সদ্য সমাপ্ত এশিয়া কাপে শিরোপার বড় দাবিদার ছিল পাকিস্তান। কন্ডিশন আর ফর্ম বিবেচনায় ফেভারিট তকমা নিয়েই মাঠে নেমেছিল বাবর আজমের দল। কিন্তু এবারও সেই অধরা ট্রফি ছুঁয়ে দেখা হয়নি। ফাইনালের শেষ লড়াইয়ে ব্যর্থতার বৃত্তে বন্দী হয়ে পড়েছিল তারা। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ছন্নছাড়া পারফরম্যান্স করেছে দলটি।
এশিয়া কাপে পাকিস্তানের এমন ভরাডুবি নিয়ে কাঁটাছেড়া কম হয়নি। সেই সাথে খুঁজে পাওয়া গিয়েছে ব্যর্থতার কিছু কারণ। এক নজরে সেসব দেখে নেয়া যাক।
- মোহাম্মদ রিজওয়ানের স্ট্রাইক রেট
মহাদেশীয় টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক মোহাম্মদ রিজওয়ান। কিন্তু ভাগ্যের পরিহাসে, পাকিস্তানের পরাজয়ে তাকেই উঠতে হচ্ছে কাঠগড়ায়। কেননা রিজওয়ান রান করলেও তাঁর ইনিংসে ছিল না টি-টোয়েন্টি সুলভ এপ্রোচ। ফাইনালে দল যখন ব্যাটিং করছিল ১৭১ রানের লক্ষ্যে, রিজওয়ান তখন বেরসিক ব্যাটিংয়ে করেছেন ৪৯ বলে ৫৫।
শুধু এই ফাইনাল নয়, রিজওয়ানের ব্যাটিংয়ের ধরনই এমন; ইনিংসের প্রথম ৩০-৪০ বলে তিনি ব্যাট করেন ওয়ানডে স্টাইলে। এরপর বেশকিছু বাউন্ডারির মারে স্ট্রাইক রেট বাড়িয়ে নেন। কিন্তু যেদিন শেষদিকে ঝড়ো ব্যাটিং করতে ব্যর্থ হন সেদিন ঠিকই তাঁর ধীরগতির ইনিংস দলের বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
- বাবর আজমের নিষ্প্রভতা
মোহাম্মদ রিজওয়ান তবু রান করেছেন, তাঁর ওপেনিং সঙ্গী বাবর আজম সেটিও করতে পারেননি। এশিয়া কাপের ছয় ম্যাচের সব কয়টিতেই ব্যর্থ হয়েছেন টি-টোয়েন্টির সাবেক নাম্বার ওয়ান ব্যাটসম্যান। স্বাভাবিকভাবেই অধিনায়কের অফ ফর্মের প্রভাব পড়েছে পাকিস্তান দলের উপর।
ভঙ্গুর ব্যাটিং লাইনআপ আরও প্রকট হয়ে উঠেছে বাবরের ব্যর্থতায়। এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান দ্রুত এই ছন্দ হীনতা কাটিয়ে উঠতে না পারলে আসন্ন বিশ্বকাপেও হয়তো পাকিস্তান কাঙ্খিত সাফল্যের দেখা পাবে না।
- ব্যর্থ টপ অর্ডার
এক কথায়, পাকিস্তানের টপ অর্ডার আধুনিক টি-টোয়েন্টির সাথে বেমানান। ওপেনিংয়ে নামা দুইজন-ই অ্যাংকর এর ভূমিকায় খেলেন, তিন নম্বরে নামা ফখর জামানও ফর্মে নেই। আর তাই ব্যাটিংয়ে পাকিস্তান কোন ম্যাচেই উড়ন্ত সূচনা পায় না। মোহাম্মদ রিজওয়ান, বাবর আজমদের ধীরগতির ব্যাটিং উল্টো চাপ বাড়ায় মিডল অর্ডারের উপর।
কখনো কখনো আসিফ আলী কিংবা মোহাম্মদ নওয়াজরা সেই চাপ সামাল দিলেও অধিকাংশ সময় ব্যর্থ হয় পাকিস্তান। সমাধান হিসেবে পাকিস্তান উদ্বোধনী জুটিতে মারকুটে কাউকে ইচ্ছে করলে সুযোগ দিতে পারে; যে কি না পাওয়ার প্লে এর সদ্ব্যবহার করতে পারবে। সেক্ষেত্রে রিজওয়ান কিংবা বাবর একজনকে তিন নম্বর পজিশনে ব্যাট করতে হবে।
- অধারাবাহিক মিডল অর্ডার
পাকিস্তানের বর্তমান টি-টোয়েন্টি দলে সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তার জায়গা সম্ভবত মিডল অর্ডার৷ পারফরম্যান্সে যেমন অধারাবাহিক মিডল অর্ডার ব্যাটাররা, তেমনি তেমন কারোই নির্ধারিত পজিশনে ব্যাট করার সুযোগ মিলে না।
এছাড়া বড় লক্ষ্য তাড়া করে জেতার জন্য যেমন এপ্রোচে ব্যাট করতে হয় তেমনটা কালেভদ্রে দেখা যায় ইফতেখার আহমেদ, খুশদিল শাহদের মাঝে। তাই নড়বড়ে এই মিডল অর্ডারে সংস্কার করাটা টিম ম্যানেজমেন্টের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।
- ইনজুরি এবং দল নির্বাচন
এশিয়া কাপ শুরুর আগেই পাকিস্তানকে পিছিয়ে দিয়েছিল ইনজুরি। দলটির সেরা বোলার শাহিন শাহ আফ্রিদি ছিটকে গিয়েছিলেন হাঁটুর চোঁটে, এরপর আরেক পেসার ওয়াসিম জুনিয়রও হেঁটেছেন একই পথে। যদিও নাসিম শাহ, হারিস রউফের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের কারণে পেস আক্রমণভাগের ঘাটতি খুব একটা অনুভূত হয়নি। তবে দল নির্বাচনে পাকিস্তানের নির্বাচকদের নিয়ে সংশয় রয়েই গিয়েছে। স্বয়ং শোয়েব মালিকও প্রশ্ন করেছেন দল নির্বাচনের সংস্কৃতি নিয়ে। ইমাদ ওয়াসিম কিংবা শান মাসুদের মত ক্রিকেটাররা ছিলেন বিবেচনার বাইরে।
এই যেমন অফ ফর্মে থাকা ফখর জামান কিংবা ইফতেখার আহমেদের জায়গায় এক ম্যাচেও সুযোগ মেলেনি হায়দার আলীর। বিশেষ করে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সুপার ফোর রাউন্ডে এই ব্যাটারকে একবার বাজিয়ে দেখা যেতোই। সেরা ফলাফল চাইলে সেরা স্কোয়াডকে নিয়েই খেলতে হবে – আর তাই নির্বাচক এবং টিম ম্যানেজমেন্টকে নিজেদের দায়িত্ব দক্ষতার সাথে পালন করতে হবে।