যে জুটির রেশ সদা বিরাজমান

মিরপুর টেস্টে মুশফিকুর রহিম যখন ব্যাট করতে এসেছিলেন তখন বাংলাদেশের স্কোর ৩ উইকেটে ১৬ রান। অন্যদিকে লিটন দাস যখন উইকেটে এসেছেন তখন পাঁচ উইকেটে মাত্র ২৪ রান তুলতে পেরেছিল বাংলাদেশ। সবমিলিয়ে সাত ওভারের মাঝে দলের অর্ধেক ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে বাংলাদেশ তখন দিকহারা।

ঘরের মাঠে ধুঁকতে থাকা দলটির ত্রাতা হয়ে এমন সময়ে দৃশ্যপটে হাজির হলেন দুই উইকেট কিপার ব্যাটসম্যান মুশফিক-লিটন। দৃঢ় হাতে লঙ্কান বোলারদের শাসন করে দলকে ম্যাচে ফেরালেন। লিটন দাস ১৪১ রান করে আউট হওয়ার আগ পর্যন্ত মুশফিক-লিটন পার্টনারশিপ ছিল ২৭২ রানের। দলকে এমন স্বস্তি এনে দেয়ার পথে দুইজনের জুটিতে ভেঙ্গেছে পুরনো কিছু রেকর্ড ও।

২৫ বা এর চেয়ে কম রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ষষ্ঠ উইকেটে সর্বোচ্চ রানের বিশ্ব রেকর্ড গড়া জুটিটি ৬৩ বছর আগের। ১৯৫৯ সালে ঢাকা স্টেডিয়ামে (বর্তমান বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম) মুখোমুখি হয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও পাকিস্তান। সেই ম্যাচে ২২ রানে ৫ উইকেট হারানোর পর ষষ্ঠ উইকেটে পাকিস্তানের ওয়ালিস ম্যাথিয়াস ও সুজাউদ্দিন গড়েন ৮৬ রানের জুটি। যা এতদিন ধরে সর্বোচ্চ ছিল।

দলকে ধ্বংসস্তূপ থেকে টেনে তোলার লড়াইয়ে বহু পুরনো সেই রেকর্ড ভেঙে টেস্ট ইতিহাসে নতুন কীর্তি যোগ করলেন মুশফিক ও লিটন। এছাড়া ৫০ বা এর চেয়ে কম রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ষষ্ঠ উইকেটে সর্বোচ্চ রানের বিশ্ব রেকর্ড গড়া জুটিও এখন লিটন-মুশফিকের দখলে। এর আগের রেকর্ডটি ছিল শ্রীলঙ্কার দখলে; দিনেশ চান্দিমাল এবং ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা ২১১ রানের জুটি বেঁধেছিলেন।

আরও কিছু রেকর্ডও নিজেদের করে নিয়েছেন মুশফিক ও লিটন। ষষ্ঠ উইকেটে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের জুটি গড়ে ফেলেছেন তারা। আগের সর্বোচ্চ রানের জুটিতেও ছিল মুশফিকের নাম। ২০০৭ সালে কলম্বোতে ষষ্ঠ উইকেটে মোহাম্মদ আশরাফুল ও মুশফিক ১৯১ রান করেন। যা এতদিন সর্বোচ্চ রানের ছিল। তাছাড়া মুশফিক-লিটনের জুটি শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে যেকোনো উইকেটে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ। আগের সর্বোচ্চ জুটি ছিল মুশফিক-আশরাফুলের। ২০১৩ সালে গল টেস্টে ২৬৭ রান করেছিলেন এই দুইজন।

টেস্টে মুশফিক-লিটনের রসায়ণ বরাবরই দারুণ। ১৬ ইনিংসে এ নিয়ে চতুর্থবারের মতো শতরানের জুটি গড়লেন তারা। শতরানের জুটিতে সবার ওপরে হাবিবুল বাশার ও জাভেদ ওমর বেলিম জুটি। জাতীয় দলের সাবেক এই দুই ব্যাটসম্যান ৩২ ইনিংসে পাঁচবার শতরানের জুটি গড়েছেন। এছাড়া মুমিনুল-মুশফিক ২৮ ইনিংসে চারবার শতরানের জুটি গড়েছেন। তামিম – মুমিনুল, তামিম – ইমরুল, সাকিব – মুশফিক এই তিনটি জুটিরও রয়েছে চারবার করে শতরান পূর্ণ করার রেকর্ড।

তবে এদের কেউই পারেনি লিটন-মুশফিকের মত এত দ্রুত এই মাইলফলকে পৌঁছুতে। এই জুটির সর্বশেষ দশ ইনিংসে করেছে ২৭২(মিরপুর টেস্ট), ১৬৫, ২২, ৭৩, ২০৬, ৩৭, ৮৭, ১৩, ১১১, ৬৩। বলাই বাহুল্য, অন্য অনেক জুটির চেয়ে ব্যাটিং গড়ের দিক থেকে অনেক এগিয়ে এই দুইজন।

জুটি ছাড়াও ব্যক্তিগতভাবে বেশকিছু রেকর্ড গড়েছেন মুশফিকুর রহিম। তামিম ইকবাল এবং মুমিনুল হকের পর তৃতীয় বাংলাদেশী হিসেবে পরপর দুই ইনিংসে সেঞ্চুরি করার রেকর্ড করেছেন তিনি। এছাড়া মোহাম্মদ আশরাফুলের পর দ্বিতীয় বাংলাদেশী হিসেবে আন্তজার্তিক ক্রিকেটে লঙ্কানদের বিপক্ষে পঞ্চম সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন এই উইকেট কিপার। মিরপুর টেস্টে শতকের দিক থেকে আবার মুমিনুলের পাশে বসেছেন মুশফিক। দুইজনের সমান তিনটি করে শতক হাঁকিয়েছেন এই মাঠে। অন্যদিকে লিটন দাস আউট হওয়ার আগে খেলেছেন নিজের ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস।

লিটন দাস, বর্তমানে নিজের ক্যারিয়ারের সেরা ফর্মে রয়েছেন। রান আর ব্যাটিংয়ের সৌন্দর্যের মানদন্ডে আন্তজার্তিক পর্যায়ে সেরাদের একজন এখন তিনি। অন্যদিকে মুশফিকুর রহিম তো গত এক দশক ধরে টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন। আর তাই দলের বিপর্যয়ে বারবার আশা রাখা যায় এই দুইজনের উপর। সমর্থকদের ভরসার প্রতিদান দিতেও ভুল হয় না এই দুই জনের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link