কখনো কখনো জীবন পাথর ছোড়ে। তবে সাহসীরা সেই পাথরকেই সিঁড়ি বানায়। টেম্বা বাভুমার সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স যেন সেই গল্পেরই প্রতিচ্ছবি । শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে হয়েছেন সিরিজ সেরা খেলোয়াড়।
পুরো সিরিজে ৮১.৭৫ গড়ে রান করেছেন ৩২৭। সিরিজের সর্বোচ্চ ২৯ বাউন্ডারি এবং চারটা ছক্কাও হাঁকিয়েছেন তিনি। ফলে ঘরের মাঠে হেসেখেলে ২-০ তে শ্রীলঙ্কাকে গুঁড়িয়ে দিয়েছে দক্ষিন আফ্রিকা। ওয়ার্ল্ড টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালের পথে তাই এক পা দিয়ে রাখল তারা। ঘরের মাঠে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে দুই টেস্টের একটিতে জিতলেও ফাইনালে চলে যাবে দক্ষিন আফ্রিকা।
যদিও কয়েক মাস আগেও সময়টা এত সহজ ছিল না তারজন্য। সবশেষ বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে চোটের কারণে খেলতে পারেননি। সাদা বলের ক্রিকেটে তার ব্যাট থেকে রান আসছিল না। ২০২৩ সালে ওয়ানডে বিশ্বকাপে ব্যাট হাতে তার গড় ছিল মাত্র ১৮। অধিনায়ক হিসেবে এমন পারফরম্যান্স তাকে সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে দাঁড় করায়। এমনকি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দলেও জায়গা হয়নি তার। মাঠের বাইরেও তিনি ছিলেন কটাক্ষের শিকার। কখনো তার উচ্চতা, কখনো তার গায়ের রঙ—সমালোচনা থামেনি।
কিন্তু বাভুমা ভেঙে পড়েননি । সমালোচনার জবাব দিতে কিছুদিন আগেই বলেছিলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যারা কটু কথা বলে, তাদের আমি থোড়াই কেয়ার করি । কারন তারা সেই সময় কথা বলে না, যখন আমি ভাঙা আঙুল নিয়ে মাঠে নামি এবং দেশের জন্য পারফর্ম করি।’
যেমন কথা তেমন কাজের ছাপ রাখলেন বাভুমা। সম্প্রতিই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে একক আধিপত্য দেখিয়েছেন। চার ইনিংসে তার রান যথাক্রমে ৬৬, ৭৮, ১১৩, আর ৭০। দলের অধিনায়ক হিসেবে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে শ্রীলঙ্কাকে হোয়াইটওয়াশ করেছেন। তার নেতৃত্বে দক্ষিণ আফ্রিকা এখনও কোনো টেস্ট হারেনি। সাত ম্যাচে ছয় জয়, এক ড্র, জয়ের হার ৮৫.৭১।
শেষ পর্যন্ত বাভুমা দেখিয়েছেন, সত্যিকারের লড়াকুরা কখনো থেমে থাকে না। প্রতিকূলতার পাহাড় ডিঙিয়ে তিনি আবারও আলোয় ফিরেছেন। শুধু মাঠ নয়, বাইরের সব প্রতিকূলতার বিরুদ্ধেও এই লড়াই। সমালোচনা, বর্ণবৈষম্য, আর ট্রল সবই পেছনে ফেললেন বাভুমা। দেখিয়ে দিলেন, তাকে ভাঙার জন্য পাথর ছুড়লে তিনি সেটাকেই মাইলফলক বানান। বাভুমা যেন প্রমাণ করলেন অন্ধকার যত গভীরই হোক, আলো একদিন আসবেই।