দিনের প্রথম ম্যাচ ছিল বড্ড ম্যাড়ম্যাড়ে, রান করতে ঘাম ঝরাতে হয়েছিল ব্যাটারদের। দ্বিতীয় ম্যাচেও তেমন কিছুই হয়তো কল্পনা করেছিলেন সবাই। তবে সবাইকে ভুল প্রমাণ করেছে দুই হেভিওয়েট রংপুর রাইডার্স আর কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের ম্যাচটি। এই দুই হেভিওয়েটের লড়াইয়ে টি-টোয়েন্টির সুবাস ছিল প্রথম থেকেই।
টসে জিতে এই ম্যাচে বোলিং বেছে নিয়েছিল কুমিল্লার অধিনায়ক ইমরুল কায়েস। কিন্তু তাঁর সিদ্ধান্তকে ভুল প্রমাণ করে রীতিমতো বাউন্ডারি ঝড় সৃষ্টি করেন রংপুরের ব্যাটার রনি তালুকদার। আরেক ওপেনার নাইম শেখ স্বভাবসুলভ ধীরগতিতে ব্যাটিং করলেও রনি ধারণ করেছিলেন রুদ্রমূর্তি।
ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে মোহাম্মদ নাবিকে দিয়ে শুরু, এরপর আশিকুর জামান সহ অন্যদেরকেও বাউন্ডারি ছাড়া করেন রনি তালুকদার। আগের ম্যাচে যেখানে পাওয়ার প্লের ছয় ওভারে এসেছিল ২১ রান সেখানে কুমিল্লার বিপক্ষে একাই ৫৫ রান করেছেন এই ডানহাতি। মাত্র ১৯ বলে অর্ধশতক করা রনি তালুকদার এখন দেশীয় ক্রিকেটারদের মাঝে বিপিএলে দ্রুততম হাফসেঞ্চুরিয়ান।
উড়ন্ত শুরু পেলেও নিজের ইনিংস বেশি বড় করতে পারেননি রনি তালুকদার। ৬৬ রানের মাথায় কাটা পড়েন খুশদিল শাহয়ের বলে। তাঁর বিদায়ের পরে বাকিরা মোমেন্টাম ধরে রাখতে না পারায় রংপুরের রানের গতি কমে আসে। বিশেষ করে ওপেনার নাইম শেখ ছিলেন দৃষ্টিকটু। রনি তালুকদার ২০০ এর বেশি স্ট্রাইক রেটে ব্যাটিং করলেও তিনি নব্বইও ছুঁতে পারেননি। ৩৪ বলে মাত্র ২৯ রান করে ফিরেছেন প্যাভিলিয়নে।
মিডল ওভারে ইনফর্ম সিকান্দার রাজা চেষ্টা করেও পারেননি রানের গতি বাড়াতে। তবে অভিজ্ঞ শোয়েব মালিকের ব্যাটে চড়ে সন্তোষজনক পুঁজি গড়ে রংপুর রাইডার্স। শেষপর্যন্ত পাক তারকার ২৬ বলে ৩৩ আর অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহানের ১১ বলে অপরাজিত ১৯ রানের উপর ভর করে ১৭৬ রান করে দলটি।
১৭৭ রান টি-টোয়েন্টির বিচারে মাঝারিমানের সংগ্রহ হলেও মিরপুরের পিচে এটাই পাহাড়সম। আর এই রানের পাহাড় টপকানোর জন্য বড় দায়িত্ব নিতে হতো দারুণ ছন্দে থাকা লিটন দাসকে, কিন্তু রাকিবুল ইসলামের করা প্রথম ওভারেই আউট হতে হয় তাঁকে। মাত্র ১০ রান করেই ফিরেন এই স্টাইলিশ ব্যাটসম্যান। আরেক ওপেনার সৈকত আলী খেলেছেন ২১ বলে ১৬ রানের বেমানান এক ইনিংস।
অবশ্য ইংলিশ তারকা ডেভিড মালান চেষ্টা করেছেন রনি তালুকদারের মত দুর্দান্ত কিছু করতে। শুরুটাও হয়েছিল দারুণ, দুই চার এবং এক ছয়ে ৮ বলে করেছিলেন ১৭ রান। কিন্তু আফগান ক্রিকেটার ওমর আজমাতুল্লাহ চোখে লেগে থাকার মত এক ক্যাচ লুফে নিয়ে বিদায়ের পথ দেখিয়ে দেন তাঁকে।
৫৭ রানে তিন উইকেট হারানো কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের আশার বাতিঘর হয়ে জ্বলছিলেন অধিনায়ক ইমরুল কায়েস। ২৩ বলে ৩৫ রান করে এই বামহাতি চেষ্টাও করেছেন ঠিকঠাক। কিন্তু সতীর্থদের ব্যর্থতায় দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দিতে পারেননি। বিশেষ করে মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত হয়ে উঠেছিলেন ডট মেশিন; ম্যাচের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে একের পর ডট দিয়ে নিজের দল কুমিল্লাকেই ঠেলে দিয়েছিলেন পরাজয়ের দিকে।
ইনিংসের বাকিসময় কুমিল্লার ব্যাটাররা আসা যাওয়ার মিছিলে যোগ দেওয়ায় ১৪২ রানেই গুটিয়ে যায় দলটি, আর ৩৪ রানের বিশাল জয় তুলে নেয় রংপুর রাইডার্স। অবশ্য তাদের বোলারদের কৃতিত্ব দিতেই হয়। হাসান মাহমুদ, বেনি হাওয়েলদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়েই মূলত পিছিয়ে পড়েছিল বর্তমান চ্যাম্পিয়নেরা। রংপুরের জয় পাওয়ার ম্যাচে ম্যান অব দ্য ম্যাচ হয়েছেন রনি তালুকদার।
প্রথম থেকেই দাপট দেখানো রংপুর রাইডার্স ম্যাচের শেষপর্যন্ত ধরে রেখেছিল ম্যাচের লাগাম। আপাতত দলটির লক্ষ্য ফরচুন বরিশালের বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচের দিকে। অন্যদিকে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স চাইবে ঘুরে দাঁড়াতে, তা না হলে যে টুর্নামেন্টে টিকে থাকাই কঠিন হবে লিটন-মুস্তাফিজদের জন্য।