গোলবারের সাথে নিত্য প্রেম

ম্যাচের বেশ অন্তিম মুহূর্ত। সময় একেবারে শেষের দিকে। উত্তেজনা আকাশছোঁয়া। ম্যাচ জিতলেই মিলবে শিরোপা। ড্র থেকে গেলেও তো হবে না। ঠিক এমন এক মুহূর্তে গোল করেছিলেন সার্জিও অ্যাগুয়েরো। আর ম্যানচেস্টার সিটিকে ভাসিয়েছিল আনন্দ বন্যায়। স্ট্রাইকারদের কাজটা ঠিক সেটাই।

ম্যাচের বেশ অন্তিম মুহূর্ত। সময় একেবারে শেষের দিকে। উত্তেজনা আকাশছোঁয়া। ম্যাচ জিতলেই মিলবে শিরোপা। ড্র থেকে গেলেও তো হবে না। ঠিক এমন এক মুহূর্তে গোল করেছিলেন সার্জিও অ্যাগুয়েরো। আর ম্যানচেস্টার সিটিকে ভাসিয়েছিল আনন্দ বন্যায়। স্ট্রাইকারদের কাজটা ঠিক সেটাই।

সময় আর সুযোগের সদ্ব্যবহার করা। প্রতিপক্ষের জালে বল জড়ানো আর নিজ সমর্থকদের মাঝে আনন্দের বিস্তার করা। ফুটবলের আদিকাল থেকেই নান্দনিক সব স্ট্রাইকাররা মাঠ মাতিয়েছেন। সে ধারা অব্যাহত রয়েছে এখন অবধি। এখনকার স্ট্রাইকারদের গোল ক্ষুধায় যেন বিন্দুমাত্র ভাটা পড়েনি। বরং তা সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে বেড়েছে। এই সময়ে বিশ্ব ফুটবলের সেরা সব স্ট্রাইকারদের নিয়েই থাকছে আজকের আয়োজন।

  • লাউতারো মার্টিনেজ (আর্জেন্টিনা/ইন্টার মিলান)

সম্ভবত নিজের ক্যারিয়ারের সেরা সময়ে রয়েছেন লাউতারো মার্টিনেজ। ইতালিয়ান ক্লাব ইন্টার মিলানের হয়ে তিনি গেল মৌসুম শেষ করেছিলেন ৩৫ ম্যাচে ২১ গোল করে। নিজের দুরন্ত গতি আর শক্তিশালী শটের মিশ্রণে বেশ দারুণ সময় পার করছেন লাউতারো মার্টিনেজ। এই মৌসুমেও গোলের দেখা পাচ্ছেন। তাঁকে নিয়ে বেশ আলোচনাও হয়েছে গ্রীষ্মকালীন দলবদলে।

  • পিয়েরে-এমরিক আউবামিয়াং (গ্যাবন/ চেলসি)

নতুন মৌসুমে নতুন দলে পিয়েরে-এমরিক আউবামিয়াং। স্পেনের ক্লাব বার্সেলোনা ছেড়ে আবারও তিনি ফিরেছেন ইংল্যান্ডে। চেলসির হয়ে নতুন মৌসুমে মাঠ মাতাবেন তিনি। ৩৩ বছর বয়সী এই ফুটবলার এখনও ফুরিয়ে জাননি। সেটাই তিন প্রমাণ করেছেন বার্সেলোনার হয়ে ছয় মাসের ক্যারিয়ারে। নিজের গতি আর বিষাক্ত ফিনিশিং স্কিল দিয়ে প্রতিপক্ষের জালে এগারো বা বল জড়িয়েছেন। এবারের মৌসুমেও তিনি নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টাটুকুই করবেন।

  • দুসান ভ্লাহোভিচ (সার্বিয়া/ জুভেন্টাস)

ইতালিয়ান ক্লাব ফ্লোরেন্তিনার হয়ে ১০৮ ম্যাচে ৪৯ গোল করে জুভেন্টাসের জার্সি গায়ে তুলেছিলেন দুসান ভ্লাহোভিচ। স্বাভাবিকভাবেই ওল্ড লেডি সমর্থকদের তাঁর কাছে প্রত্যাশাটাও ছিল বেশি। সে প্রত্যাশা তিনি পূরণ করতে পারবেন সে আভাসটুকু তিনি ইতোমধ্যেই দিয়ে ফেলেছেন। গেল মৌসুমের মধ্যভাগে এসেও নয় দফা জালের ঠিকানা খুঁজে পেয়েছেন। তাঁর গোল ক্ষুধা নতুন মৌসুমের কমেনি কোন অংশে। তরুণ এই স্ট্রাইকার তাই কাড়ছেন বাড়তি নজর।

  • গ্যাব্রিয়েল জেসুস (ব্রাজিল/আর্সেনাল)

বিশ্বকাপকে সামনে রেখে নিজেকে প্রমাণে উঠে-পড়ে লেগেছেন প্রায় প্রতিটা ফুটবলার। সেদিক থেকে বাদ যায়নি গ্যাব্রিয়েল জেসুসের নাম। এই মৌসুমে তো তিনি রয়েছে নিজের ক্যারিয়ারের খুব সম্ভবত সেরা ছন্দে। গ্রীষ্মকালীন দল বদলে তিনি ম্যানচেস্টার সিটি ছেড়ে আর্সেনালের ডেরায় হাজির হয়েছেন। গানার্সদের লাল-সাদা জার্সি গায়ে তিনি রীতিমত লিখছেন নতুন এক কাব্য। নিজের ফিনিশিং দূর্বলতা কাটিয়ে ক্রমশ হয়ে উঠছেন এই সময়ে অন্যতম সেরা স্ট্রাইকার।

  • ডারউইন নুনেজ (উরুগুয়ে/ লিভারপুল)

সাদিও মানের পরিবর্তে লিভারপুলের স্ট্রাইকিং পজিশনে যুক্ত হয়েছেন ডারউইন নুনেজ। উরুগুয়েন এই তরুণ স্ট্রাইকারের উপর প্রত্যাশার চাপ স্বাভাবিকভাবেই একটু বেশি। সে চাপ সামলে অল রেডদের হয়ে তিনি পারফর্ম করেছেন এই মৌসুমের শুরুর দিকে। তাছাড়া ইয়ুর্গেল ক্লপ নিশ্চয়ই আলাদা করে পরিকল্পনা সাজাবেন। নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার নেশা তো নিশ্চয়ই রয়েছে নুনেজের। তবে সেটা করতে তাঁকে হতে হবে আরও ঠান্ডা মাথার একজন স্ট্রাইকার।

হ্যারি কেইন (ইংল্যান্ড/ টটেনহ্যাম)

নিজের স্বভাচারিত গোল করার ক্ষমতার প্রদর্শন এই মৌসুমেও অব্যাহত রেখেছেন হ্যারি কেইন। ইংল্যান্ড জাতীয় দলের অধিনায়ক কেইন অন্য সাধারণ স্ট্রাইকারদের থেকে খানিকটা আলাদা। নিজের দূরদর্শিতা, ড্রিবলিং শৈলী আর দুর্দান্ত পাস দেওয়ার সক্ষমতা তাঁকে অনন্য করে তোলে বেশ কিছু বিভাগে। টটেনহ্যাম সহ ইংল্যান্ড জাতীয় দলের আক্রমণে আলাদা মাত্রাই যেন যোগ করেন হ্যারি কেইন। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতাদের তালিকায় তাঁর অবস্থান এখন তিন নম্বরে।

  • কিলিয়ান এমবাপ্পে (ফ্রান্স/ প্যারিস সেইন্ট জার্মেই)

বেশ তরুণ বয়সেই ফ্রান্সের বিশ্বকাপ জয়ে কিলিয়ান এমবাপ্পে রেখেছিলেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। একজন স্ট্রাইকার হিসেবে নিজেকে সময়ের সাথে আরও বেশি পরিণত করেছেন তিনি। এই মৌসুমের শুরুতেও রয়েছেন দারুণ ছন্দে। তাঁকে দলে ভেড়াতে স্প্যানিশ জায়েন্ট রিয়াল মাদ্রিদ বহু প্রচেষ্টা চালিয়েছে। তবে কাজ কাজ হয়নি। তিনি রয়ে গিয়েছেন প্যারিস সেইন্ট জার্মেই ক্লাবে। সেখানে থেকেই নিজেকে তৈরি করতে চাইছেন সেরাদের সেরা স্ট্রাইকার হিসেবে। নিজের গতিতে তিনি পরাস্ত করতে চান তালিকায় থাকা বাকি সবাইকে।

  • রবার্ট লেওয়ান্ডস্কি (পোল্যান্ড/ বার্সেলোনা) 

 

জার্মানির ক্লাব বায়ার্ন মিউনিখের হয়ে লম্বা সময় ধরে মাঠ মাতিয়েছেন, গোল উৎসবে সরব ভূমিকা রেখেছিলেন রবার্ট লেওয়ান্ডস্কি। পোল্যান্ডের এই স্ট্রাইকার এই মৌসুমের শুরুতে নতুন চ্যালেঞ্জের সন্ধানে হাজির হয়েছেন স্পেনের ক্লাব বার্সেলোনায়। জার্সিটা বদল হলেও লেওয়ান্ডস্কির তীক্ষ্ণতায় বিন্দুমাত্র ফারাক চোখে পড়েনি। ডি-বক্সের আশেপাশে তিনি বড্ড বেশি ভয়ংকর। সময় অতিবাহিত হচ্ছে আর লেওয়ান্ডস্কি যেন নিজেকে আরেকটু পরিবর্তন করে হয়ে উঠছেন বিধ্বংসী।

  • করিম বেনজেমা (ফ্রান্স/ রিয়াল মাদ্রিদ)

একটা ছায়াতলে করিম বেনজেমা থেকে গিয়েছেন নিজের ক্যারিয়ারের সব স্বর্ণালী সময়ে। তখনও তিনি গোল করতেন, তবে তা ফিকে হয়ে যেত ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর অতিমানবীয় পারফরমেন্সের বিপরীতে। তবে রোনালদোর বিদায়ের পর বেনজেমা হয়ে উঠেছেন রিয়াল মাদ্রিদের মধ্যমণি। গেল মৌসুমের যতসব অর্জন লস ব্ল্যাঙ্কোসদের তাঁর সবকিছুতেই বেনজেমার অবদান রয়েছে। শুধু নিয়ে গোল করেই ক্ষান্ত হননি এই ফ্রেঞ্চ স্ট্রাইকার। তিনি অন্যদের দিয়েও গোল করিয়েছেন। ব্যালন ডি’অর জয়ের সবচেয়ে কাছে রয়েছেন তিনি।

  • আর্লিং হাল্যান্ড (নরওয়ে/ ম্যানচেস্টার সিটি)

‘গোলমেশিন’ এই একটা শব্দ দিয়েই সম্ভবত আর্লিং হাল্যান্ডকে আখ্যায়িত করা যায় সবচেয়ে ভাল ভাবে। জার্মান ক্লাব বুরুশিয়া ডর্টমুন্ডের হয়ে তিনি আলো ছড়িয়েছেন। আর ইংলিশ ক্লাব ম্যানচেস্টার সিটির হয়ে তো তিনি রীতিমত তাণ্ডব চালাচ্ছেন। নিজের পেশি শক্তি, আর দ্রুতগতি সেই সাথে ক্লিনিক্যাল ফিনিশিং এসব কিছু মিলিয়ে হাল্যান্ড যেন এক ‘বিস্ট’! ডি-বক্সের আশেপাশে বল পাওয়া মাত্রই যেন তিনি তা জালে জড়িয়ে দিয়েই তবে শান্ত হন। তবে গোলক্ষুধার নিবারণ যেন হয় না কখনো। প্রায় প্রতিটা ম্যাচেই তিনি গোল করার এক অদম্য তাগিদ নিয়ে মাঠে নামেন। প্রতিপক্ষের রক্ষণের বিন্দুমাত্র তোয়াক্কা না করে গোল করবার বুনো উল্লাসে মাতেন হাল্যান্ড।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...