অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণতম প্রান্তের দ্বীপরাজ্য তাসমানিয়ার স্কুল ক্রিকেটে বছর নয়ের এক ক্ষুদে ব্যাটসম্যান স্কুল ক্রিকেটে তার প্রথম মৌসুমে পুরোটা অপরাজিত থেকে গেল। ছেলেটাকে কেউই আউট করতে পারছে না দেখে এক প্রকার নিরুপায় হয়ে প্রতিযোগিতাটির নীতি নির্ধারকরা নতুন নিয়ম জারি করলেন – একটা ইনিংসে ৩০ রান সংগ্রহ করলে পরে ব্যাটসম্যানকে অবসৃতের তালিকায় নাম লেখাতে হবে।
সেই ব্যাটারের নামটা আপাতত না বলি!
ব্যাটিং পাগল ছেলেটাও এক নতুন ফন্দি আঁটলো। ছেলেটা তার দলের হয়ে নিয়মিত ওপেন করতে নামা শুরু করলো। রান না করে যত বেশি সম্ভব বলে খেলতে লাগলো এবং প্রতি ওভারের শেষ বলে সিঙ্গল রান নিয়ে পরের ওভারের স্ট্রাইক নেওয়াটা সুনিশ্চিত করতে লাগলো। তখন থেকেই ছেলেটা ক্রিকেট নিয়ে ছিল এতটাই সিরিয়াস।
আর, মাঝে মাঝেই আম্পায়ারকে নিজের স্কোর জিজ্ঞাসা করত। একবার নয়, বারবার। যখন জানতে পারতো যে সে ঊনত্রিশ রানে দাঁড়িয়ে আছে, তখন সে রান করা পুরোপুরি বন্ধ করে দিতে লাগল। ইনিংসের শেষ বলে চার বা ছয় মারার অপেক্ষায় থাকত।
ছেলেটার এই ব্যাটিং পাগলামি সিল মোহর পেল মাত্র বারো বছর বয়সে বিখ্যাত অস্ট্রেলীয় ক্রীড়া সরঞ্জাম প্রস্তুতকারক সংস্থা কোকাবুরা স্পনসর হিসেবে ছেলেটির পাশে দাঁড়ানোর মধ্যে দিয়ে। এখানেই শেষ নয়, বয়স যত বেড়েছে ক্রিকেটও তাঁকে দিয়েছে হাত ভরেই।
ছেলেটা তাকে ঘিরে তৈরি হওয়া পাহাড়সম প্রত্যাশা পূরণ করে মাত্র কুড়ি বছর বয়সে ব্যাগি গ্রিন অর্জন করল। তারপর এক সময় প্রতিভার ভারে ন্যুব্জ হয়ে হারিয়ে যেতে বসা ছেলেটা রূপকথার উত্থান ঘটিয়ে শুধুমাত্র বিশ্ব ক্রিকেটের ইতিহাসে সর্বকালের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যানের শিরোপা অর্জন করেই ক্ষান্ত হল না। এমনকি সর্বকালের অন্যতম সে অধিনায়কদের তালিকাতেও নিজের নাম নথিভুক্ত করল।
ভদ্র্রলোকের নাম রিকি পন্টিং। অধিনায়ক হিসেবে যিনি দু’টো বিশ্বকাপ জিতেছেন। অস্ট্রেলিয়াকে নিয়ে গিয়েছেন ক্রিকেটের সর্বোচ্চ আসনে। ব্যাটার হিসেবে যিনি ইতিহাসেরই অন্যতম সেরা। তবে, এ তো হওয়ারই ছিল।
ছেলেটার মাত্র চার বছর বয়সে ছেলেটির ঠাকুমা ছেলেটিকে একটি টি-শার্ট উপহার দিয়েছিলেন, আর তাতে জ্বলজ্বল করছিল লাইনটি – ‘Inside this shirt is an Australian Test cricketer.’ মানে, এই টি-শার্টের মাঝে একজন অস্ট্রেলিয়ান টেস্ট ক্রিকেটার আছেন। ঠাকুমা অন্ত:প্রাণ ঠাকুমার প্রান প্রিয় ‘পান্টার’-কে তাঁর ঠাকুমার স্বপ্ন পূরণ করতেই হত।