলেন অধিকাংশ সময়। ভারতের হয়ে শেষবার টি-টোয়েন্টি খেলেছিলেন ২০১৬ সালে, আর ওয়ানডে ২০১৮ সালে। তবে ভারতের টেস্ট দলে তিনি ছিলেন অন্যতম নির্ভরযোগ্য নাম। সবশেষ ২০২৩ সালে রাহানে ভারতের হয়ে মাত্র তিনটি টেস্ট খেলেছিলেন। তার মধ্যে আইসিসি বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল ছিল একটি। যেখানে দলের অধিকাংশ ব্যাটার ব্যর্থ, রাহানে ৮৯ ও ৪৬ রানের দুটি গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলেছিলেন।

ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগেও চার-ছক্কার ডামাডোলে নিজেকে মানাতে পারেননি কখনো সেভাবে। কিন্তু, আইপিএলে ২০২৩ সালে তিনি যেন ফিরে এলেন নতুনভাবে। চেন্নাই সুপার কিংসের হয়ে অসাধারণ পারফরম্যান্স করে দলকে পঞ্চম শিরোপা জেতালেন। তারপরও ২০২৪ সালের আইপিএলে ব্যর্থতার কারণে  হয়ত টেস্ট দল থেকেও বাদ পড়লেন। সেই বাদ পড়ার বেদনা হয়তো তাকে ভেতরে ভেতরে ধ্বংস করছিল। কিন্তু রাহানে সেই ভাঙন থেকে আরও শক্ত হয়ে ফিরে এলেন। ঠিক যেন এক ভাঙা প্রেমিকের মতো, যার ভালোবাসা প্রতিদান পায়নি, কিন্তু প্রতিশোধের আগুন তাকে আরও পরিণত করেছে।

রাহানে নিজেকে বদলাতে শুরু করলেন। নিজের ‘টেস্ট স্পেশালিষ্ট’ তমকা ঢাকতে হয়ে গেলেন পুরাদস্তুর মারকাটারি ব্যাটার। সৈয়দ মুশতাক আলি ট্রফিতে যেন সব অবহেলা কে নিজের ব্যাট দিয়েই হয়ত সীমানা ছাড়া করলেন। ৮ ম্যাচে ১৭০ এর উপরে স্ট্রাইক রেটে ৩৬৬ রান নিয়ে টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক তিনি। তার সাম্প্রতিক কিছু ইনিংস ৫২, ৬৮ ,৯৫, ৮৪, ৯৮। প্রতিটি ইনিংস প্রায় ২০০ এর কাছাকাছি স্ট্রাইকরেটে, কখনো বা তারও বেশি।

সম্প্রতিই আইপিএল ২০২৫ নিলামে তাকে প্রথমে কেউ কিনতেই চায়নি। শেষ মুহূর্তে কলকাতা নাইট রাইডার্স তাকে ভিত্তিমূলে মাত্র ১.৫ কোটি রুপিতে দলে নেয়। এটি কি অবজ্ঞা হিসেবে নিলেন তিনি?  টি-টোয়েন্টির মতো ফরম্যাটে, যেখানে তার নামই শোনা যায় না, সেখানেই তিনি দেখিয়ে দিলেন যে বয়স কেবলই একটি সংখ্যা। অবহেলার বিপরীতে নিজের সেরাটা দেওয়ার জেদে হয়ত ভুলেই গেছেন বয়সটা বেলা গড়িয়ে গড়িয়ে হতে যাচ্ছে ৩৭।

রাহানের এই ফিরে আসা যেন এক জীবন শিক্ষাও বটে। জীবন অবেহলা ছুড়ে দিলে ভেঙে না পড়ে নিজের কম্ফোর্ট জোন থেকে বেরিয়ে,  বুক চিতিয়ে লড়াইটা চালিয়ে যেতে হয় । তবেই কষ্ট আর অবহেলাকে  রূপান্তর করা যায় সাফল্যের পথে।

Share via
Copy link