রাকিম কর্নওয়াল, পাওয়ার প্লে’র বিপ্লবী

শেষ মৌসুমটা হয়তো স্মৃতির পাতা থেকেই মুছে ফেলতে চাইবেন বার্বাডোজ রয়্যালসের সমর্থকরা। দশ ম্যাচে মাত্র এক জয় নিয়ে সেবার পয়েন্ট তালিকার তলানিতে ছিল তারা। কিন্তু বছর ঘুরতেই অন্য রূপে বার্বাডোস, রাকিম কর্নওয়াল-ডেভিড মিলারদের অন্তর্ভুক্তি পুরো পাল্টে দিয়েছে দলের চেহারা। গতকাল কোয়ালিফায়ারে কর্নওয়ালের বিধবংসী ৯১ রানের ইনিংসে সাকিবের গায়ানা অ্যামাজন ওয়ারিহর্সকে হেসেখেলেই হারিয়ে প্রথম দল হিসেবে এবারের ফাইনাল নিশ্চিত করেছে বার্বাডোস।

গতবারের ব্যর্থতা কাটিয়ে উঠতে এবার শুরু থেকেই নতুন রূপে দল সাজিয়েছে বার্বাডোজ কর্তৃপক্ষ। বিদেশি মিলার-ডি ককদের পাশাপাশি ঘরোয়া ক্রিকেটের পরীক্ষিত কর্নওয়াল, কাইল মায়ার্সদের দলে ভিড়িয়েছে তারা। ব্যাটিং-বোলিং এ শুরুতে আলো ছড়িয়েছেন কর্নওয়াল-মায়ার্স আর ফিনিশিং টাচ দিয়েছেন আজম খান- মিলার-হোল্ডাররা। এছাড়া ডেভিড মিলার নেতৃত্বগুণ দিয়ে মাঠ এবং মাঠের বাইরে পুরো দলকে গেঁথেছেন এক সুতোয়। 

তবে এই দলের সবচেয়ে টার্নিং পয়েন্ট বোধহয় সেন্ট লুসিয়া থেকে থেকে দীর্ঘদেহী অলরাউন্ডার রাকিম কর্নওয়ালকে ভেড়ানো। সেন্ট লুসিয়ার হয়ে পারফর্ম করলেও ঠিক যেন ধারাবাহিক হতে পারছিলেন না। এ মৌসুমের শুরুতে বড় আশা নিয়েই তাকে দলে টেনেছিল বার্বাডোস। কিন্তু মৌসুমের শুরুতেই ইনজুরিতে পড়ে ছিটকে যান বড় সময়ের জন্য। সবাই ভেবেছিল বোধহয় পুরো মৌসুমটা মিস করবেন।

কিন্তু, ফিরে এসেছেন দলের সবচেয়ে দরকারি সময়ে। গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে গায়ানার কাছে হেরে যাওয়ায় সবাই ভেবেছিল কোয়ালিফায়ার বোধহয় হাড্ডাহাড্ডি হবে। তাছাড়া মিলার-ডি ককবিহীন বার্বাডোজও যেন ছিল খানিকটা ম্রিয়মান। কর্নওয়ালের কাছে এদিন ছিল নিজেকে চেনানোর সবচেয়ে বড় সুযোগ। বল হাতে ভালো করলেও ব্যাট হাতে ঠিক নিজেকে জানান দিতে পারছিলেন না।

বড় মাপের খেলোয়াড়রা বোধহয় বড় ম্যাচকেই বেছে নেন নিজেকে ফিরে পেতে। কর্নওয়ালও তাই, অসাধারণ এক ইনিংস খেলে একা হাতেই এক প্রকার ম্যাচ থেকে ছিটকে দিয়েছেন সাকিবের গায়ানাকে। ৫৪ বলে ৯১ রানের ইনিংস খেলার পথে হাঁকিয়েছেন ১১টি ছক্কা। আসলে কর্নওয়ালের কালকের ইনিংসকে শাব্দিক কোনো ভাষা দিয়ে ব্যাখ্যা করা কঠিন। তাঁর মাঠ ছাড়ানো একেকটি ছয় যেন শেল হয়ে বিঁধছিল গায়ানার সমর্থকদের মনে। কেবল ব্যাট হাতেই নয়, বল হাতেও সমান উজ্জ্বল ছিলেন এই অলরাউন্ডার, মাত্র দুই ওভার বল করেই নিয়েছেন কিমো পল আর রোমারিও শেফার্ডের গুরুত্বপূর্ণ দুই উইকেট। এককথায় গতকালের পুরো ম্যাচ ছিল কর্নওয়ালময়। 

তাঁর এবং কাইল মায়ার্সের উদ্বোধনী জুটিই ব্যবধান গড়ে দিয়েছে বার্বাডোজ আর বাকি দলগুলোর মাঝে। পুরো টুর্নামেন্টে পাওয়ারপ্লেতে বার্বাডোসের রান তোলার গতি দ্বিতীয় দ্রুততম। এক্ষেত্রে অবশ্য এই দুজনের পাশাপাশি খানিকটা কৃতিত্ব পাবেন গ্রুপ পর্বের ম্যাচগুলোতে কর্নওয়ালের বদলি খেলা দক্ষিণ আফ্রিকান অলরাউন্ডার করভিন বশচ। এছাড়া বল হাতেও দারুণ মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন এই দলের বোলাররা।

ডেথ ওভারে বার্বাডোজের বোলাররাই রান দিয়েছেন সবচেয়ে কম ইকোনমিতে। এছাড়া বার্বাডোসের তরুণ বাঁ-হাতি পেসার র‍্যামন সিমন্সও আলো ছড়িয়েছেন দলের হয়ে। তাকে এতটাই মনে ধরেছে বার্বাডোজ মালিকপক্ষেই, কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচ না খেলা সিমন্স ইতোমধ্যেই দল পেয়ে গিয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার টি- টোয়েন্টি টুর্নামেন্টে। বার্বাডোস দলে পারফর্মারের ছড়াছড়ি থাকলেও কিছু ম্যাচে একক নৈপুণ্যে সবাইকে ছাপিয়ে গিয়েছেন কেউ একজন। গত ম্যাচটাও ছিল তেমনি এক ম্যাচ।   

বার্বাডোসের কাছে হেরে গেলেও অবশ্য ফাইনালে ওঠার আরেকটা সুযোগ পাবে সাকিবের গায়ানা আমাজন ওয়ারিহর্স। দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে তাদের মুখোমুখি হতে হবে জ্যামাইকা তাল্লাওয়াহসের। তবে সেখানে জিতলেও ফাইনালে কর্নওয়ালের বার্বাডোজ রয়্যালসকে হারাতে যথেষ্টই বেগ পেতে হবে, অন্তুত থামাতে হবে কর্নওয়ালের শুরুর ঝড়। অন্যথায় আরও একবার রানার্সআপ হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হবে গায়ানাকে। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link