জম্পেশ লড়াইয়ের আভাস

ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো একবার বলেছিলেন, ‘বার্নাব্যুয়ের নব্বই মিনিট অনেক লম্বা।’ তিনি হয়ত তাঁর উপর ভরসা রেখেই বলেছিলেন। তবে তাঁর চলে যাওয়ার পরও রিয়াল মাদ্রিদ সে কথাটার মান রেখেছে। আর সান্তিয়াগো বার্নাব্যুয়ের নব্বই মিনিট যে ঠিক কতটা লম্বা তার প্রমাণ তো চেলসি কিংবা প্যারিস সেইন্ট জার্মেই পেলই।

চ্যাম্পিয়ন্স লিগের মঞ্চে রিয়াল মাদ্রিদ সর্বদাই এক ভিন্নরুপে আবির্ভূত হয়। সে মাদ্রিদের মাঝে যেন হার না মানার অদম্য শক্তি সঞ্চারিত হয়। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সে আবহ সঙ্গীত শোনা মাত্রই রয়্যাল ব্যাচের সাদা জার্সি পরা প্রতিটা খেলোয়াড় যেন রীতিমত রোবট হয়ে যায়। যাদের ফুসফুসটা হয়ে যায় সাগরসম। চিরকাল ধরে যার কোন শেষ নেই।

আর কি অদম্য শক্তি! নিজেদের শেষটা নিংড়ে দেওয়ার কি তীব্র ইচ্ছা! ম্যাচের শেষ বাশি বাজার আগ অবধি হার মেনে না নেওয়ার দৃঢ় প্রত্যয়! এসব কিছুরই সাক্ষী হয়েছে ইংল্যান্ডের ক্লাব ম্যানচেস্টার সিটি। তাঁদের ঘরের মাঠ এতিহাদে তাদেরই চোখে চোখ রেখে পুরো নব্বই মিনিট লড়ে গেছে করিম বেনজেমা, ভিনিসিয়াস জুনিয়ররা।

৪-৩ গোলের পরাজয় যেন পরাজয় না। এ যেন রিয়াল মাদ্রিদের কয়েকশ হর্সপাওয়ার ইঞ্জিনের সামান্য জ্বালানি। কেননা দ্বিতীয় লেগটা তো হতে চলেছে রিয়ালের ডেরায়। যে ডেরা প্রচন্ড ভয়ংকর। যে কার জন্যেই ভয়ংকর। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনালে আসলে রিয়ালকে নিয়ে আলাদা পরিকল্পনা করা ছাড়া উপায় নেই। পেপ গার্দিওলা নিশ্চয়ই তা জানেন।

তিনি হয়ত ইতোমধ্যেই সব ছক কষে ফেলেছেন। ব্যবধান মাত্র এক গোলের। এই ব্যবধানও যে নিমিষেই ঘুচিয়ে দেওয়া যায় তাঁর প্রমাণ তো রিয়াল রেখেছে এবারের মৌসুমেই। তাও কয়েকবার। তাঁর উপর লা লিগা জয়ের আলাদ আনন্দে উজ্জীবিত একটা দলকে হারাতে বেশ বেগ পোহাতে হবে গার্দিওলার শীর্ষ্যদের এটা রীতিমত ‘ওপেন সিক্রেট’। তবে রিয়ালও যে খুব নির্ভার হয়ে খেলবে বিষয়টা তা নয়।

রিয়ালকেও ম্যানচেস্টার সিটিকে সমীহ করতেই হবে। কেভিন ডি ব্রুইন, ফিল ফোডেন, রিয়াদ মাহারেজরা রয়েছেন দারুণ ফর্মে। আর ডাগআউটে থাকছেন পেপ গার্দিওলা। এই মানুষটার নখদর্পণে রয়েছে ঠিক কি করে হারাতে হয় বিশ্বের অন্যতম সেরা ক্লাবকে। তিনি তো খুব কাছ থেকেই দেখেছেন সান্তিয়াগো বার্নাব্যুর পরিবেশ। তিনি জানেন পরিস্থিতিটা ঠিক কতটা কঠিন হতে চলেছে।

পূর্ণ শক্তি নিয়েই হয়ত বার্নাব্যুতে পা রাখতে চাইবেন পেপ গার্দিওলা। তবে দুশ্চিন্তার কারণ রাইট ফুলব্যাক। সেখানটায় কাইল ওয়াকারের অনুপস্থিতিতে ভিনিসিয়াস জুনিয়র আবারও হতে পারে সিটির রাতের ঘুম কেড়ে নেওয়ার কারণ। এই ইনজুরির সমস্যার কারণে হয়ত মাদ্রিদের একাদশে দেখা নাও যেতে পারে আলাবাকে। এত সবকিছুর ভিড়েও পেপ ও কার্লো আনচেলত্তি নিশ্চয়ই চাইবেন ম্যাচটি জিততে।

ম্যানচেস্টার সিটি আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের একটি শিরোপা নিজেদের ঘরে তুলতে। অন্যদিকে আনচেলত্তির শির্ষ্যরা নিশ্চয়ই আরও একটি শিরোপার স্বপ্নে বিভোর হয়ে আছে। তবে একটি গোলের ব্যবধানই হয়ত পার্থক্য গড়ে দিতে পারে। তবে প্রথম লেগের ম্যাচে আরেকটু মনোযোগী হলেই খানিকটা নির্ভার হয়ে খেলতে পারত ম্যান সিটি। সেটা আর হচ্ছে না।

তবে রিয়ালকে বার্নাব্যুতে দমিয়ে রাখা দুষ্কর। করিম বেনজেমা আরও তাঁদের সমর্থকদের আহ্ববান জানিয়েছেন মাঠে আসার। ম্যান সিটি মানসিক এবং ট্যাকটিকাল সব প্রস্তুতি নিয়েই খেলতে চলেছে দ্বিতীয় লেগ। আর অন্যদিকে আনচেলত্তির মাথায় জয় ব্যতিত অন্য কোন চিন্তাই হয়ত নেই। তিনি হয়ত ব্যবধান বাড়িয়ে জয়ের জন্যই খেলবেন।

লড়াইটা জম্পেশ হবে তা নিয়ে সন্দেহ নেই। ঈদের মৌসুমে এমন এক লড়াই নিশ্চয়ই বাড়তি আনন্দের কারণ হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link