স্রোতের বিপরীতে সফল ‘বেবি গ্যালাকটিকোস’ কৌশল

এইতো ক’দিন আগেও তো কিলিয়ান এমবাপ্পেকে দলে ভেড়াতে না পারায় রিয়াল মাদ্রিদকে নিয়ে ট্রল, সমালোচনার বন্যা বয়ে গেল। প্রতিদ্বন্দী দলগুলোর খানিক চিপ্পনিও হজম করত হল। তবে একটা সময় এই মাদ্রিদ তামাম ফুটবলের বিশ্বের সবচেয়ে উজ্জ্বল তারকাদের নিয়ে আসতো কারিকারি অর্থ খরচ করে। আর তারাই কি না এখন দলে ভেড়াতে পারছে না এমবাপ্পেকে?

হ্যাঁ, পারছে না কিংবা চাইছে না। অভিমত অনেক রকম হতে পারে। তবে এ কথা সত্যি যে খেলোয়াড় কেনা-বেচায় খানিকটা পরিবর্তন এনেছে ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ। খানিক নয় বেশ আমুল পরিবর্তন। যদি এই কিলিয়ান এমবাপ্পের কথা বাদ দেওয়া যায়, তবে গত কয়েক বছরে রিয়ালের অর্থ খরচ বা প্রতিষ্ঠিত তারকাদের পেছনে ছোটার মাত্রাটা যে অনেকটাই কমে গেছে তা তো অন্তত বোঝাই যায়।

রিয়াল বরং ছুটছে তরুণ, উদীয়মান, সম্ভাবনাময় খেলোয়াড়দের পেছনে। যার ফলশ্রুতিতেই তো রদ্রিগো গোয়েজ, ভিনিসিয়াস জুনিয়ররা আজ মাদ্রিদের মূল দলে। কিন্তু এই যে মাদ্রিদের নিজেদের ট্রান্সফার মার্কেটের স্ট্রাটেজি পরিবর্তন করবার অনেকটা কৃতিত্ব পেতে পারে নেইমার কিংবা চিরপ্রতিদ্বন্দী বার্সেলোনা। কেননা ২০১৩ সালে যখন বার্সেলোনা নেইমারকে নিজেদের দলে ভেড়ায় তখন রিয়াল মাদ্রিদও বেশ চেষ্টা করেছিল।

ব্যর্থ হয়। এরপর পেরেজ ছুটেছিল পরবর্তী নেইমার খুঁজতে। সে সন্ধান করতে গিয়েই রদ্রিগো, ভিনি এখন অন্যতম সেরা ভরসার স্তম্ভ। এই বারের মৌসুমেই ২১ বছর বয়সী ভিনিসিয়াস ঠিক যেন স্বরুপ দেখানো শুরু করেছেন। তার দেওয়া এক গোলেই তো রিয়াল জিতে নিল চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা। এছাড়াও পুরো মৌসুম জুড়েই করিম বেনজেমার মত অভিজ্ঞ খেলোয়াড়ের সাথে জুটি গড়ে সামলে গেছেন রিয়ালের আক্রমণ।

আর অন্যদিকে রদ্রিগো তো রীতিমত বনে গেছেন তুরুপের তাস। ‘সুপার সাব’ রদ্রিগো গোয়েজের কল্যাণেই তো চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনাল অবধি উঠেছিল রিয়াল মাদ্রিদ। তিনিও যেন প্রতিনিয়ত নিজের জাত চেনাচ্ছেন। খোলস ছেড়ে বের হচ্ছেন। তিনি যেন অভয় দিচ্ছেন আক্রমণ নিয়ে চিন্তা নেই। রদ্রিগো আর ভিনি যখন আক্রমণে ভরসার জায়গা তৈরি করছেন ঠিক তখন মিডফিল্ডে আস্থা হয়ে উঠছেন এর্নেস্তো ভালভার্দে।

ইতোমধ্যে মাদ্রিস্তাদের অন্যতম পছন্দের একজন খেলোয়াড়ে পরিণত হয়েছেন ভালভার্দে। মাদ্রিদের ওই মুকুট খচিত লোগোটার জন্যে তার যে আবেগ সেটাও নজর কেড়েছে সবার। তিনি যেন রিয়াল মাদ্রিদের সাদ জার্সিটায় আকাশে উড়ে বেড়ানো কোন এক শুভ্র পাখি। গতি আর স্ট্যামিনা, সে সাথে ক্রমাগত দলের সতীর্থদেরকে বুঝে সাহায্যের জন্যে এগিয়ে যাওয়াটা নিশ্চয়ই মনে ধরেছে। তিনি যেন বার বার উচ্চ স্বরে বলছেন ‘মিডে আমি আছি’।

পেরেজ তার এই তরুণ প্রতিভা খোঁজার কাজটা চালিয়ে গিয়ে মাত্র ৩১ মিলিয়ন ইউরোতে রেনেস থেকে উড়িয়ে নিয়ে এসেছেন এডুয়ার্ডো কামাভিঙ্গা নামক নতুন এক রত্ম। এই মৌসুমে কামাভিঙ্গা খুব একটা ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি। বদলি হয়েই নেমেছেন অধিকাংশ সময়ে। তবে তিনি যে মাদ্রিদের হয়ে কিছু একটা করে দেখাতেন চান তা যেন স্পষ্টতই বোঝা যায় তার প্রতিটি পদক্ষেপে।

যখনই তিনি সুযোগ পান নিজের দক্ষতা ও সক্ষমতার পুরোটাই নিঙড়ে দিতে তিনি যেন মরিয়া। প্রায় প্রতিটা ম্যাচেই তিনি ম্যাচের গতিপথ পরিবর্তন করে দিয়েছেন নিজের সামর্থ্য দিয়ে। হয়ত তিনি গোল করেন নি। তবে প্রতিটি গোলের জন্যে তিনি রাস্তাটা করে দেওয়ার চেষ্টা করে গেছেন। রোনালদো পরবর্তী যুগে যখন সবাই ভেবেছিল রিয়াল একেবারে মুষড়ে পড়বে তখনই যেন রিয়ালের তরুণ খেলোয়াড়রা ভরসা জুগিয়ে হাল ধরেছেন।

অভিজ্ঞ বেনজেমা, মদ্রিচ, ক্রুসরা তো ছিলেনই। তাদের সাথে নিয়েই রদ্রিগো, ভিনিসিয়াস, কামাভিঙ্গা অথবা ভালভার্দেরা হয়ে উঠছেন ‘ব্যাবি গ্যালাকটিকোস’। রিয়াল যখন সরে এসেছিল অর্থ খরচ করা থেকে ঠিক তখনই প্রতিদ্বন্দী বার্সেলোনা ছুটেছিল গ্যালাকটিকোসদের পেছনে। ফলশ্রুতিতে তারা আজ ধুকছে অর্থনৈতিক বিপর্যয়ে। অন্যদিকে নতুন কৌশলটা প্রায় ভালভাবেই রপ্ত করে ফেলেছে রিয়াল মাদ্রিদ।

তারা অধিক অর্থ খরচ নয়, বরং মেপে মেপে প্রতিভাবান তরুণদের দলে ভেড়াতেই ব্যস্ত। পেরেজ নিশ্চয়ই সুদূর প্রসারী পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই রিয়াল মাদ্রিদের পাইপলাইন পূর্ণ করছেন ব্যাবি গ্যালাকটিকসদের দিয়ে। এরা মাদ্রিদকে ভালবেসে একটা লম্বা সময় ধরে সার্ভিস দেওয়ার জন্যে প্রস্তুত হচ্ছে। অন্যদিকে পেরেজ প্রস্তুত হচ্ছে আরও তরুণদের ইতিহাসের সাক্ষী হবার সুযোগ দিতে।

– গোল.কম অবলম্বনে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link